ইসলাম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ইসলাম লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, ফেব্রুয়ারী ১৭, ২০২৫

রমজানের জন্য প্রস্তুতি সুন্নাতি দৃষ্টিভঙ্গি

রমজানের জন্য প্রস্তুতি সুন্নাতি দৃষ্টিভঙ্গি


রজব মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার সুন্নতি শিক্ষা আমাদের জন্য এক বিশেষ নিয়ামত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রজব মাস থেকেই রমজানের জন্য মানসিক, আত্মিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নিতেন। এটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং অন্তরের কলুষতা দূর করে তাকওয়ার পথে অগ্রসর হওয়ার অনন্য সুযোগ।

এই চিত্রটি রমজানের প্রস্তুতির এক সুন্দর মুহূর্তকে তুলে ধরেছে, যেখানে মানুষ নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়ার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করছে।


রমজানের জন্য প্রস্তুতি সুন্নাতি দৃষ্টিভঙ্গি

রাসুল (সা.) দোয়া করতেন:

اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان

"হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।" (মুসনাদ আহমদ: ২৩৪৬)

এই দোয়া থেকেই বোঝা যায়, রমজান শুধু এক মাসের ইবাদত নয়, বরং এর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত।

অন্তরের পরিশুদ্ধি ও দিলের ময়লা দূর করার উপায়

রমজান আত্মশুদ্ধির মাস। এই মাস যেন শুধু পানাহার বর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং আমাদের মন, চরিত্র ও আচরণকেও পবিত্র করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয়।

১. তাওবা ও ইস্তিগফার: প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং পাপমুক্তির জন্য দোয়া করা।
২. নফল রোজা পালন: রজব ও শাবান মাসে নফল রোজা রাখার মাধ্যমে রমজানের রুটিন তৈরি করা।
৩. কুরআনের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা: নিয়মিত তিলাওয়াত, অর্থ ও তাফসির বোঝার চেষ্টা করা।
৪. গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা: দান-সদকা বাড়িয়ে দেওয়া এবং আত্মশুদ্ধির জন্য দান করা।
৫. আখলাক সুন্দর করা: মিথ্যা, গিবত, হিংসা, রাগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।

রমজান কেবল উপবাসের মাস নয়; এটি আত্মশুদ্ধির, তাকওয়া অর্জনের এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাস। তাই রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুসারে রজব ও শাবান মাস থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, যাতে আমরা রমজানে পরিপূর্ণভাবে আত্মশুদ্ধির সুযোগ পাই। আল্লাহ আমাদের রমজানের সঠিক আদব ও গুরুত্ব অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 🤲

শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২৫

কাউকে ভালোবাসলে বিষয়টি তাকে জানানো মহানবী (সা.)-এর সুন্নত।

কাউকে ভালোবাসলে বিষয়টি তাকে জানানো মহানবী (সা.)-এর সুন্নত।

ভালোবাসার প্রকাশ ইসলামিক দৃষ্টিকোণ ও রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা

ভালোবাসা মানুষের সহজাত অনুভূতি, যা সম্পর্ককে দৃঢ় করে এবং সমাজে সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করে। ইসলামে ভালোবাসা একটি পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ বিষয়, যা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, নৈতিকতা এবং সংযমের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত। অনেকেই মনে করেন, ভালোবাসার কথা কাউকে জানানো লজ্জার বিষয়, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন যে ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করা সুন্নত।

বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী পারস্পরিক ভালোবাসা প্রকাশ করছে এবং বন্ধুরা একে অপরের প্রতি সম্মান ও সহমর্মিতা দেখাচ্ছে। এটি পারিবারিক বন্ধন ও বন্ধুত্বের গভীরতা ফুটে উঠছে। 


"আর তাঁর নিদর্শনের মধ্যে একটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মতো সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাঝে শান্তি ও স্নেহ খুঁজে পাও।"


"আমি আল্লাহর জন্য তোমাকে ভালোবাসি"—এই কথাটি আমাদের জীবনে আরও বেশি প্রচলিত হোক।

"যদি একজন পুরুষ আরেকজন নারীকে, কিংবা একজন নারী আরেকজন পুরুষকে পছন্দ করে, তবে সে যেন তাকে বৈধভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।"




ভালোবাসার সুন্নত রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা

রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন যে ভালোবাসা শুধু অন্তরে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয় নয়, বরং তা প্রকাশ করাও গুরুত্বপূর্ণ। একাধিক হাদিসে এ সম্পর্কে নির্দেশনা এসেছে।

১. ভালোবাসা প্রকাশের নির্দেশনা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
"যখন কেউ তার ভাইকে ভালোবাসে, তখন সে যেন তাকে তা জানিয়ে দেয়।"
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১২৪)

এখানে 'ভাই' বলতে শুধু রক্তের সম্পর্কের ভাই বোঝানো হয়নি, বরং বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মী বা যে কাউকে বোঝানো হয়েছে, যাকে আমরা আন্তরিকভাবে ভালোবাসি।

২. আল্লাহর জন্য ভালোবাসা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
"যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসে, সে যেন তাকে বলে: আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।"
(সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৩৯২)

এই হাদিস আমাদের শেখায় যে ভালোবাসার প্রকাশ সম্পর্ককে আরও গভীর করে এবং আন্তরিকতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সুস্থ সামাজিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে।


বৈধ ও সম্মানজনক ভালোবাসার গুরুত্ব

ভালোবাসা শুধু অনুভূতি প্রকাশের বিষয় নয়, বরং এর সঠিক দিকনির্দেশনাও জরুরি। বর্তমান সমাজে প্রেমের নামে অনেকেই অনৈতিক পথে পরিচালিত হয়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন—

“যদি একজন মানুষ আরেকজন নারীকে পছন্দ করে, তবে সে যেন তাকে বৈধভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৬৬)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, ভালোবাসার প্রকৃত রূপ হলো পবিত্রতা ও সম্মানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা। যদি কেউ কাউকে ভালোবাসে, তবে তা বিয়ের মাধ্যমে হালাল করা উচিত, যেন সম্পর্ক সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে বৈধ হয়।


ভালোবাসা প্রকাশের ইতিবাচক দিক

ভালোবাসার প্রকাশ পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সুসম্পর্ক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর কিছু উপকারী দিক হলো—

১. সম্পর্ক দৃঢ় হয় – যখন আমরা আমাদের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করি, তখন পারস্পরিক বোঝাপড়া ও ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়।
২. ভুল বোঝাবুঝি দূর হয় – অনেক সময় মানুষ মনে করে যে কেউ তাকে পছন্দ করে না, কিন্তু ভালোবাসার প্রকাশ ভুল ধারণা দূর করে।
3. আত্মবিশ্বাস বাড়ে – ভালোবাসা প্রকাশ করা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়।
4. সমাজে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায় – যেখানে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ বেশি, সেখানে বিরোধ ও শত্রুতা কম হয়।


ভালোবাসা প্রকাশের ইসলামিক পদ্ধতি

ভালোবাসা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কিছু সুন্নত পদ্ধতি রয়েছে, যা ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে—

  1. সরাসরি বলা – কাউকে ভালোবাসলে সরাসরি বলা যায়, "আমি আল্লাহর জন্য তোমাকে ভালোবাসি।"
  2. দোয়া করা – প্রিয়জনদের জন্য দোয়া করা ভালোবাসার সর্বোত্তম প্রকাশ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
    "যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য গোপনে দোয়া করে, ফেরেশতারা তার জন্য একই দোয়া করেন।"
    (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩৩)
  3. উপহার দেওয়া – রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
    "তোমরা একে অপরকে উপহার দাও, তাহলে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।"
    (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৬৪)
  4. সাহায্য করা – কারও প্রয়োজনে পাশে থাকা ও সহযোগিতা করা ভালোবাসার অন্যতম প্রকাশ।
  5. ভালো কথা বলা – প্রশংসা ও উৎসাহমূলক কথা বলা সম্পর্ককে মজবুত করে।

ভালোবাসার সুন্নত মানলে সমাজের পরিবর্তন

যদি আমরা মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী ভালোবাসার সুন্নত পালন করি, তবে সমাজে সুন্দর পরিবর্তন আসতে পারে—

  1. পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে – বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী যদি ভালোবাসা প্রকাশ করে, তবে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হবে।
  2. বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতা বাড়বে – বন্ধুরা একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলে সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
  3. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে – শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করলে শিক্ষার পরিবেশ উন্নত হবে।
  4. সমাজে ঈর্ষা ও বিদ্বেষ কমবে – ভালোবাসা প্রকাশ হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতা দূর করতে সাহায্য করে।

ভালোবাসা মহান আল্লাহর এক অপূর্ব সৃষ্টি, যা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি প্রকাশ করা সুন্নত এবং সম্পর্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তবে ভালোবাসার পথ হতে হবে বৈধ ও সম্মানজনক, যেন তা ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তাই, আমরা যেন সর্বদা শুদ্ধ ও নৈতিকভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা পরিচালিত করি।

"আমি আল্লাহর জন্য তোমাকে ভালোবাসি"—এই কথাটি আমাদের জীবনে আরও বেশি প্রচলিত হোক।


আমরা যদি কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসি, তবে সেই ভালোবাসার পথও হতে হবে বৈধ ও সম্মানজনক। মহানবী (সা.) বলেছেন—

"যদি একজন মানুষ আরেকজন নারীকে পছন্দ করে, তবে সে যেন তাকে বৈধভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।"



ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি ও বিবর্তন একটি - 
তৌফিক সুলতান  


ভালোবাসা দিবস, যা প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারিকে পালিত হয়, তা কেবলমাত্র আধুনিক রোমান্টিক প্রেমের উদযাপন নয়, বরং এর গভীরে এক বিস্তৃত ইতিহাস, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ও ধর্মীয়-ঐতিহ্যর বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি এ নিবন্ধে চেষ্টা করছি—কীভাবে ভালোবাসা দিবস এলো, এর উৎপত্তি, বিবর্তন ও বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে বিশদ আলোচনা করতে।


১. প্রাচীন উৎসব ও রোমান ঐতিহ্য

প্রাচীন রোমে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে লুপারকেলিয়া (Lupercalia) নামক এক উৎসব পালিত হত।

লুপারকেলিয়া উৎসব:

 এই উৎসবটি ছিল বন্যপ্রাণী ও উর্বরতার উদযাপন। রোমানরা বিশ্বাস করতেন যে, এই উৎসবের মাধ্যমে ঈশ্বরপূজার মাধ্যমে জীবনের পুনর্জাগরণ ও উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।

ঐতিহ্যের প্রভাব:

 যদিও লুপারকেলিয়া সরাসরি রোমান্টিক ভালোবাসার সাথে সম্পর্কিত ছিল না, তবুও এর মধ্য দিয়ে প্রেম ও মিলনের একটা ধারণা প্রতিফলিত হতে শুরু করে।


২. সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাহিনী

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, "ভ্যালেন্টাইন" নামে এক বা একাধিক খ্রিস্টান সাধুর কাহিনী।

মৃত্যু ও ত্যাগের কাহিনী:

 একাধিক উৎস অনুযায়ী, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন একজন খ্রিস্টান সাধু, যিনি রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস II এর সময়ে খ্রিস্টধর্মের প্রচার ও প্রেমের আদর্শ রক্ষা করার জন্য ত্যাগী হয়ে উঠেন।

রোমান শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ:

 তিনি বিশ্বাস করতেন—প্রেম ও ভালবাসা মানবিক ও নৈতিকতার অন্যতম পরিচায়ক। সেই বিশ্বাসে, রোমান শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেন।

লেজেন্ড ও বিশ্বাস:

 বহু কাহিনীতে বলা হয়েছে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতেন। তাঁর এই কর্মের কারণে তাঁকে শহীদ করা হয়েছিল, তবে তাঁর নাম ও আদর্শ কালক্রমে রোমান্টিক প্রেমের প্রতীক হয়ে ওঠে।


৩. মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের বিবর্তন

মধ্যযুগে ইউরোপে প্রেম ও রোমান্টিক সম্পর্কের মূল্যায়ন নতুন করে সংজ্ঞায়িত হতে শুরু করে।

চার্চারের প্রভাব:

 ইংরেজ কবি জেফ্রি চসারের (Geoffrey Chaucer) কবিতাগুলোতে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে প্রেমিক-প্রেমিকার মিলনের দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ থেকেই ভালোবাসা দিবস রোমান্টিক আদর্শের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে থাকে।

ঐতিহ্য থেকে আধুনিকতা:

 প্রিন্টিং প্রেস এবং বাণিজ্যিক প্রচারের আগমন সহ, ১৯শ শতকের পর থেকে ভালোবাসা দিবস ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বাণিজ্যিকীকরণ ও সংস্কারের প্রক্রিয়া:

 আধুনিক যুগে ভালোবাসা দিবস কেবলমাত্র প্রেমের উদযাপন নয়, বরং উপহার বিনিময়, কার্ড, ফুল ও চকলেটের মাধ্যমে বাণিজ্যিকিকরণও হয়েছে। তথাপি, এর মূল উদ্দেশ্য—প্রেম ও আন্তরিকতার বার্তা—আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।


৪. বর্তমান প্রেক্ষাপট ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

আজকের বিশ্বে ভালোবাসা দিবসকে নানা দৃষ্টিকোণে দেখা হয়:

