শনিবার, এপ্রিল ০৬, ২০২৪

গায়ে জামা থাকলেও ছিলো না পায়ে জুতো

জেমির মা

মোফাজ্জল হোসেন


জেমির মা, নাম তাঁর আদিবা। জেমি ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী। সে সময় পেলেই পরন্ত বিকালে ঘরের মেঝেতে বসে মায়ের মুখে গল্প শুনতো। আজও জেমি গল্প শোনার জন্য মা আদিবার নিকট বসেছে। 


আজ আদিবা’র তার ছোটবেলার কথা ভীষণ মনে পড়ছে। সে বললো, জানিছ মা আমি ছোটবেলা থেকেই লেখা-পড়ার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলাম। আমার লেখা-পড়ার প্রতি এত আগ্রহ দেখে বাবা আমাকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে। অবস্থা এমন ছিলো যে, গায়ে জামা থাকলেও ছিলো না পায়ে জুতো। তবুও আনন্দ নিয়েই স্কুলে যেতাম। ভালো ফলাফল নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হওয়ায় বাবা আমাকে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করলো।


 নতুন স্কুলটি আমাদের গ্রাম থেকে প্রায়ই দুই কিলোমিটার দূরুত্বে ছিলো। তবে আমি পাঁয়ে হেঁটেই যেতাম। আমার বাবা’রতো আর সামর্থ্য ছিলো না যে আমি গাড়িতে যাবো।

জেমির মা


 জানিস মা, তখন আমার কোনো গাইড বই ছিলো না, অন্যের গাইড বই দেখে পড়াগুলো খাতায় টুকে রাখতাম। সম্ভব ছিলো না প্রাইভেট পড়ার, বাড়িতেই নিজে নিজে পড়েছি তবুও হাল ছাড়িনি। এসএসসি পাশ করলাম। আশেপাশের মানুষ বাবা-মাকে শোনাতে লাগলো, ‘মেয়ে মানুষ, এত পড়াশোনা করিয়ে কি হবে, অনেকতো পড়ালে এখন বিয়ে দিয়ে দিলেইতো পারো’। কিন্তু বাবা কারো কথা কানে না নিয়ে আমাকে কলেজে ভর্তি করলো। আমি সেই আগের মতো পায়ে হেঁটে সকালে কলেজে যেতাম। সারাদিন ক্লাস শেষে খালি পেটে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে বাড়ি ফিরতাম, তবুও কোনো কষ্ট মনে হতো না। আমি এইচএসসি পাশ করলাম। জানিস মা, আমার খুব খুব ইচ্ছে ছিলো নার্সিংয়ে পড়ে নার্স হবো, মানুষের সেবা করবো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বাবা’র আর্থিক অবস্থা ‍দিন দিন খারাপ হতে লাগলো। তাঁর পক্ষে আর আমার লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব ছিলো না। অবশেষে আমার ১৮ বছর বয়সে তোর বাবা’র সাথে বিয়ে হলো। আর আমার নার্সিং পড়ার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেলো। এর ঠিক দেড় বছর পর তোর জন্ম হয়। এখন আমার স্বপ্নে শুধু তুই, এই বলে আদিবা থমকে গেলো।মায়ের মন খারাপ দেখে জেমি বললো, কে বলেছে তুমি নার্স হতে পারোনি মা, আমি অসুস্থ হলেতো তুমিই আমায় সেরা নার্সের সেবা দাও। আদিবা অশ্রু চোখে মেয়ে জেমিকে জড়িয়ে ধরলো। জেমি ভাবলো আমার মায়ের মতো অসংখ্য মা তাঁর এতো অপূর্ণতার মাঝেও সংসার সামলাতে ব্যস্ত।


মোফাজ্জল হোসেন




লেখক: শিক্ষার্থী, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ


 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios:

দৈনিক অনুসন্ধান
সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ দৈনিক অনুসন্ধান, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...