মাগরিবের নামাজের পর আমার বড় ভাই অভির সাথে কথা বলার জন্য কী যেন একটা কাজে তার রুমে গিয়ে দেখি একটা ছেলে ভাইয়ের পাশে বসে আছে।
![]() |
ইয়াছিন আরাফাত |
অভি ভাই হচ্ছে আমার এলাকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই। অভি ভাই আমাকে ছেলেটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে বলল - তার নাম সিয়াম, নবম শ্রেণিতে পড়ে। সেই আমাকে সালাম দিল এবং আমিও তাকে সালামের উত্তর দিয়ে আমার পরিচয় দিলাম। পরে জানতে পারলাম সেই আমার আরেক বড় ভাই আবির ভাইয়ের ছাত্র। সিয়ামের বাড়ি কুমিল্লা, কালির বাজার থেকে একটু ভিতরে একটা এলাকায়। সেই কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র। তার বাড়ি থেকে স্কুল বেশি দূরে না মাত্র বিশ টাকা গাড়ি ভাড়া। বাড়িতে স্যার রেখে পড়িয়েছেন এতোদিন তারপরও পড়ালেখার উন্নতি হচ্ছে না দেখে তার বাবা তাকে বাড়ি থেকে দূরে সরিয়ে স্যারের দায়িত্বে পড়ার ব্যবস্থা করেছেন। যাতে সে বাড়ির আরাম আয়েশ ত্যাগ করে, বাবা মায়ের ভালোবাসা থেকে দূরে থাকার কষ্ট জীবনের আসল মানে বুঝতে পারে, সবসময় তো বাবা,মা থাকবেন না সে সময় কে যাতে সে উপলব্দি করতে পারে। সেই জন্য তার বাবা তাকে টাকা খরচ হলেও বাড়ির বাইরে পড়ালেখার ব্যবস্থা করেছেন। যাতে সে বাড়ির বাইরের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়ে সবাই কেমন করে পড়তেছে সে কেমন করে পড়তেছে সেটা বুঝতে পারে।
আবির ভাই অভি ভাইয়ের পাশে বসে মোবাইলে কি যেন কাজ করছিল সেটা রেখে ভাই আমাকে বলল সিয়াম কে যেন দেখে রাখি। আমিও সিয়ামকে অভয় দিয়ে বললাম সমস্যা নাই, আজ থেকে আমি তোমার ভাই এবং বন্ধু সব মনে করতে পার এবং যেকোন কিছু শেয়ার করতে পার। সে দিন সেখান থেকে আমি আমার রুমে চলে আসলাম। এর কিছুদিন পর সে আমার রুমে এসে ছোট করে সালাম দিল এবং বলল সামনের শুক্রবার তাদের বাড়িতে দুপুরে জুম্মার নামাজের পর খাবারের দাওয়াত। আমরা কোটবাড়িতেই থাকি, জুম্মার নামাজ শেষ করে সামান্য নাস্তা নিয়ে আমরা দশজন দুইটা সিএনজি ভাড়া করে তাদের বাড়িতে চলে গেলাম। তার বাবা আমাদের সবাইকে দেখে খুবই খুশি হল এবং বসার জন্য ঘরের ভিতর নিয়ে গিয়ে একটা রুমে সবাইকে বসতে দিল। আমরা সেখানে খাবার টেবিলে সাজানোর আগ পর্যন্ত বসলাম। সবাই একসাথে খাবার খেতে বসলাম। তাদের বাড়ির সামনে বড় পুকুর থেকে আমাদের জন্য বড় বড় মাছ তুলে রান্না করেছে। এছাড়াও মাংস, ডিম সহ দশ থেকে পনেরো ধরনের খাবার রান্না করেছে যেগুলো আমি আগে খেয়েছি কিন্তু সবগুলোর নাম আমার জানা নেই। খাবার শেষে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল পরিবেশন করল। আমরা সেগুলো খেতে খেতে তার বাবা আমাদের সাথে কথা বলতে ছিলেন । তারা তিন ভাই। তার ছোট ভাইয়ের তিন বছরের মেয়ে একটা দেখিয়ে বললে তার বাবা তার ছয় মাস বয়সে মারা গেছে। এরপর থেকে তাদের সব দায়িত্ব তিনি পালন করছেন এবং ভাইদের নিজেদের সম্পত্তিও যার টা তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
গল্প করতে করতে কিছুক্ষণ পর সিয়ামের আম্মু আর দাদি আসল তারা সবাই সিয়াম কে পড়ালেখা যাতে ভালো ভাবে করে এবং দেখে রাখার জন্য অনেক কথা বললেন আমরাও তাদের কথায় সম্মতি জানালাম। সিয়ামের বাবা তাদের বাড়ির আশেপাশে তাদের জায়গা জমিগুলো দেখাতে বের হলেন এবং দেখলাম। তাদের বাড়ির পাশে রাস্তায় নিজ খরচে পাঁচশত মিটারের ড্রেন তৈরি করেছে। যাতে রাস্তায় পানি জমে না থাকে এবং মানুষ সুন্দর ভাবে চলাচল করতে পারে সে জন্যই মূলত নিজ খরচে এই ড্রেন। আরো দেখলাম তার জায়গার ভিতর দিয়ে রাস্তা তৈরির জন্য জায়গা খালি রেখেছেন মানুষ যাতে সহজে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে পারে । তার এমন কার্যক্রম দেখে আমি নিজে খুবই মুগ্ধ হয়েছি। শুধু আমি নয় আমরা সবাই তার কার্যক্রমে মুগ্ধ। আমি মানুষটাকে যতই দেখছি, জানছি ততই জীবনের জন্য নতুন কিছু শিখছি। তাঁর এমন পরিশীলিত, পরিচ্ছন্ন মানসিকতা দেখে আমরা সবাই অবাক হয়েছি একেই সাথে মুগ্ধ হয়েছি। আমি এক উন্নত চিন্তা ধারার মানুষের সাথে মিলিত হয়েছি এবং কিভাবে নিজেকে অন্যের জন্য নিয়োজিত করতে হয়, বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে হয় সেটা শিখেছি।
ইয়াছিন আরাফাত
কবি,গল্পকার ও প্রাবন্ধিক
উপ-দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
মোবাইল :- 01876729147
ইমেইল :- eashina404@gmail.com
0 coment rios:
দৈনিক অনুসন্ধান
সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ দৈনিক অনুসন্ধান, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...