রোমান্টিক প্রেমের উদযাপন:

 যুব সমাজ ও বিভিন্ন দম্পতি নিজেদের প্রেমের বন্ধনকে উদযাপন করে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়:

 বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতিতে ভালোবাসা দিবসকে আলাদা করে উদযাপন করা হয়—কিছু দেশে এটি শুধু রোমান্টিক সম্পর্কের নয়, বরং পারিবারিক ও বন্ধুদের মধ্যে আন্তরিকতার বন্ধনকে জোর দেয়।

সমালোচনার দৃষ্টিকোণ:

 কিছু সমালোচক বলেন, বাণিজ্যিকিকরণের ফলে ভালোবাসা দিবসের আসল তাৎপর্য হারিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক ও নৈতিকতার প্রতিপালকদের মতে, প্রেম ও ভালোবাসা প্রতিদিনের জীবনের অংশ হওয়া উচিত—নির্দিষ্ট এক দিনে সীমাবদ্ধ নয়।


৫. একজন শিক্ষকের দৃষ্টিকোণ

একজন শিক্ষক হিসেবে, আমি বিশ্বাস করি:

প্রতিদিনের শিক্ষা:

 ভালোবাসা দিবস কেবল একদিন উদযাপনের বিষয় নয়, বরং প্রতিদিনের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই প্রেম, সহানুভূতি, সহিষ্ণুতা ও নৈতিকতা রোপণ করা উচিত।

মানবিক মূল্যবোধের প্রেরণা:

শিক্ষা গ্রহণ করছে। এটি একটি শান্তিপূর্ণ এবং জ্ঞানভিত্তিক ইসলামিক শিক্ষার দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছে।


 শিক্ষার্থীদের শেখানো উচিত—ভালোবাসা শুধুমাত্র রোমান্টিক সম্পর্ক নয়, বরং পারিবারিক, সামাজিক ও মানবিক বন্ধনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি:

 আগামী প্রজন্মকে যদি আমরা প্রেমের সঠিক, শুদ্ধ ও নৈতিক দিক শেখাতে পারি, তবে ভালোবাসা দিবস আমাদের সমাজে শুধুমাত্র এক উৎসবের নাম নয়, বরং জীবনের একটি অঙ্গীকারে পরিণত হবে।


ভালোবাসা দিবসের যাত্রা প্রাচীন রোমান উৎসব থেকে শুরু করে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের ত্যাগ, মধ্যযুগের রোমান্টিক আদর্শ ও আধুনিক বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে আজকের রূপ ধারণ করেছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বলি—ভালোবাসা দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, যে প্রেম ও মানবিক বন্ধন প্রতিদিনের জীবনের অন্তর্নিহিত অংশ। আমাদের উচিত এই মূল বার্তা, আন্তরিকতা ও নৈতিকতার আদর্শকে প্রতিদিনের শিক্ষায় ও জীবনে প্রয়োগ করা।




ভালোবাসা দিবস ইসলামের দৃষ্টিকোণ ও ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ

ভালোবাসা—একটি মানবিক অনুভূতি, যা ধর্ম, সংস্কৃতি ও সমাজে বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়। তবে, যখন আমরা ভালোবাসা দিবসের কথা শোনি, তখন আমাদের সামনে যে ছবি উঠে আসে তা প্রায়ই আধুনিক, বাণিজ্যিক এবং রোমান্টিক প্রেমের উদযাপনের প্রতিচ্ছবি। ইসলামে ভালোবাসার ধারণা অনেক বিস্তৃত এবং তা কেবলমাত্র এক দিনের উদযাপনের বিষয় নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি নৈতিকতা, আন্তরিকতা ও পরস্পরের প্রতি সম্মানের প্রকাশ।


১. ভালোবাসার মৌলিক ধারণা ইসলামে

ইসলামে ভালোবাসা শুধু রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা:

 কোরআনের অন্যতম সূরা রুম (৩০:২১) এ বলা হয়েছে,



 "আর তাঁর নিদর্শনের মধ্যে একটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মতো সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাঝে শান্তি ও স্নেহ খুঁজে পাও।"

 এই আয়াতে স্পষ্ট হয়েছে যে, বৈধ দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা হলো শান্তি, করুণা ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক।


একজন ব্যক্তি ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী সম্মানজনকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে। এটি একটি উষ্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ মুহূর্তকে চিত্রিত করে, যেখানে আন্তরিকতা ও সম্মান ফুটে উঠেছে।



পারিবারিক ও সামাজিক ভালোবাসা:

 ইসলামী নীতিতে পিতা-মাতার প্রতি সেবা, ভাইবোনের প্রতি সদয়তা ও প্রতিবেশীদের সহানুভূতি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন,



 "তোমরা একে অপরকে ভালোবাসা ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।"

 এ থেকে বোঝা যায়, আন্তরিক ভালোবাসা এবং সহমর্মিতা জীবনের অপরিহার্য উপাদান।





২. ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি ও আধুনিক রূপ

ঐতিহ্য ও ইতিহাস:

 ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি মূলত প্রাচীন রোমান উৎসব লুপারকেলিয়া থেকে শুরু হলেও, পরবর্তীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাহিনী ও মধ্যযুগীয় রোমান্টিক আদর্শ দ্বারা এ রূপান্তরিত হয়।

আধুনিক বাণিজ্যিকীকরণ:

 ২০শ ও ২১শ শতাব্দীতে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে এই দিনটি একটি বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যেখানে ফুল, চকলেট, কার্ড ইত্যাদির মাধ্যমে প্রেমের প্রকাশ ঘটানো হয়।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব:

 আজকের বিশ্বে ভালোবাসা দিবসকে শুধুমাত্র রোমান্টিক প্রেমের উদযাপন হিসেবে দেখলেও, অনেক ক্ষেত্রে এটি পারিবারিক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও মানবিক ভালোবাসারও প্রতিফলন ঘটায়।


৩. ইসলামের দৃষ্টিকোণ ভালোবাসা দিবসের প্রাসঙ্গিকতা

ইসলামী দৃষ্টিতে ভালোবাসা দিবস নিয়ে বিভিন্ন মতামত বিদ্যমান:

ঐতিহ্যগত বিরোধিতা:

 অনেক ইসলামি স্কলার মনে করেন, ভালোবাসা দিবসের বাণিজ্যিকীকরণ ও পশ্চিমা সাংস্কৃতিক প্রভাব ইসলামের মূল শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাদের মতে,



 "ভালোবাসা প্রতিদিন উদযাপনের বিষয়, কোনো নির্দিষ্ট দিন নয়।"

 ইসলামে প্রেম, করুণা ও সহমর্মিতা জীবনের প্রতিটি ক্ষণে থাকা উচিত—এই মূল্যবোধগুলো শিক্ষা, পরিবার ও সামাজিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়।




আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও বিচিত্রতা:

 কিছু মুসলিম সমাজে, বিশেষ করে যেখানে পশ্চিমা সাংস্কৃতিক প্রভাব প্রবেশ করেছে, সেখানে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হলেও, সেক্ষেত্রে তা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত রোমান্টিক প্রেমের উদযাপন হিসেবে নয়, বরং পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক সহমর্মিতার একটি সংস্কার হিসেবে পালিত হয়।

 তবে, এ ক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হলো—ভালোবাসার প্রকাশ হোক নৈতিক ও ইসলামী বিধানের সীমানার মধ্যে।



নির্দেশনা ও শিক্ষা:

 একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের উচিত শিক্ষার্থীদের শেখানো যে,



ভালোবাসা হলো আল্লাহর উপহার, যা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্য ও শান্তি নিয়ে আসে।

বৈধ ও সম্মানজনক সম্পর্ক গড়ে তোলা, যেমন বৈধ দাম্পত্য ও পারিবারিক বন্ধন, ইসলামী আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ক্ষেত্রে, প্রাথমিকভাবে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সত্যিকারের ভালোবাসা ও আন্তরিকতার বার্তা বহন করা, যা প্রতিদিনের জীবনে অনুশীলন করা যায়।


৪. ভালোবাসার সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি

ভালোবাসা দিবস—এটি একদিকে যেমন আধুনিক বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানের ছদ্মবেশ ধারণ করে, অন্যদিকে এর মূলে রয়েছে মানবিক ও আন্তরিক ভালোবাসার বার্তা। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, ভালোবাসা শুধু রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি প্রতিদিনের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে, শিক্ষা, পরিবার, সমাজ ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত।

একজন শিক্ষক হিসেবে আমার আশা,

আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালোবাসার সঠিক অর্থ—আধ্যাত্মিকতা, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়িত্ব—শুধু একটি দিন নয়, প্রতিদিনের জীবনে অনুশীলন করবে।

ভালোবাসা দিবসের বাণিজ্যিকীকরণে নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধের পুনরুদ্ধারে তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হবে।

এই ভাবনাই আমাদের শেখায়, যে প্রকৃত ভালোবাসা হলো সারাজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য শিক্ষা—যা প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশ এবং ইসলামী আদর্শের আলোকে জীবনে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।


 ভালোবাসা দিবসকে ইসলামী দৃষ্টিতে যদি আমরা মূল্যায়ন করি, তবে দেখতে পাবো—ভালোবাসা একটি সার্বিক জীবনমূল্য, যা প্রতিদিনের আচরণ, শিক্ষা ও সামাজিক বন্ধনে রূপান্তরিত হওয়া উচিত। ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী, ভালোবাসা হোক সঠিক পথে, শুদ্ধ ও আন্তরিক; কারণ, সত্যিকারের ভালোবাসা প্রতিটি দিনের উদযাপন, প্রতিটি ক্ষণের প্রেরণা।



ভালোবাসার প্রকৃত রূপ অপব্যবহার ও সুন্নতের আলোকে বিশ্লেষণ

 - তৌফিক সুলতান 

ভালোবাসা শব্দটি শুনলেই মনের মধ্যে এক ধরনের কোমল অনুভূতি জাগে। এটি মানব জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং শাশ্বত অনুভূতি। প্রকৃতপক্ষে, ভালোবাসা হলো আল্লাহর দান, যা সৃষ্টিজগতের সর্বত্র বিরাজমান। কিন্তু আজকের সমাজে এই মহান অনুভূতিটিকে বিকৃত করে অনেকেই অশ্লীলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি—ভালোবাসা কিংবা প্রেম হলো পবিত্র বিষয়। কিন্তু যারা এর অপব্যবহার করে এবং অশ্লীলতার দিকে ধাবিত হয়, তারা সমাজ ও সভ্যতার শত্রু। তাই আমি তাদের ঘৃণা করি। ভালোবাসা কখনোই বিকৃত রূপে প্রকাশিত হওয়া উচিত নয়, বরং এটি হতে হবে পবিত্র ও স্বচ্ছতার প্রতীক।

ভালোবাসা ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি




ইসলামে ভালোবাসার ধারণা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এটি শুধু নারী-পুরুষের মধ্যকার সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং মানবজাতির প্রতিও ভালোবাসার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

"তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে অপরকে ভালোবাসবে।" (সহিহ মুসলিম)

তবে ভালোবাসার নামে যারা অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতির প্রসার ঘটায়, তারা প্রকৃত ভালোবাসার শত্রু। আজকের যুগে প্রেমের নামে বিবাহ-পূর্ব সম্পর্ক, অবৈধ মেলামেশা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। অথচ প্রকৃত ভালোবাসা হলো সেই ভালোবাসা, যা মানুষকে সৎপথে পরিচালিত করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপায় হয়।

ভালোবাসা প্রকাশ করা সুন্নত

অনেকেই মনে করেন, কাউকে ভালোবাসার কথা জানানো হয়তো দোষের কিছু। অথচ এটি একটি সুন্দর ও মহৎ কাজ, যদি তা যথাযথভাবে করা হয়। মহানবী (সা.) বলেন:

"যদি তুমি তোমার ভাইকে ভালোবাসো, তবে তাকে তা জানিয়ে দাও।" (আবু দাউদ)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ভালোবাসা প্রকাশ করা ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে এটি হতে হবে সম্মানজনক ও নৈতিকতার সীমার মধ্যে।

অন্যদিকে, প্রেমের নামে যদি কেউ হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হয় বা ইসলামবিরোধী কোনো কাজে জড়িয়ে পড়ে, তবে সেটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) বলেছেন:

"কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে না থাকে, কারণ তখন তাদের মধ্যে শয়তান প্রবেশ করে।" (তিরমিজি)

সত্যিকারের ভালোবাসার রূপ

১. আল্লাহর জন্য ভালোবাসা: প্রকৃত ভালোবাসা হলো সেই ভালোবাসা, যা আল্লাহর জন্য হয়। যদি আমরা কাউকে ভালোবাসি, তবে তার কল্যাণ কামনা করব এবং তাকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইব।

২. পরিবারিক ভালোবাসা: বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনের প্রতি ভালোবাসা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) পরিবার ও স্ত্রীদের প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তা আমাদের জন্য আদর্শ।

৩. পবিত্র ও বৈধ প্রেম: যদি কেউ কাউকে ভালোবাসে, তবে সে যেন বৈধভাবে তাকে প্রস্তাব দেয় এবং সম্মানজনকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। হারাম সম্পর্ক পরিহার করাই প্রকৃত ভালোবাসার প্রতীক।

সমাজে ভালোবাসার অপব্যবহার ও তার পরিণতি

আজকের যুগে প্রেমের নামে তরুণ-তরুণীদের যে অবৈধ সম্পর্ক ও নৈতিক অধঃপতন ঘটছে, তা সমাজের জন্য একটি বড় সমস্যা। সামাজিক মাধ্যমে প্রেমের নামে প্রতারণা, শারীরিক সম্পর্ক, দাম্পত্য জীবনে অশান্তি, অনৈতিক কার্যকলাপের বিস্তার সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রকৃত ভালোবাসা কখনো ধ্বংসাত্মক হতে পারে না, বরং তা মানুষের চরিত্র গঠনে সহায়তা করে।

সঠিক ভালোবাসার প্রচলন ও বিকৃত প্রেমের প্রতিরোধ

১. নৈতিক শিক্ষা দেওয়া: তরুণদের নৈতিকতা শেখানোর মাধ্যমে ভালোবাসার সঠিক ধারণা দেওয়া প্রয়োজন।

 ২. বৈধ উপায়ে ভালোবাসা প্রকাশ করা: কাউকে ভালোবাসলে সম্মানের সঙ্গে তাকে জানানো এবং ইসলামি বিধান মেনে সম্পর্ক গড়া উচিত।

 3. পরিবার ও সমাজের ভূমিকা: অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া, যাতে তারা হারাম সম্পর্ক থেকে বিরত থাকে।

 4. ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ: ইসলামি শিক্ষার মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ বুঝতে হবে এবং তা অনুসরণ করতে হবে।

ভালোবাসা মহান অনুভূতি, যা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে মানুষকে সুন্দর ও সফল জীবনের দিকে ধাবিত করে। কিন্তু যারা ভালোবাসাকে অপব্যবহার করে, তারা শুধু নিজেদের নয়, সমাজকেও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। ইসলামের আলোকে ভালোবাসাকে পবিত্র রাখা এবং সুন্নত অনুযায়ী তা প্রকাশ করাই আমাদের জন্য উত্তম পথ।

আমি আবারও বলি—ভালোবাসা কিংবা প্রেম হলো পবিত্র বিষয়। যে বা যারা এর অপব্যবহার করে অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে, আমি তাদের ঘৃণা করি। প্রকৃত ভালোবাসা আল্লাহর জন্য হয়, যা মানুষকে সম্মানজনক ও কল্যাণকর সম্পর্কে যুক্ত করে। আসুন, আমরা ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ বুঝে জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করি।



কাউকে ভালোবাসলে বিষয়টি তাকে জানানো মহানবী (সা.)-এর সুন্নত।

ভালোবাসার প্রকাশ ইসলামের আলোকে এক সুন্দর সুন্নত 

— তৌফিক সুলতান 

ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি, যা মানুষকে উষ্ণতা দেয়, সম্পর্ককে গভীর করে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। এটি একান্তই স্বাভাবিক ও মানবিক ব্যাপার, যা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এক মহৎ উপহার। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, ভালোবাসার কথা কাউকে জানানো অনুচিত বা লজ্জার বিষয়। অথচ ইসলামে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—যদি তুমি কাউকে ভালোবাসো, তবে তাকে তা জানিয়ে দাও। এটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত, যা সম্পর্কের সৌন্দর্য ও বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তোলে।


ভালোবাসার সুন্নত: রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা

রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, ভালোবাসা শুধু অন্তরে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয় নয়, বরং একে প্রকাশ করাও গুরুত্বপূর্ণ। এক হাদিসে এসেছে—

"যখন কেউ তার ভাইকে ভালোবাসে, তখন সে যেন তাকে তা জানিয়ে দেয়।"

 (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১২৪)

এই হাদিসে 'ভাই' বলতে শুধু রক্তের সম্পর্ক বোঝানো হয়নি; বরং বন্ধুত্ব, সহকর্মী, আত্মীয় বা যে কাউকে বোঝানো হয়েছে, যাকে আমরা আন্তরিকভাবে ভালোবাসি।

আরেকটি হাদিসে এসেছে—

"যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসে, সে যেন তাকে বলে: আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।"

 (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৩৯২)

এটি আমাদের শেখায় যে ভালোবাসার প্রকাশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর ও সুন্দর করে তোলে।


ভালোবাসা প্রকাশের ইতিবাচক প্রভাব

ভালোবাসার কথা কাউকে জানালে সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বন্ধন এবং ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর কিছু উপকারী দিক হলো—

১. সম্পর্ক দৃঢ় হয়: আমরা যাদের ভালোবাসি, তারা যদি জানেন যে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ ও স্নেহশীল, তাহলে সম্পর্ক আরও গভীর হয়।

 2. নেতিবাচকতা দূর হয়: অনেক সময় আমরা মনে করি, কেউ আমাদের পছন্দ করে না বা মূল্য দেয় না। কিন্তু ভালোবাসা প্রকাশ করলে ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়।

 3. আত্মবিশ্বাস বাড়ে: ভালোবাসার প্রকাশ একজন ব্যক্তিকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।

 4. সুখকর সমাজ গড়ে ওঠে: যেখানে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ আছে, সেখানে মনোমালিন্য ও বিদ্বেষ কমে যায়।


ভালোবাসার অপব্যবহার নয়, বরং পবিত্রতা বজায় রাখা জরুরি

আজকের সমাজে ভালোবাসার নামে অনেকেই ভুল পথে চলে যাচ্ছে। প্রেমের নামে অনৈতিক সম্পর্ক, প্রতারণা ও অশ্লীলতার বিস্তার সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ। অথচ ইসলামে ভালোবাসাকে অত্যন্ত সুন্দর ও পবিত্রভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আমরা যদি কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসি, তবে সেই ভালোবাসার পথও হতে হবে বৈধ ও সম্মানজনক। মহানবী (সা.) বলেছেন—

"যদি একজন মানুষ আরেকজন নারীকে পছন্দ করে, তবে সে যেন তাকে বৈধভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।"

 (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৬৬)

এটি বোঝায় যে প্রেম-ভালোবাসাকে কখনোই অবৈধ বা হারামের দিকে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়, বরং নৈতিকতার সঙ্গে পরিচালিত করাই সঠিক পথ।


কীভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়?

ভালোবাসা প্রকাশ করার সুন্নত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

সরাসরি বলা: কাউকে ভালোবাসলে সরাসরি তাকে বলা— "আমি তোমাকে ভালোবাসি" বা "আমি আল্লাহর জন্য তোমাকে ভালোবাসি।"

দোয়া করা: কাউকে ভালোবাসার সবচেয়ে সুন্দর প্রকাশ হলো তার জন্য দোয়া করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

 "যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য গোপনে দোয়া করে, ফেরেশতারা তার জন্য একই দোয়া করেন।" (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩৩)

উপহার দেওয়া: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

 "তোমরা একে অপরকে উপহার দাও, তাহলে পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।" (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৬৪)

সাহায্য করা: বাস্তব জীবনে কাউকে ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম সুন্দর উপায় হলো তার প্রয়োজনে পাশে থাকা ও সহযোগিতা করা।

ভালো কথা বলা: কাউকে ভালোবাসার অন্যতম প্রকাশ হলো তার প্রশংসা করা এবং উৎসাহ দেওয়া।


ভালোবাসার সুন্নত মানলে সমাজের কী পরিবর্তন আসতে পারে?

যদি আমরা মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী ভালোবাসার সুন্নত পালন করি, তবে সমাজে একটি সুন্দর পরিবর্তন আসতে পারে—

পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে: বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ভালোবাসা জানালে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হবে।

বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতা বাড়বে: বন্ধুরা যদি একে অপরকে ভালোবাসার কথা জানায়, তাহলে বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে: শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যদি পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করে, তাহলে শিক্ষার পরিবেশ আরও উন্নত হবে।

সমাজে ঈর্ষা ও বিদ্বেষ কমবে: ভালোবাসার প্রকাশ সমাজ থেকে হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতা দূর করতে সাহায্য করে।


ভালোবাসা মহান আল্লাহর এক অপূর্ব সৃষ্টি। এটি যত্ন সহকারে প্রকাশ করা উচিত এবং রাসূল (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী পরিচালিত করা উচিত। ভালোবাসা কখনোই গোপন রাখার বিষয় নয়, বরং এটি প্রকাশ করলে সম্পর্ক মজবুত হয় এবং সমাজে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায়।

তাই, আসুন আমরা ভালোবাসার এই সুন্নতকে জীবনে বাস্তবায়ন করি—পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী এবং প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করি। তবে অবশ্যই তা হতে হবে শালীন, সম্মানজনক ও নৈতিকতার মধ্যে।

"আমি আল্লাহর জন্য তোমাকে ভালোবাসি"—এই কথাটি আমাদের জীবনে আরও বেশি প্রচলিত হোক।



ভালোবাসার কথা জানানো এক সুন্দর সুন্নত

 - তৌফিক সুলতান 


ভালোবাসা মানব জীবনের এক স্বাভাবিক ও মূল্যবান অনুভূতি। এটি সম্পর্কের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে, মানুষের মাঝে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি গড়ে তোলে। অনেকেই মনে করেন, ভালোবাসা শুধু অন্তরে রাখা উচিত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইসলামে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

 "যখন কেউ তার ভাইকে ভালোবাসে, তখন সে যেন তাকে তা জানিয়ে দেয়।" (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১২৪)

অন্য হাদিসে এসেছে—

 "যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসে, সে যেন তাকে বলে: আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।" (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৩৯২)

এই সুন্নত আমাদের শেখায় যে ভালোবাসা শুধু মনে লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়; বরং একে প্রকাশ করলে সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও আন্তরিক হয়।


ভালোবাসা প্রকাশের ইতিবাচক দিকসমূহ

✅ সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়: ভালোবাসার কথা জানালে পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়।

 ✅ মানসিক প্রশান্তি আসে: প্রশংসা ও ভালোবাসার প্রকাশ মানুষকে আনন্দিত করে, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

 ✅ সমাজে সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়: একে অপরকে ভালোবাসার কথা জানালে ঈর্ষা, হিংসা ও বিদ্বেষ দূর হয়।

 ✅ পারিবারিক শান্তি বজায় থাকে: স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই-বোন পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলে পারিবারিক বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়।

 ✅ বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতা বাড়ে: বন্ধুরা যদি ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে, তবে বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়।


ভালোবাসার সুন্নত কীভাবে পালন করবেন?

1️⃣ সরাসরি বলা: "আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।"

 2️⃣ দোয়া করা: প্রিয়জনের জন্য গোপনে কল্যাণের দোয়া করা।

 3️⃣ উপহার দেওয়া: রাসূল (সা.) বলেছেন— "উপহার দেওয়া ভালোবাসা বৃদ্ধি করে।" (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৬৪)

 4️⃣ সহযোগিতা করা: প্রয়োজনে পাশে থাকা ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন।

 5️⃣ ভালো কথা বলা: প্রশংসা ও উৎসাহ প্রদান ভালোবাসার অন্যতম বহিঃপ্রকাশ।


ভালোবাসার অপব্যবহার নয়, বরং পবিত্রতা বজায় রাখুন

ভালোবাসা কখনোই অশ্লীলতা বা অনৈতিকতার দিকে ধাবিত হওয়া উচিত নয়। ইসলামে ভালোবাসার সুন্দর রীতি হলো নৈতিকতা বজায় রেখে প্রকাশ করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

"যদি কেউ কাউকে পছন্দ করে, তবে সে যেন বৈধভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৬৬)

সুতরাং, ভালোবাসা প্রকাশ করুন সুন্নতের আলোকে, তবে অবশ্যই তা হতে হবে শালীন, বৈধ ও নৈতিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ।


ভালোবাসার কথা জানানো শুধু একটি আবেগীয় বিষয় নয়, এটি সুন্নত এবং সম্পর্কের উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আসুন, আমরা পারস্পরিক ভালোবাসা সুন্নত অনুযায়ী প্রকাশ করি, সম্পর্ককে আরও মজবুত করি এবং সমাজে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করি।

"আমি আল্লাহর জন্য তোমাকে ভালোবাসি"—এই কথাটি আমাদের জীবনে আরও বেশি প্রচলিত হোক।



ভালোবাসার কথা জানানো শিক্ষার্থীদের জন্য এক সুন্দর সুন্নত


জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই একটি নতুন শিক্ষা। আমাদের আচরণ, কথা ও অনুভূতিগুলো কেবল আমাদের ব্যক্তিত্বই গড়ে তোলে না, বরং সমাজেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। আজ আমরা একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে কথা বলব— ভালোবাসার কথা জানানো, যা আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর সুন্নত।

অনেকেই মনে করেন, ভালোবাসা শুধু অন্তরে লুকিয়ে রাখার বিষয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, কাউকে ভালোবাসলে তাকে তা জানানো ইসলামের শিক্ষা। এটি সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি করে, মানুষকে একে অপরের প্রতি আরও কৃতজ্ঞ করে তোলে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আবহ তৈরি করে।


ভালোবাসা প্রকাশের গুরুত্ব ইসলামের আলোকে

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

"যখন কেউ তার ভাইকে ভালোবাসে, তখন সে যেন তাকে তা জানিয়ে দেয়।"

 (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১২৪)

এখানে 'ভাই' বলতে শুধু রক্তের সম্পর্ক বোঝানো হয়নি; বরং বন্ধু, সহপাঠী, শিক্ষক, সহকর্মী—সবাইকে বোঝানো হয়েছে। ভালোবাসা প্রকাশ করলে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয় এবং মানুষের মাঝে আস্থা ও সৌহার্দ্য সৃষ্টি হয়।

আরেকটি হাদিসে এসেছে—

"যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসে, সে যেন তাকে বলে: আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।"

 (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৩৯২)

এটি বোঝায় যে ভালোবাসা শুধু একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়, বরং এটি পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও সুন্দর ও মজবুত করার একটি পদ্ধতি।


ভালোবাসার কথা জানালে কী উপকার হয়?

✅ সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়: বন্ধুদের মধ্যে বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধা বাড়ে।

 ✅ নেতিবাচকতা দূর হয়: বিদ্বেষ, ঈর্ষা ও ভুল বোঝাবুঝি কমে যায়।

 ✅ আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়: প্রশংসা ও ভালোবাসার প্রকাশ মানসিক শক্তি বাড়ায়।

 ✅ সমাজে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি তৈরি হয়: একে অপরকে ভালোবাসার কথা জানালে শান্তি ও ভালোবাসার আবহ তৈরি হয়।

 ✅ শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক মজবুত হয়: শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করলে শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ বাড়ে।


কীভাবে ভালোবাসার সুন্নত পালন করবেন?

আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করার বিভিন্ন উপায় আছে, যা সুন্নত অনুযায়ী পালন করা যায়—

1️⃣ সরাসরি বলা: "আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।"

 2️⃣ ভালো কথা বলা: আপনার বন্ধুকে উৎসাহিত করুন, তার প্রশংসা করুন।

 3️⃣ উপহার দেওয়া: রাসূল (সা.) বলেছেন— "উপহার দেওয়া ভালোবাসা বৃদ্ধি করে।" (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৬৪)

 4️⃣ সাহায্য করা: বন্ধুর প্রয়োজনে তার পাশে থাকা ভালোবাসার অন্যতম চিহ্ন।

 5️⃣ দোয়া করা: কারও জন্য গোপনে কল্যাণের দোয়া করা ভালোবাসার সুন্দর প্রকাশ।


ভালোবাসার অপব্যবহার নয়, বরং পবিত্রতা বজায় রাখুন


 ভালোবাসা মহান আল্লাহর এক দান। এটি হতে হবে পবিত্র, শালীন ও নৈতিকতার মধ্যে। আজকের সমাজে প্রেমের নামে অনেকেই অশ্লীলতা ও অনৈতিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা ইসলামের শিক্ষা নয়। আমাদের উচিত সত্যিকারের ভালোবাসাকে সংযম ও আদর্শের সঙ্গে প্রকাশ করা।

রাসূল (সা.) বলেছেন—

"যদি কেউ কাউকে পছন্দ করে, তবে সে যেন বৈধভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।"

 (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৬৬)

সুতরাং, ভালোবাসার কথা জানানো সুন্নত, তবে তা হতে হবে শালীন, সম্মানজনক ও নৈতিকতার মধ্যে।


ভালোবাসা একটি শক্তিশালী অনুভূতি, যা সম্পর্ককে মজবুত করে এবং সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য গড়ে তোলে। প্রিয়জনদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা রাসূল (সা.)-এর সুন্নত, যা আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
তাই, আসুন আমরা বন্ধুদের, পরিবারকে, শিক্ষকদের, সহপাঠীদের এবং আশেপাশের মানুষদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করি— "আমি আল্লাহর জন্য তোমাকে ভালোবাসি।"

এই কথাটি যদি আমাদের জীবনে প্রচলিত হয়, তবে আমাদের সম্পর্ক, সমাজ ও মনোভাব আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।

ভালোবাসুন, ভালোবাসার কথা জানান— তবে অবশ্যই সুন্নতের আলোকে!

ভালোবাসার কথা জানানো এক সুন্নতি শিক্ষা - তৌফিক সুলতান

ভালোবাসা মানব জীবনের এক স্বাভাবিক ও পবিত্র অনুভূতি। এটি শুধু আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং একে প্রকাশ করার মাধ্যমেই সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি পায়। অনেকেই মনে করেন, ভালোবাসা মনে লুকিয়ে রাখা উচিত, কিন্তু ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়— ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা সুন্নত।

ভালোবাসার কথা জানানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ইসলামের দৃষ্টিতে ভালোবাসা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়, বরং এটি সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার অন্যতম মাধ্যম। পারিবারিক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, সহকর্মী কিংবা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক— প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভালোবাসার কথা জানানো পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

"যখন কেউ তার ভাইকে ভালোবাসে, তখন সে যেন তাকে তা জানিয়ে দেয়।"

 (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১২৪)

এখানে ‘ভাই’ শব্দটি শুধু রক্তের সম্পর্ক বোঝায় না; বরং বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতিও প্রযোজ্য। অর্থাৎ, একজন মুসলিম অপর মুসলিমকে ভালোবাসলে তাকে তা প্রকাশ করা উচিত।

অন্য হাদিসে এসেছে—

"যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসে, সে যেন তাকে বলে: আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।"

 (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৩৯২)

এই হাদিস প্রমাণ করে, ভালোবাসা প্রকাশ করা শুধু সামাজিক সৌজন্যতা নয়, বরং এটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতি আমল।


ভালোবাসা প্রকাশের ইতিবাচক প্রভাব

ভালোবাসার কথা জানানো মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১. সম্পর্কের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়

কাউকে ভালোবাসার কথা জানালে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস বাড়ে। এটি পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে।

২. মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে

ভালোবাসা প্রকাশ পেলে মানুষ মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীলতা অনুভব করে।

৩. ঈর্ষা ও বিদ্বেষ দূর হয়

কাউকে ভালোবাসার কথা জানালে অনাকাঙ্ক্ষিত মনোমালিন্য, ঈর্ষা ও বিদ্বেষ দূর হয়। এতে পারস্পরিক সৌহার্দ্য সৃষ্টি হয়।

৪. শান্তি ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়

একটি সমাজ তখনই সুন্দর হয়, যখন মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সহমর্মিতা থাকে।


ভালোবাসার সুন্নত কীভাবে পালন করবেন?

ভালোবাসা প্রকাশ করার বিভিন্ন উপায় আছে, যা সুন্নত অনুযায়ী পালন করা যায়—

1️⃣ সরাসরি বলা: "আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।"

 2️⃣ ভালো কথা বলা: প্রশংসা ও উৎসাহ প্রদান করা।

 3️⃣ উপহার দেওয়া: রাসূল (সা.) বলেছেন— "উপহার দেওয়া ভালোবাসা বৃদ্ধি করে।" (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৬৪)

 4️⃣ সহযোগিতা করা: প্রয়োজনে পাশে থাকা ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন।

 5️⃣ দোয়া করা: প্রিয়জনের জন্য গোপনে কল্যাণের দোয়া করা।


ভালোবাসার অপব্যবহার নয়, বরং পবিত্রতা বজায় রাখুন

ভালোবাসা মহান আল্লাহর দান। তবে আজকের সমাজে প্রেমের নামে অনেকেই অশ্লীলতা ও অনৈতিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা ইসলামের শিক্ষা নয়। আমাদের উচিত সত্যিকারের ভালোবাসাকে সংযম ও আদর্শের সঙ্গে প্রকাশ করা।

রাসূল (সা.) বলেছেন—

"যদি কেউ কাউকে পছন্দ করে, তবে সে যেন বৈধভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।"

 (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৬৬)

সুতরাং, ভালোবাসার কথা জানানো সুন্নত, তবে তা হতে হবে শালীন, সম্মানজনক ও নৈতিকতার মধ্যে।

ভালোবাসা প্রকাশ করা শুধু আবেগের বিষয় নয়, বরং এটি সুন্নত এবং সম্পর্ক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই, আসুন আমরা পরিবার, বন্ধু, শিক্ষকদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করি এবং এই সুন্নতি আদর্শকে বাস্তব জীবনে ধারণ করি।

"আমি আল্লাহর জন্য তোমাকে ভালোবাসি"— এই কথাটি আমাদের জীবনে প্রচলিত হোক, সম্পর্ক আরও মজবুত হোক, সমাজ হোক শান্তিময়।

ভালোবাসার কথা জানানো এক সুন্নতি শিক্ষা

 - তৌফিক সুলতান

ভালোবাসা মানবজীবনের অন্যতম সুন্দর ও মূল্যবান অনুভূতি। এটি মানুষের হৃদয়ের মাঝে সহমর্মিতা, শ্রদ্ধা, এবং পারস্পরিক বন্ধন সৃষ্টি করে। তবে ভালোবাসা শুধু অনুভবের বিষয় নয়, বরং একে প্রকাশ করাও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন, ভালোবাসা মনে লুকিয়ে রাখা উচিত, কিন্তু ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী— ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত।

বর্তমানে বিশ্বে ১৪ ফেব্রুয়ারি "ভালোবাসা দিবস" পালন করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ভালোবাসা শুধুই একটি দিনের জন্য, নাকি এটি সারাজীবনের একটি আদর্শ হওয়া উচিত? প্রকৃতপক্ষে, ভালোবাসা একটি সার্বক্ষণিক অনুভূতি, যা প্রতিদিনের জীবনে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।


ভালোবাসার কথা জানানো: ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, কাউকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা কেবল আবেগের বিষয় নয়, বরং এটি সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

"যখন কেউ তার ভাইকে ভালোবাসে, তখন সে যেন তাকে তা জানিয়ে দেয়।"

 (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১২৪)

এখানে ‘ভাই’ বলতে শুধু রক্তের সম্পর্ক নয়, বরং বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মী এবং সব মুসলিম ভাই-বোনদের বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, একজন মানুষ অপরকে ভালোবাসলে, শ্রদ্ধা করলে বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাইলে, সেটি বলা উচিত।

আরেকটি হাদিসে এসেছে—

"যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসে, সে যেন তাকে বলে: আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।"

 (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৩৯২)

এই হাদিস প্রমাণ করে, ভালোবাসা শুধু মানসিক অনুভূতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একে প্রকাশ করা সম্পর্কের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে।


ভালোবাসার কথা জানালে কী উপকার হয়?

✅ সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয়: পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থা বাড়ে।

 ✅ ঈর্ষা ও বিদ্বেষ দূর হয়: ভুল বোঝাবুঝি ও শত্রুতা কমে যায়।

 ✅ মানসিক প্রশান্তি আসে: ভালোবাসা প্রকাশ করলে আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচকতা বৃদ্ধি পায়।

 ✅ সমাজে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি তৈরি হয়: মানুষ একে অপরের প্রতি আরও আন্তরিক হয়।

 ✅ শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক মজবুত হয়: শিক্ষকের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ে।


কীভাবে ভালোবাসার সুন্নত পালন করবেন?

ভালোবাসার প্রকাশ বিভিন্ন উপায়ে করা যায়, যা সুন্নত অনুযায়ী পালন করা সম্ভব—

1️⃣ সরাসরি বলা: "আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।"

 2️⃣ ভালো কথা বলা: কাউকে উৎসাহ দেওয়া, প্রশংসা করা।

 3️⃣ উপহার দেওয়া: রাসূল (সা.) বলেছেন— "উপহার দেওয়া ভালোবাসা বৃদ্ধি করে।" (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৬৪)

 4️⃣ সাহায্য করা: বন্ধুর প্রয়োজনে তার পাশে থাকা ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন।

 5️⃣ দোয়া করা: কারও জন্য গোপনে কল্যাণের দোয়া করা ভালোবাসার সুন্দর প্রকাশ।


১৪ ফেব্রুয়ারি বনাম ইসলামের ভালোবাসার শিক্ষা

বর্তমানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়, যা মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে এসেছে। এদিন মানুষ ভালোবাসা প্রকাশ করতে চায়, উপহার বিনিময় করে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়।

ইসলামে ভালোবাসা শুধু একটি দিনের বিষয় নয়, বরং এটি সারাজীবনের নৈতিক দায়িত্ব। রাসূল (সা.) সারাজীবন ভালোবাসার শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি তার স্ত্রী, সন্তান, সাহাবি এবং উম্মতের প্রতি দয়া ও ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাই ভালোবাসা শুধুমাত্র একটি দিনে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিদিনের জীবনে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।


ভালোবাসার অপব্যবহার নয়, বরং পবিত্রতা বজায় রাখুন

প্রিয় পাঠক,

 ভালোবাসা মহান আল্লাহর দান। তবে আজকের সমাজে প্রেমের নামে অনেকেই অশ্লীলতা ও অনৈতিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা ইসলামের শিক্ষা নয়। আমাদের উচিত সত্যিকারের ভালোবাসাকে সংযম ও আদর্শের সঙ্গে প্রকাশ করা।

রাসূল (সা.) বলেছেন—

"যদি কেউ কাউকে পছন্দ করে, তবে সে যেন বৈধভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।"

 (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০৬৬)

সুতরাং, ভালোবাসার কথা জানানো সুন্নত, তবে তা হতে হবে শালীন, সম্মানজনক ও নৈতিকতার মধ্যে।


ভালোবাসা শুধু একটি দিবসের জন্য নয়, এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে থাকা উচিত। পরিবারের সদস্য, বন্ধু, শিক্ষক, সহপাঠী—সবাইকে ভালোবাসা জানানো উচিত, কারণ এটি সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করে এবং হৃদয়ে প্রশান্তি আনে।

আসুন, আমরা ভালোবাসার কথা জানাই, তবে সুন্নতের আলোকে। ভালোবাসা হোক পবিত্র, সম্মানজনক ও নৈতিকতার মধ্য দিয়ে।

"আমি আল্লাহর জন্য তোমাকে ভালোবাসি"— এই কথাটি হোক আমাদের জীবনের অনুপ্রেরণা।

Expressing Love A Sunnah of the Holy Prophet (PBUH) 

- Towfiq Sultan

Love is one of the most beautiful and powerful emotions in human life. It fosters unity, strengthens relationships, and builds a harmonious society. However, love is not just a feeling to be hidden in one’s heart—it is something to be expressed openly and sincerely. In Islam, expressing love is not only encouraged but is also a Sunnah of the Holy Prophet Muhammad (PBUH).



Love in Islam A Divine Gift

Islam views love as a sacred and valuable emotion, guiding humanity toward kindness, respect, and care for one another. The Prophet Muhammad (PBUH) set the highest example of love—love for his family, companions, and the entire Muslim Ummah.

A hadith beautifully illustrates this Sunnah:

“When a man loves his brother, he should tell him that he loves him.”

 (Sunan Abu Dawood, Hadith: 5124)

This means that expressing love, whether to a family member, a friend, or a fellow believer, is a noble act that fosters goodwill and strengthens bonds.

In another hadith, the Prophet (PBUH) said:

“If one of you loves his brother, let him tell him, ‘I love you for the sake of Allah.’”

 (Sunan Tirmidhi, Hadith: 2392)

This highlights that love should be rooted in sincerity and righteousness, free from selfish desires or impure intentions.


The Benefits of Expressing Love

When we express our love and appreciation, it brings numerous benefits:

✅ Strengthens Relationships – Open communication deepens trust and mutual respect.

 ✅ Eliminates Hatred and Misunderstanding – Expressing love removes doubts and negative feelings.

 ✅ Brings Mental and Emotional Peace – Knowing that one is loved provides comfort and confidence.

 ✅ Promotes Brotherhood and Unity – A society based on love and care is stronger and more peaceful.

 ✅ Encourages Gratitude and Positivity – Love inspires people to be kind and appreciative.

The Prophet (PBUH) taught us that love should not remain hidden in the heart but should be expressed through words, gestures, and actions.


How to Express Love in the Light of Sunnah

There are several ways to express love, following the example of the Prophet Muhammad (PBUH):

1️⃣ Verbally Say It – Tell your loved ones, “I love you for the sake of Allah.”

 2️⃣ Give Gifts – The Prophet (PBUH) said:

 “Give gifts to one another, and you will love one another.” (Sunan Abu Dawood, Hadith: 5164)

 3️⃣ Make Dua (Supplication) – Pray for the well-being of those you love.

 4️⃣ Help and Support – Stand by them in times of need.

 5️⃣ Smile and Show Kindness – A smile is a Sunnah that reflects love and warmth.

These simple actions strengthen relationships and spread harmony in society.


Love in Today’s World: Valentine's Day vs. Islamic Perspective

In modern times, February 14 is widely celebrated as Valentine’s Day—a day supposedly dedicated to expressing love. However, this concept often focuses on materialistic and temporary expressions of affection, sometimes leading to immorality and superficial relationships.

Islam teaches that love is not limited to one day—it is a lifelong practice. The Prophet (PBUH) demonstrated love daily through kind words, affectionate gestures, and unwavering support for his companions and family.

While Islam encourages expressing love, it should always be within ethical and moral boundaries. Love should be based on sincerity, purity, and the intention to build meaningful relationships rather than fleeting attractions.


Avoiding the Misuse of Love

Unfortunately, in today’s world, the idea of love is often distorted. Many people misuse the concept of love, leading to inappropriate relationships, heartbreak, and moral corruption. True love should always be expressed in a halal and respectful manner.

The Prophet (PBUH) emphasized that if someone develops affection for another, especially in the context of marriage, they should take the proper Islamic steps.

“If someone among you loves a woman, let him propose marriage in a lawful manner.”

 (Sahih Bukhari, Hadith: 5066)

This teaches us that love should be expressed with honor and commitment, rather than being exploited for temporary pleasures.


Love is a gift from Allah, and expressing it is a Sunnah of the Prophet Muhammad (PBUH). However, love should always be expressed with sincerity, purity, and respect. Rather than limiting love to a single day like Valentine’s Day, we should embrace the Islamic approach—expressing love every day through kindness, gratitude, and genuine care.

As Muslims, let’s revive this beautiful Sunnah by telling our family, friends, and loved ones:

“I love you for the sake of Allah.”

This simple phrase can bring hearts closer, strengthen bonds, and create a more loving and compassionate society.

May Allah bless us with true love, based on sincerity and righteousness. Ameen.

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার প্রকৃত উপলব্ধি ও সামাজিক বাস্তবতা 

- তৌফিক সুলতান 


প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপিত হয়। বিশেষত তরুণদের মধ্যে এই দিনটি নিয়ে ব্যাপক উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ কী? এটি কি শুধুই এক দিনের বিষয়, নাকি আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত ভালোবাসার চর্চা প্রয়োজন?

আজকের সমাজে ভালোবাসা দিবস মূলত বাণিজ্যিকীকরণ ও পশ্চিমা সাংস্কৃতিক প্রভাবের প্রতিফলন হয়ে উঠেছে। কার্ড, ফুল, চকোলেট, বিলাসবহুল উপহার—এসবই যেন ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ, ভালোবাসার প্রকৃত রূপ এসব বস্তুগত উপায়ে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি হলো মানসিক, আত্মিক ও মানবিক এক গভীর অনুভূতি, যা দায়িত্ব, শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।

ভালোবাসা কি কেবল এক দিনের জন্য?

ভালোবাসা কোনো নির্দিষ্ট তারিখের জন্য সংরক্ষিত নয়। এটি প্রতিদিনের একটি স্বাভাবিক অনুভূতি, যা বাবা-মা, সন্তান, ভাই-বোন, বন্ধু, স্বামী-স্ত্রী ও সমাজের প্রতিটি সদস্যের প্রতি বিদ্যমান থাকা উচিত। শুধুমাত্র একটি দিনে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো এবং বাকি ৩৬৪ দিন সম্পর্কের প্রতি উদাসীন থাকা—এটি কি প্রকৃত ভালোবাসা?

ইসলামের দৃষ্টিতে ভালোবাসা

ইসলাম ভালোবাসাকে এক মহৎ ও পবিত্র অনুভূতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তবে সেটি অবশ্যই নৈতিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন—

 “যখন কেউ কাউকে ভালোবাসে, সে যেন তাকে তা জানিয়ে দেয়।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১২৪)

কিন্তু আজকের সমাজে ভালোবাসার নামে যে অশ্লীলতা, অনৈতিক সম্পর্ক ও অসামাজিক কার্যকলাপ ছড়িয়ে পড়ছে, তা কি সত্যিকার ভালোবাসা? প্রকৃত ভালোবাসা হলো পরস্পরের কল্যাণ কামনা করা, একজনের প্রতি অন্যজনের দায়িত্বশীল হওয়া এবং সম্পর্কের প্রতি সম্মানবোধ রাখা।

ভালোবাসা দিবস বিপথগামী তরুণ প্রজন্ম

বর্তমানে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন অপসংস্কৃতি ও অসভ্যতার উপলক্ষ হয়ে উঠছে। তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে প্রেমের নামে অশালীন সম্পর্কে জড়িয়ে ফেলছে, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভ্যালেন্টাইনস ডে-এর প্রভাব তরুণদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক, আত্মহত্যা, বিষাদগ্রস্ততা এবং হতাশা বৃদ্ধি করছে। এক দিনের কৃত্রিম ভালোবাসার মোহ শেষ হলে অনেক সম্পর্কেই ভাঙন ধরে, যা মানসিক সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ভালোবাসার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

ভালোবাসা দিবসকে যদি সঠিকভাবে অর্থবহ করা যায়, তবে এটি হতে পারে সম্পর্কের উন্নতির একটি সুন্দর মাধ্যম। তবে তার জন্য প্রয়োজন—

 ✅ সঠিক সম্পর্কের মূল্যায়ন করা (পরিবার, বন্ধু ও বৈধ সম্পর্কের প্রতি মনোযোগ দেওয়া)

 ✅ নৈতিকতা বজায় রাখা (অশ্লীলতা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিহার করা)

 ✅ সচেতনতা বৃদ্ধি করা (তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া)

 ✅ মানবিক ভালোবাসার প্রচার করা (দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো)

১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের শেখায়, ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য নয়, বরং এটি আমাদের চারপাশের প্রতিটি মানুষের প্রতি থাকা উচিত। আমাদের উচিত এই ভালোবাসাকে একটি দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিদিন সত্যিকারের ভালোবাসা, সহানুভূতি ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে প্রকাশ করা।

আসুন, ভালোবাসার অপব্যবহার পরিহার করি, নৈতিক ভালোবাসার চর্চা করি এবং সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনি।

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ ও সামাজিক বাস্তবতা

ভালোবাসা—একটি শব্দ, যা মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রোথিত। এটি কেবল একটি আবেগ নয়; বরং এক মহান অনুভূতি, যা পরিবার, সমাজ, বন্ধুত্ব এবং মানবতার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। তবে আজকের সময়ে, বিশেষ করে ১৪ ফেব্রুয়ারি "ভ্যালেন্টাইনস ডে" উদযাপনের নামে ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ পরিবর্তিত হয়ে গেছে। ভালোবাসা এখন বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে কৃত্রিমতার আবরণে আবৃত হয়ে পড়েছে।

ভালোবাসার প্রকৃত সংজ্ঞা

ভালোবাসা হলো স্নেহ, সহানুভূতি, আত্মত্যাগ ও শ্রদ্ধার মিশেল। এটি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, বন্ধুত্বের ভালোবাসা, আত্মীয়তার বন্ধন এবং মানবতার প্রতি ভালোবাসা—সবই এর অন্তর্ভুক্ত।

ইসলামের দৃষ্টিতে, ভালোবাসা একটি পবিত্র বিষয়। মহানবী (সা.) বলেছেন—

 “যখন কেউ কাউকে ভালোবাসে, সে যেন তাকে তা জানিয়ে দেয়।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১২৪)

এ থেকে বোঝা যায়, ভালোবাসা গোপন করার বিষয় নয়; বরং এটি প্রকাশ করা সুন্নত। তবে এর প্রকাশভঙ্গি হতে হবে নৈতিক ও শালীনতার সীমার মধ্যে।

ভালোবাসা দিবস: ইতিহাস ও বাস্তবতা

ভ্যালেন্টাইনস ডে-এর ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এর উৎপত্তি মূলত প্রাচীন রোমান সভ্যতায়। এটি মূলত ভ্যালেন্টাইন নামক এক খ্রিস্টান ধর্মযাজকের প্রতি উৎসর্গ করা হয়, যিনি প্রেমিক-প্রেমিকাদের গোপনে বিয়ে দেওয়ার কারণে শাস্তি ভোগ করেন।

সময়ের পরিক্রমায় এটি পশ্চিমা সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে ওঠে এবং বর্তমানে বাণিজ্যিক লাভের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি এলেই বিশ্বব্যাপী কার্ড, ফুল, চকোলেট, বিলাসবহুল উপহার এবং অভিজাত ডিনারের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশের প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, ভালোবাসা কি শুধুই এক দিনের জন্য?

ভালোবাসার নামে অপসংস্কৃতি

বর্তমানে এই দিবসটি তরুণদের মাঝে ভুল মূল্যবোধ সৃষ্টি করছে।

 🔴 অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 🔴 সামাজিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

 🔴 পরিবার ও ধর্মীয় আদর্শ থেকে তরুণরা দূরে সরে যাচ্ছে।

 🔴 এক দিনের ভালোবাসার নামে পরবর্তীতে প্রতারণা, বিচ্ছেদ, হতাশা ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।

এটি ভালোবাসার প্রকৃত রূপ নয়, বরং কৃত্রিম ও বাণিজ্যিক ভালোবাসার প্রচার। প্রকৃত ভালোবাসা কখনোই শারীরিক আকর্ষণ বা এক দিনের আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ নয়।

ভালোবাসার সুন্নতি আদর্শ

ইসলামে ভালোবাসাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখানো হয়েছে। মহানবী (সা.) তার পরিবার, সাহাবি ও উম্মতের প্রতি গভীর ভালোবাসা দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন—

 "তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো, উপহার দাও, কারণ এটি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি করবে।" (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৬৪)

তাহলে আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ কেমন হওয়া উচিত?

 ✅ পরিবারের প্রতি ভালোবাসা – বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হওয়া।

 ✅ বন্ধুত্বের ভালোবাসা – বন্ধুর পাশে থাকা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রকাশ করা।

 ✅ মানবতার ভালোবাসা – অসহায় ও দরিদ্রদের সাহায্য করা, দান-সদকা করা।

 ✅ আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা – তাঁর বিধান মেনে চলা ও নবীজির সুন্নাহ অনুসরণ করা।

সঠিক ভালোবাসার বার্তা

প্রকৃত ভালোবাসা এক দিনের বিষয় নয়, এটি আজীবনের অনুশীলন। ভালোবাসার প্রকৃত উপলব্ধির জন্য প্রয়োজন:

 ✅ নৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা

 ✅ পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া

 ✅ মানবতার কল্যাণে কাজ করা

 ✅ আত্মিক ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেওয়া


ভালোবাসা নিঃসন্দেহে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতি, কিন্তু সেটি নৈতিকতার ভিত্তিতে, সামাজিক মূল্যবোধের মধ্যে এবং আল্লাহর বিধান অনুসারে হওয়া উচিত। ১৪ ফেব্রুয়ারি যদি শুধু বিলাসিতা, অপসংস্কৃতি ও অবৈধ সম্পর্কের প্রচার করে, তবে এটি সমাজের জন্য ক্ষতিকর। বরং আমাদের উচিত, প্রতিদিন ভালোবাসার চর্চা করা—পরিবার, সমাজ ও মানবতার কল্যাণে।

আসুন, ভালোবাসাকে শুধু এক দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিদিন নৈতিক ও মানবিক ভালোবাসা চর্চা করি, যা সমাজ ও ব্যক্তিগত জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

Information The Backbone of the Modern World

Information is the lifeblood of human civilization. From ancient times to the digital era, the way we gather, process, and use information has shaped societies, economies, and personal lives. Today, in the age of information technology and artificial intelligence, access to accurate and timely information is more critical than ever. However, with great power comes great responsibility—information can be a tool for progress or a weapon for manipulation.

The Power of Information

Information empowers individuals and nations. It fuels education, innovation, governance, and economic development. A well-informed society makes better decisions, whether in politics, business, or personal life.



✅ Knowledge and Education – Information is the foundation of learning. Without accurate data, education loses its effectiveness.

✅ Scientific and Technological Progress – Breakthroughs in medicine, engineering, and artificial intelligence all depend on reliable information.

✅ Democracy and Governance – A free press and access to information help hold leaders accountable, promoting transparency and justice.

The Challenges of the Information Age

While information is powerful, it also comes with challenges:

⚠️ Misinformation and Fake News – The spread of false or misleading information, especially on social media, can create confusion and harm society.

⚠️ Information Overload – The digital era has led to an excess of data, making it difficult to filter valuable knowledge from irrelevant noise.

⚠️ Privacy and Security – With increased data collection, concerns over personal privacy and cyber threats have become major issues.

The Ethical Use of Information

In a world where information can shape perceptions and influence behaviors, it is essential to promote:

🔹 Media Literacy – Teaching people how to verify sources and critically analyze information.

🔹 Data Protection – Strengthening cybersecurity and privacy laws to protect individuals from data misuse.

🔹 Responsible Journalism – Encouraging ethical reporting to ensure accuracy and prevent propaganda.

Final Thoughts

Information is a double-edged sword—it can enlighten or mislead, empower or deceive. The key is to use it wisely, ensuring it serves humanity rather than harming it. As individuals, we must be critical thinkers, responsible consumers, and ethical sharers of information.

In the digital era, the right information at the right time is more valuable than gold. Let us strive for a world where knowledge is used for truth, progress, and the greater good.

February 14 Love and Social Reality 

– Towfiq Sultan

Love is a fundamental human emotion that transcends cultures, religions, and generations. February 14, widely known as Valentine’s Day, has become a global symbol of love and romance. However, in today’s digital and consumer-driven society, love is often commercialized, and its social implications vary across cultures. This article explores the meaning of love, its societal impact, and data-driven insights into modern love trends.

The Meaning of Love

Love is not just romantic attraction; it includes familial love, friendship, self-love, and humanitarian love. Psychologist Robert Sternberg’s Triangular Theory of Love defines love based on three components:

Intimacy – Emotional closeness and connection.

Passion – Physical attraction and romantic desire.

Commitment – Long-term dedication and responsibility.

A healthy relationship balances these aspects. However, modern trends and social pressures are reshaping how love is perceived and expressed.

Valentine’s Day and Commercialization

Valentine’s Day is one of the most commercialized holidays, with billions spent worldwide. According to the National Retail Federation (NRF, USA):

In 2024, Americans spent $25.9 billion on Valentine’s gifts.

The average spending per person was around $192 on gifts, dining, and experiences.

Jewelry (21%), dining (34%), and flowers (37%) were the top purchases.

While it started as a day to celebrate love, it has now become a business-driven event, often creating pressure on couples to prove their love through material gifts.

Social Reality How Love Is Changing
Rise of Digital Love



Dating apps like Tinder, Bumble, and Hinge have changed how people meet and form relationships.

A study by Pew Research (2023) found that 30% of U.S. adults have used online dating, with higher rates among younger generations (50% of 18-29-year-olds).

Social media affects relationships, sometimes creating unrealistic expectations and relationship insecurities.

Changing Marriage Trends



Marriage rates are declining in many countries.

In the U.S., the marriage rate dropped from 8.2 per 1,000 people in 2000 to 6.1 in 2020 (CDC).

In Japan and South Korea, birth rates are at an all-time low, partly due to career priorities over marriage.

Love vs. Hookup Culture



Studies suggest that younger generations are more open to casual relationships.

The "situationship" (a romantic connection without clear commitment) is becoming more common.

Psychologists warn that the lack of long-term commitment may lead to higher emotional distress.



Cultural Perspectives on Love

Love is celebrated differently across cultures:

In China, Qixi Festival (Chinese Valentine’s Day) follows an ancient legend.

In Islamic traditions, love is considered sacred and responsible, emphasizing commitment (Nikah) over casual relationships.

In South Asian societies, arranged marriages are still prevalent, balancing romantic and familial expectations.

Love is a beautiful and essential part of human life, but it should not be limited to one commercialized day. True love is about understanding, respect, sacrifice, and emotional support—not just gifts or social media validation.

In a world of rapid digital transformation, love must evolve with authenticity and deeper human connection. Instead of focusing on one-day expressions, we should cultivate love, kindness, and relationships every day.


শবে বরাত  গুরুত্বপূর্ণ এক রাত

শবে বরাত গুরুত্বপূর্ণ এক রাত

শবে বরাত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫


শবে বরাত ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ এক রাত, যা হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাতে পালিত হয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, ২০২৫ সালে শবে বরাত পড়বে ১৪ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার রাতে


শবে বরাত ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ এক রাত


শবে বরাতের তাৎপর্য

শবে বরাত শব্দের অর্থ "মুক্তির রাত"। এটি মূলত আরবি 'লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান' (شَبّ بَرَات) থেকে এসেছে, যার অর্থ "শাবান মাসের মধ্যরাত্রি"। ইসলামে এটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ রাত হিসেবে পরিচিত, যেখানে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন, রিজিক নির্ধারণ করেন এবং দোয়া কবুল করেন বলে বিশ্বাস করা হয়।

শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস

কিছু হাদিসে শাবান মাসের ১৫তম রাতের বিশেষ গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। যেমন:

১. হযরত আয়শা (রা.) বলেন:
"এক রাতে আমি নবী (সা.)-কে খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, তিনি জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে আছেন। তখন নবী (সা.) বললেন: 'আল্লাহ তাআলা শাবান মাসের ১৫তম রাতে বান্দাদের প্রতি রহমত নাজিল করেন, ক্ষমা করেন এবং দোয়া কবুল করেন। তবে যারা শিরক করে ও পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তাদের ক্ষমা করা হয় না’" (ইবনে মাজাহ: ১৩৮০)।

২. অন্য এক হাদিসে এসেছে:
"আল্লাহ তাআলা শাবান মাসের ১৫তম রাতে বান্দাদের প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন" (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব: ১০২২)।


Welftion Love Of Welfare 


শবে বরাতের আমল

১. নফল নামাজ: অনেকে এই রাতে ইবাদত করে অতিরিক্ত নফল নামাজ পড়ে থাকেন।
2. কোরআন তিলাওয়াত: কোরআন শরিফ পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
৩. তওবা ও ইস্তিগফার: পাপমুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উত্তম।
৪. দোয়া করা: নিজের ও সকল মুসলমানদের জন্য দোয়া করা।
৫. রোযা রাখা:

হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) শাবান মাসে অধিক রোযা রাখতেন (বুখারি: ১৮৩৩)।

শবে বরাতে কিছু ভুল ধারণা

  • আলাদা কোনো নির্দিষ্ট নামাজ বা দোয়ার বিধান নেই: শবে বরাতের জন্য নির্দিষ্ট কোনো নামাজ বা দোয়া নেই যা বাধ্যতামূলক।
  • হালুয়া-রুটির আয়োজন করা কোনো ইসলামী বিধান নয়: এটি একটি সংস্কৃতি, তবে ধর্মীয় আবশ্যিকতা নয়।
  • কবর জিয়ারতের নামে বিদআতমূলক কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।


শবে বরাত ক্ষমা ও রহমতের রাত, তাই এ রাতে আল্লাহর কাছে তওবা করা ও ইবাদতে মনোযোগী হওয়া উচিত। তবে বিদআত ও ভিত্তিহীন বিশ্বাস থেকে দূরে থেকে রাসূল (সা.)-এর অনুসৃত পথেই পালন করা সর্বোত্তম।

আল্লাহ আমাদের শবে বরাতের ফজিলত অর্জনের তৌফিক দান করুন, আমিন।

শনিবার, জানুয়ারী ২০, ২০২৪

আলহামদুলিল্লাহ! আবারও বিশ্ব সেরা হলেন হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম। দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৭০টি দেশকে পেছনে ফেলে আবারও বিশ্বসেরা হলেন কিশোর হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম

আলহামদুলিল্লাহ! আবারও বিশ্ব সেরা হলেন হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম। দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৭০টি দেশকে পেছনে ফেলে আবারও বিশ্বসেরা হলেন কিশোর হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম

আলহামদুলিল্লাহ! আবারও বিশ্ব সেরা হলেন হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম। দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৭০টি দেশকে পেছনে ফেলে আবারও বিশ্বসেরা হলেন কিশোর হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম’— এমন একটি তথ্য ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ৪২তম বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় চতুর্থ বিভাগে তৃতীয় স্থান অর্জন করা হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিমকে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানানো হচ্ছে। 

অভিনেত্রী রাজ রিপাও তাঁর ফেসবুক ওয়ালে এ তথ্য শেয়ার করে সালেহ আহমেদ তাকরিমকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা—২০২৪ এ বিশ্বের ৭০ টি দেশকে পেছনে ফেলে আবারও বিশ্বসেরা হলেন বাংলাদেশের গর্ব কিশোর হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম।’ 

সালেহ আহমেদ তাকরিম



তবে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কিশোর হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিমের ২০২৪ সালের দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। 


 বাংলাদেশে দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার সার্বিক ব্যবস্থাপনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। 


ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক আনিসুর রহমান সরকার স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, চলতি বছরের দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার সম্ভাব্য তারিখ ১ থেকে ১৪ রমজান ১৪৪৫ হিজরি মোতাবেক ১২ থেকে ২৫ মার্চ ২০২৪। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের শর্তাবলির মধ্যে তৃতীয় শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, যারা ইতিপূর্বে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের আবেদন করার প্রয়োজন নেই। 

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার ২৬তম আসরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্ব বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন সালেহ আহমেদ তাকরিম। তাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উল্লিখিত তৃতীয় শর্ত হিসেবে এ প্রতিযোগিতায় সালেহ আহমেদ তাকরিমের আর অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। 

পরে বিজ্ঞপ্তিটি সম্পর্কে আরও জানতে দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক আনিসুর রহমান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তিনি আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল তথ্যটি সঠিক নয়। এটি ২০২৩ হবে। ২০২৪ সালের দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু সালেহ আহমেদ তাকরিম একবার অংশগ্রহণ করে পুরস্কার জিতেছে, তাই আর তাঁর অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ফয়সাল আহমেদ একজন প্রতিযোগী অংশ নেবেন।’


ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ২০২৪ সালের দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি এবং সালেহ আহমেদ তাকরিম পূর্বে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করায় তিনি আর এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন না। অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল তথ্যটি সঠিক নয়।দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হোলি কোরআন অ্যাওয়ার্ডের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যের সূত্রে অনুসন্ধানে বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট খুঁজে গত বছরের ২৯ নভেম্বর দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতা—২০২৪ নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজক সংস্থা দুবাই ইন্টারন্যাশনাল হোলি কোরআন অ্যাওয়ার্ডের সরকারি ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যায়, এতে প্রতিযোগিতাটি সম্পর্কে বলা হয়েছে এটি প্রতি হিজরি বছরের প্রথম রমজান থেকে শুরু হয়ে রমজান মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীরা নিজেদের দেশ বা ইসলামিক সেন্টার থেকে মনোনীত হয়ে আসে। 

আরব আমিরাতের জ্যোতির্বিজ্ঞান সোসাইটি ২০২৪ সালে রমজান মাসের শুরুর তারিখ সম্পর্কে জানিয়েছে, জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ১২ মার্চ (বৃহস্পতিবার) থেকে পবিত্র রমজান শুরু হতে পারে এবং শেষ হতে পারে ১১ এপ্রিল, শুক্রবার। অবশ্য রমজান মাসের শুরু হওয়ার আনুষ্ঠানিক তারিখ চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। 

বুধবার, নভেম্বর ১৫, ২০২৩

আমাকে পৌঁছে দিও– সূরা ইয়া'সীন।

আমাকে পৌঁছে দিও– সূরা ইয়া'সীন।

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...
সালমান হাবীব - কবিতায় গল্প বলা মানুষ



আমি চলে গেলে– পৃথিবীর কোথাও
কোনো এক বিষণ্ণ গাঙচিল তার ওড়ার গতি
থামিয়ে নেমে আসবে জলে?
ঝরে যেতে যেতে ব্যথিত হবে কি
অরণ্যে কোনো এক মৃতপ্রায় পাতা?
কোথাও কি বেশ-কম হবে কিছু; আমি নেই বলে?
যদি মাঝরাতে ঘুম ভেঙে শোনো;
সচল শ্রবণযন্ত্রে– মসজিদের এলান,
শোক সংবাদ নিয়ে এসেছে মৃত্যুর ফরমান
পাশ বদল করে তুমি কি ঘুমিয়ে যাবে ফের?
তখনও রাত পোহায়নি সকালের বাকি আছে ঢের!
হেঁটে যেতে যেতে যদি পথে পড়ে আমার কবর,
তুমি কি দাঁড়াবে খানিক, স্মৃতি স্মরে ভেজাবে অধর?
জানি, মৃত্যুর চেয়ে ব্যস্ত জীবন
যেন ঘন বসতির পাশে বেড়ে ওঠা পরিত্যক্ত বন!
ব্যস্ততা ভুলে তুমি দাঁড়িয়ো সেদিন
আমাকে পৌঁছে দিও– সূরা ইয়া'সীন।
সালমান হাবীব - কবিতায় গল্প বলা মানুষ
বই : আমায় তুমি ফিরিয়ে নিও ফুরিয়ে যাবার আগে

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন editorial.tdse@gmail.com

সোমবার, নভেম্বর ১৩, ২০২৩

নিয়তে অসততা থাকার জন্য আমাদের উপর বহু ধরণের বিপদ আসতে পারে

নিয়তে অসততা থাকার জন্য আমাদের উপর বহু ধরণের বিপদ আসতে পারে

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...

লেখক :মোঃ মেহেদী হাসান
লেখক :মোঃ মেহেদী হাসান


শুধু নিয়তে অসততা থাকার জন্য আমাদের উপর বহু ধরণের বিপদ আসতে পারে। শুধু নিয়তে অসততা থাকার জন্য আমাদের উপর বহু ধরণের বিপদ আসতে পারে। আমাদের রিযিকে বারাকাহ আসতে পারে শুধুমাত্র নেক নিয়তের কারণে; আবার রিযিক কেড়ে নেয়া হতে পারে শুধুমাত্র বদ নিয়তের কারণে। কুরআনে সুরা ক্বালামে আল্লাহ তা'আলা খুব সুন্দর উপমা দিয়েছেন একটি ঘটনার মাধ্যমে। আসুন জেনে নেই কুরআনের সেই গল্প! তাফসীরে (ইবন কাসীর) এসেছে, ঘটনাটি Yemen/Ethiopia এর একদল সহোদরের। একটি মত আছে যে তারা আহলে কিতাব ছিলেন। তাদের বাবা একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন। তার একটি বাগান ছিল। তিনি প্রতিবছর বাগানে যা ফলন হত, তা থেকে পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় অংশ রেখে বাকিটা দান করে দিতেন। এতে আল্লাহ তা'আলা তার রিযিকে আরো বারাকাহ দিতেন।  তো তার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা যখন বাগানটি দেখাশুনা করতে লাগল, তখন তারা ফন্দী আঁটল যে বাবার মত বোকামি (!) তারা করবে না। বাবা বোকা ছিলেন তাই দান করতেন। কিন্তু তারা তো ভারী বুদ্ধিমান! তাই তারা সবটাই নিজেদের জন্য রেখে দিবে। যেই ভাবা সেই কাজ! ফসল কাটার আগের দিন তারা পরিকল্পনা  করল, পরদিন খুব ভোরেই তারা বাগানে উপস্থিত হবে। এমকি তারা এ ব্যাপারে শপথ পর্যন্ত করল! যাতে কোনো সাহায্যপ্রার্থী / মিসকীন আসের আগেই তারা সব ফসল কেটে নিতে পারে। তাতে করে আর কাউকে কিছু দান করা লাগবে না। ব্যস! আপদ বিদায়! তারা একটিবারও আল্লাহকে স্মরণ করল না। ইন শা আল্লাহ বলল না।Little did they realize that Allah had His plans too! রাতে যখন তারা গভীর ঘুমে মগ্ন, তখন সেই বাগানের উপর প্রচন্ড ঝড় বয়ে গেল যা বাগানটিকে ছিন্ন-বিছিন্ন করে দিল।  এদিকে বাগানের মালিকগণ অঘোরে ঘুমাচ্ছে! খুব ভোরে তারা ঘুম থেকে একজন আরেকজনকে ডাকতে লাগল। যেন খুব দ্রুত তারা বাগানে পৌঁছে কাজ সেরে ফেলতে পারে। আর তারা ফিসফিস করে একে অপরকে বলল - আজ কেউ আমাদের কাছে কিছু চাইতে আসতে পারবে না - তার আগেই আমরা সব ফসল কেটে ফেলব। এবং নিজেদেরকে খুব সক্ষম মনে করল এ কাজের ব্যাপারে। এখানে একটু pause করে আমরা আমাদেরকে judge করি। আমরাও কি অনেক সময় এমন করি না? যে এমনভাবে কোনো কিছুর পিছনে টাকা খরচ করে ফেলি যেন যাকাত না আসে অথবা দান করা না লাগে? অথবা এমন সময়ে কোনো কাজ করি যাতে আমি নিজেই অক্ষম হয়ে যাই দান করতে। কারো সাথে কিছু share করতে না চাইলে তাড়াহুড়ো করে কোনো কিছু consume করে ফেলি। নিজেকে ইচ্ছকৃতভাবে অক্ষম করে আমরা আসলে কাকে ফাঁকি দিচ্ছি? আল্লাহ তা'আলার কোনো দরকার নেই আমাদের দানের। তিনি সকল প্রয়োজনের ঊর্ধে। দান করে আমরা নিজেদেরই উপকার করি। শুধুমাত্র দান করার নিয়তেই রিযিকে বারাকাহ আসে! আর দান করলে পরে আরো কত নেয়ামত আল্লাহ তা'আলা দেন! ফিরে আসি গল্পে - তো তারা বাগানে এসে হতভম্ব! এ কী অবস্থা বাগানের? এ কী করে সম্ভব? নিশ্চয়ই পথ ভুল হয়েছে! সম্বিত ফিরে পেয়ে তারা বুঝল, আসলে এ ছিল তাদের শাস্তি। বদ নিয়তের কারণে। তাদের মাঝে সবচেয়ে বুঝদার ব্যক্তিটি বলল, আমি কি তোমাদের বলিনি যে আল্লাহকে স্নরণ করো? তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে বলল,  নিশ্চয়ই আমার যুলম করেছি। তারা আল্লাহ'র কাছে তওবা করলো এবং আশা করলো যে আল্লাহ তাদেরকে উত্তম বিনিময় দিবেন। এই ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা'আলা আমাদের স্মরণ করে দিচ্ছেন - আযাব এভাবেই আসে। আর আখিরাতের আযাব তো আরো ভয়ংকর! এই ঘটনাটি থেকে শিখার অনেক কিছু আছে -১। নেক নিয়তের কারণে রিযিকে বারাকাহ আসতে পারে। আবার বদ নিয়তের কারণে রিযিক কেড়েও নেয়া হতে পারে এবং বিপদ নেমে আসতে পারে।২। কোনো অবস্থাতেই যেন আল্লাহ'র স্মরণ থেকে গাফেল না হই।৩। পরবর্তী সময়ে কিছু করার কথা উল্লেখ করলে অবশ্যই ইন শা আল্লাহ বলা উচিৎত।৪। দান করলে সম্পদ কমে যায় না বরং বেড়ে যায়।৫। ভুল বুঝতে পেরে immediately তওবা করা উচিৎ আর আল্লাহ'র কাছে ভালো আশা রাখা উচিৎ।সূরা ক্বালামের সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোর বাংলা অনুবাদ নীচে দেয়া হল। তাফসীর পড়ে দেখার অনুরোধ থাকল। "আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি, যেমন পরীক্ষা করেছি উদ্যানওয়ালাদের, যখন তারা শপথ করেছিল যে, সকালে বাগানের ফল আহরণ করবে, এবং ইন শা আল্লাহ বলল না। অতঃপর আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে বাগানে এক বিপদ এসে পতিত হলো। যখন তারা নিদ্রিত ছিল। ফলে সকাল পর্যন্ত হয়ে গেল ছিন্নবিচ্ছিন্ন তৃণসম। সকালে তারা একে অপরকে ডেকে বলল, তোমরা যদি ফল আহরণ করতে চাও, তবে সকাল সকাল ক্ষেতে চল। অতঃপর তারা চলল ফিসফিস করে কথা বলতে বলতে, আজ যেন কোন মিসকীন ব্যক্তি তোমাদের কাছে বাগানে প্রবেশ করতে না পারে। তারা সকালে লাফিয়ে লাফিয়ে সজোরে রওয়ানা হল। অতঃপর যখন তারা বাগান দেখল, তখন বললঃ আমরা তো পথ ভূলে গেছি। বরং আমরা তো কপালপোড়া, তাদের উত্তম ব্যক্তি বললঃ আমি কি তোমাদেরকে বলিনি? এখনও তোমরা আল্লাহ তা’আলার পবিত্রতা বর্ণনা করছো না কেন? তারা বললঃ আমরা আমাদের পালনকর্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, নিশ্চিতই আমরা সীমালংঘনকারী ছিলাম। অতঃপর তারা একে অপরকে ভৎর্সনা করতে লাগল। তারা বললঃ হায়! দুর্ভোগ আমাদের আমরা ছিলাম সীমাতিক্রমকারী। সম্ভবতঃ আমাদের পালনকর্তা পরিবর্তে এর চাইতে উত্তম বাগান আমাদেরকে দিবেন। আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে আশাবাদী। শাস্তি এভাবেই আসে এবং পরকালের শাস্তি আরও গুরুতর; যদি তারা জানত!" [সূরা ক্বালাম, ৬৮ঃ ১৭-৩৩ ]#কুরআনের_গল্পলেখক :মোঃ মেহেদী হাসানশিক্ষার্থী :আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৬, ২০২৩

অধিকাংশ মানুষ গীবত নামক গুনাহর দ্বারা আক্রান্ত

অধিকাংশ মানুষ গীবত নামক গুনাহর দ্বারা আক্রান্ত

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...


 


ছোট্ট একটা গুনাহ্ যা আমরা সবাই করে থাকি অজান্তে অথবা জেনে শুনে। ছোট্ট এই গুনাহর জন্য যে শাস্তির কথা বর্ণনা আছে কোরআনে ও হাদিসে তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর । গুনাহ্টির নাম হচ্ছে গীবত।

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক গীবত কী? গীবত শব্দের আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা করা , কুৎসা রটানো, পেছনে সমালোচনা করা ,পরচর্চা করা,দোষারোপ করা, কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা। ইসলামী শরীয়তে গীবত হারাম ও কবিরা গুনাহ্। গীবত হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত অবশ্যই পূরণ হতে হবে। ১) প্রথম শর্ত হচ্ছে গীবতকে অবশ্যই সত্য বাক্য হতে হবে। ২) দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে কোন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বলা। ৩) তৃতীয় শর্ত হচ্ছে এমন কোন কথা ওই ব্যক্তির উপস্থিতিতে বললে সে কষ্ট পাবে।


গীবত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে কি বলা হয়েছে এবং গীবতকারীর কি কি শাস্তির বিধান রয়েছে সে সম্পর্কে এবার জেনে নেওয়া যাক। সহীহ মুসলিম থেকে বর্ণিত একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন, 'তোমরা কি জানো গীবত কি?' সাহাবায়ে একরাম বললেন,‌ 'আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন ।' রাসূল বললেন, 'তোমার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কথা বললে, ওই কথাটি সে যদি জানে তার কষ্ট লাগবে, সে চায়না যে তার অনুপস্থিতিতে এই কথাটা কেউ বলুক।' সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, 'ইয়া রাসূল আল্লাহ আমি যেটা বলছি সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলে কি গীবত হবে?' রাসূল বললেন, 'যদি তুমি যে কথা বলছো সেটা যদি সত্য সত্যই তোমার ভাইয়ের ভিতরে থাকে এবং তোমার কথা যদি শতভাগ সত্য হয় তাহলেও গীবত হবে।'

আপনি হালাল টাকা দিয়ে এক বোতল মদ কিনে খেয়েছেন।আপনার কবিরা গুনাহ হবে আপনি যেই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে মাফ চাইবেন,তওবা করবেন,কান্নাকাটি করবেন আল্লাহ তখনই আপনাকে মাফ করে দিবেন । কিন্তু গীবতের ক্ষেত্রে গুনাহ্ ষোলআনা মাফ আল্লাহ করবেন না,যদি না ওই ব্যক্তির কাছে আপনি মাফ চান। গীবতের যেসব শাস্তির কথা কোরআন হাদিসে বর্ণিত আছে সেগুলোর কিছু কিছু আমরা আলোচনা করব। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, ' যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায় তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংসের দুঃসংবাদ।


কোরআনে বর্ণিত আছে, ' দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করবে।... অবশ্যই তারা হুতামাতে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে। তুমি কি জানো হুতামা কী? তা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি যা হৃদয়কে গ্রাস করবে,নিশ্চয়ই বেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।' (সূরা হুমাজা– ১০৪,আয়াত ১-৯)
আবার মহান আল্লাহ তা'য়ালা সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, 'হে ঈমানদারগণ !তোমরা অনুমান থেকে দূরে থাকো। কেননা অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপের কাজ। তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে গীবত করো না।'

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ' রাসূলে কারীম বলেছেন, দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে অর্থাৎ গীবত করবে কেয়ামতের দিন গীবতকারী পচা মাংস ভক্ষণ করতে বাধ্য করা হবে। অতঃপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে।'
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, একদা রাসূল কে সাহাবীরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ' হে আল্লাহর রাসূল! গিবত কি যেনার চেয়েও মারাত্মক? জবাবে তিনি বললেন, ' হ্যাঁ। কারণ, কোন ব্যক্তি যেনার পর তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু গীবতকারীকে যার গীবত করা হয়েছে, তিনি মাফ না করলে আল্লাহ মাফ করবেন না।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা থেকে বর্ণিত , " মহানবী বলেছেন, যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হল, তখন আমাকে তামার নখবিশিষ্ট একদল লোকের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। তারা তাদের নখগুলো দিয়ে স্বীয় মুখমন্ডলে ও বক্ষদেশ আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল ! এরা কারা? জিবরাঈল (আ.) বললেন , এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করতো এবং তাদের মান-সম্মান নষ্ট করতো অর্থাৎ মানুষের গীবত ও চোগলখোরী করতো।" (আবু দাউদ)

গীবতকারীদের জন্য যে ভয়ংকর শাস্তি সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানলাম। এখন কিভাবে এই গীবত থেকে বেঁচে থাকা যায় সে সম্পর্কে কিছু আলোচনা করব। যখন কেউ আপনার সঙ্গে বসে গীবত করে, তখন তাকে থামতে বলুন , আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিন ও গীবতের এসকল ভয়ানক শাস্তি সম্পর্কে অবগত করে সাবধান করুন । আর তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে সেখান থেকে সরে আসুন। মহানবী বলেছেন , 'পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।' (বুখারী ও মুসলিম)

আমরা যারা নিজের অজান্তেই বা জেনেশুনে গীবত করেছি , গীবতের গুনাহ্ থেকে বাঁচার জন্য যে পন্থা হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে তা হল , 'গীবতের কাফফারা হল, তুমি যার গীবত করছো করেছ, তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে । তুমি এভাবে বলবে , ' হে আল্লাহ তুমি আমার ও তার গুনাহ্ মাফ করে দাও।' (বায়হাকি)
গীবত এক মুসলমান ভাইয়ের সাথে অন্য মুসলমান ভাইয়ের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে, দ্বন্দ্ব তৈরি করে। সমাজে গীবত একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।সবাইকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামের বিধান জেনে এই ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে একযোগে কাজ করা উচিত।



লেখক:
মোঃ রাগীব হাসান মুন্না।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ফোন নম্বর : 01968387205
ই-মেইল: ragibmunna123@gmail.com
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

দুশ্চিন্তা, হতাশা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ইসলামীক সমাধান

দুশ্চিন্তা, হতাশা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ইসলামীক সমাধান

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...

ইসলাম

নানাবিধ দুশ্চিন্তা ও হতাশার কারণে মানুষের মাঝে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়।কেউ কেউ সমাধান হিসেবে বেছে নেয় আত্মহত্যা কে আবার কেউ জীবনের স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়ে ফেলে। বিশ্বাস অবিশ্বাস থেকে অশান্তি আর সেখান থেকে জন্ম নেয় বিভিন্ন কৃত্রিম সংকট ও সমস্যা। কেউ কেউ তা মোকাবেলা করতে পারে কেউ কেউ পারে না। সহজ সমাধান খুঁজতে গিয়ে কেউ পথ হারিয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে আর মুমিনগণ মাথা অবনত করে মহান আল্লাহ্ দরবারে। মুসলিম হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ নেই যার চিকিৎসা আল্লাহতায়ালা দেননি। মানসিক চাপসহ নানাবিধ রোগবালাই থেকে উত্তরণে ইসলামি ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর।
অহেতুক দুশ্চিন্তা অনেকটা চক্রের মতো। যত দূর করতে চাইবেন, তত আপনাকে জেঁকে ধরবে। কথায় আছে, ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’ মস্তিষ্ক যত অলস বসে থাকে, তত মাথায় জমা হয় অহেতুক চিন্তা। 
তাই নিজেকে ব্যাস্ত রাখুন, আপনার ভালো লাগে এমন ভালো কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করুন। জীবনে পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় হতাশ হওয়া কিংবা মানসিক চাপ অনুভব করা নতুন কোনো বিষয় নয়। বিপদ-আপদ, চাপ কিংবা না পাওয়ার বেদনা যত বেশিই হোক না কেন কোনো অবস্থায়ই হতাশ হওয়া ঈমানদারের কাজ নয়। বরং সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রাখাই সুস্থ থাকার উপায় এবং বুদ্ধিমানের কাজ।
সাদাত হোসাইনের একটা লাইন আছে, 'যা আমার নয় তা পেয়ে গেলেও আমার নয় আর যা আমার তা না পেলেও আমার কখনো মুক্তিই বন্দিত আবার কখনো কখনো বন্দিত্বই মুক্তি' মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে এটা একটা চমৎকার যুক্তি। যুবক-যুবতীদের মধ্যে প্রেম সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা স্বামী-স্ত্রী মধ্যে সাংসারিক জটিলতা থেকে একজন অন্য জনকে কে ছেড়ে যাওয়া কিংবা কোনো কিছু না পাওয়া থেকে মানুষ হতাশ হয়ে পড়েন।
মানসিক অশান্তি থেকে মুক্ত থাকতে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের বিকল্প নেই। কেননা তিনিই বলেছেন, ‘যে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা তালাক : আয়াত ৩)।
আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা ও পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপনে তার মনোবল বেড়ে যায়। ফলে সে অন্তরে খুঁজে পায় এক অনাবিল সুখ ও পরিতুষ্টি।
সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ায় সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করতে জানে তার জন্য কোনো চিন্তা নেই। হাদিসে এসেছে-রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি)।
মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত দোয়া করাও উচিত। কারণ হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দোয়া বা প্রার্থনা করলে, কোনো কিছু চাইলে মহান আল্লাহ খুশি হন। না করলে বরং অসন্তুষ্ট হন। তবে দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।



 রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে জানি, কোনো বিপদে পড়া লোক যদি তা পড়ে তবে আল্লাহ সে বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে- আমার ভাই (হজরত) ইউনুস (আলাইহিস সালাম)-এর দোয়া। তাহলো, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।’ -তিরমিজি


যে কোনো বিপদ-মুসিবত, পেরেশানির সময় নামাজের মাধ্যমেই প্রকৃত প্রশান্তি লাভ কর যায়। কেননা নামাজের মাধ্যমেই বান্দা মহান আল্লাহর সাহায্য লাভ করে থাকেন। তাই মানসিক প্রশান্তি লাভে নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহতায়ালা বলেন-‘তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার নিকটে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সেসব বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব। (সূরা বাকারা : আয়াত ৪৫)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ)। সাহাবায়ে কেরামও এ আমলে অভ্যস্ত ছিলেন। ছোট থেকে ছোট কোনো বিষয়ের জন্যও তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।


মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে বেশি বেশি ইসতেগফারের বিকল্প নেই। যেসব কারণে মানুষ চাপে পড়ে, তন্মধ্যে অন্যায়-অপরাধ বেশি করা, অর্থ কষ্টে থাকা, সন্তানসন্ততি না থাকা, জীবিকার অপ্রতুলতা,বেকারত্ব সমস্যা, সামাজিক সমস্যা,পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি। এ সবের সমাধানে কুরআনের প্রজ্ঞান হলো ইসতেগফার করা। এ ইসতেগফারেই মানুষ উল্লিখিত সমস্যা থেকে সামাধন খুঁজে পায় বলে ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ।
কুরআনে এসেছে-‘অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সূরা নুহ : আয়াত ১০-১২)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহতায়ালা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। -সুনানে আবু দাউদ

কুরআন তেলাওয়াত মানুষের অন্তরকে প্রফুল্ল করে তোলে হৃদয়কে করে প্রশান্ত। কেননা কুরআন তেলাওয়াত মুমিনের প্রফুল্লতার অনন্য উৎস। শুধু তাই নয়, কুরআন তেলাওয়াতে মুমিনের মনের প্রফুল্লতা ও মানসিক প্রশান্তি বাড়তে থাকে।
কুরআনের আলোয় আলোকিত মানুষ সব দুশ্চিন্তা ও হতাশা থেকে মুক্ত থাকে। আল্লাহ বলেন, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, আল্লাহ তাদের পবিত্র কুরআন দ্বারা শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে তাদেরকে কুফরির অন্ধকার থেকে বের করে ইমানের আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।’ (সূরা মায়িদা : আয়াত ১৫-১৬)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) হতাশা দুশ্চিন্তা দুঃখ-কষ্ট মানসিক চাপ থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে কীভাবে দোয়া করব তা বলে দিয়েছেন।
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি ওয়া দ্বালাইদ-দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে পানাহ চাচ্ছি। -সহিহ বোখারি: ২৮৯৩


দরুদ পড়লে আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি রহমত নাজিল করেন। এ রহমত মানুষকে যাবতীয় মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে। এটি আত্মপ্রশান্তি লাভের সহজ উপায়ও বটে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়া এমন একটি ইবাদত যে, আল্লাহতায়ালা তা কবুল করে নেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার ওপর অনেক বেশি দরুদ পড়তে চাই। আপনি বলে দিন আমি দরুদে কতটুকু সময় দেব? তিনি বললেন, ‘তুমি যতটুকু চাও! আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ সময়?
তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও! যদি আরও বাড়াও তা তোমার জন্য ভালো। আমি বললাম, অর্ধেক সময়? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু সময় পড়তে পার, যদি এর চেয়ে আরও সময় বাড়াও তোমার জন্য ভালো। আমি বললাম, তাহলে সময়ের দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও, যদি আরও বাড়াও তোমার জন্য ভালো। আমি বললাম, সম্পূর্ণ সময় আমি আপনার ওপর দরুদ পড়ায় কাটিয়ে দেব। তখন তিনি বললেন, তাহলে এখন থেকে তোমার পেরেশানি দূর হওয়ার জন্য দরুদই যথেষ্ট এবং তোমার পাপের কাফফারার জন্য দরুদই যথেষ্ট।’ (তিরমিজি)।
 সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ সবকিছুর ক্ষেত্রেই মুমিন তাকদিরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে। আর দুঃখ-হতাশা, অভাব-অনটন, বিপদ-আপদে তাকদিরের ওপর বিশ্বাস থাকলে কোনো মানুষই মানসিক চাপে ভোগে না। তাই মানসিক চাপের সময় মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাকদিরের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় রয়েছে মানসিক প্রশান্তি। আল্লাহ বলেন,আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা মোচন করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ পরিবর্তন করারও কেউ নেই।-সুরা ইউনুস : ১০৭।

মৃত্যুর স্মরণ মানসিক চাপকে একেবারেই মিটিয়ে দেয়। পরকালের কঠিন পরিস্থিতির কথা স্মরণ রাখলে দুনিয়ায় মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ফলে মানুষের দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। তখনই মানুষ থাকে মানসিক চাপমুক্ত। কারণ পরকালের তুলনায় দুনিয়ার বিপদ-আপদ একেবারেই নগণ্য। আল্লাহ বলেন-
যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে। (সূরা নাযিআত : আয়াত ৪৬)।

অনেক ক্ষেত্রেই হতাশা থেকে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। তাই দুনিয়ার জীবনে বিপদ-আপদে হতাশ না হওয়া ইমানদারের কাজ। যেকোনো সময়, যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ আসতে পারে এ মানসিকতা সব সময় পোষণ করা। ফলে তা মানুষকে বিপদে হতাশা থেকে রক্ষা করে মানসিক চাপমুক্ত রাখে। কোরআনে কারিমে এসব বিপদ-আপদ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তার কাছেই ফিরে যাব।’ -সুরা বাকারা : ১৫৫-১৫৬

আজকাল মানসিক চাপে থাকেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুর্গম। কম-বেশি সবাই মানসিক চাপ ও উদ্বেগে থাকে। মনে হয় তা যেন এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই উল্লিখিত আমলগুলো অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
যারা ইমান আনে ও আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই শুধু হৃদয় প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত ২৮)
মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের কে বেশি বেশি হাদিস কোরআন পড়তে হবে এবং আমাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে বেইর করতে হবে। আল্লাহ্ উপর ভরসা রাখতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে যা কিছু হয় আমাদের ভালোর জন্যই হচ্ছে হয়তো জ্ঞান স্বল্পতার জন্য আমরা তা বুঝতে পারছি না। আমরা আমাদের যায়গা থেকে যা করতে পারি তা হলো চেষ্টা ফলাফল দেওয়ার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ্ তায়ালা।চেষ্টা করে যদি আমরা সফল হতে না পারি তাহলে বুঝতে হবে এটা আমার জন্য না কিংবা আমার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রয়েছে।তবে আমার এই চেষ্টার উত্তম প্রতিদান নিশ্চয়ই একদিন পাবো।