ছোট্ট একটা গুনাহ্ যা আমরা সবাই করে থাকি অজান্তে অথবা জেনে শুনে। ছোট্ট এই গুনাহর জন্য যে শাস্তির কথা বর্ণনা আছে কোরআনে ও হাদিসে তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর । গুনাহ্টির নাম হচ্ছে গীবত।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক গীবত কী? গীবত শব্দের আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা করা , কুৎসা রটানো, পেছনে সমালোচনা করা ,পরচর্চা করা,দোষারোপ করা, কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা। ইসলামী শরীয়তে গীবত হারাম ও কবিরা গুনাহ্। গীবত হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত অবশ্যই পূরণ হতে হবে। ১) প্রথম শর্ত হচ্ছে গীবতকে অবশ্যই সত্য বাক্য হতে হবে। ২) দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে কোন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বলা। ৩) তৃতীয় শর্ত হচ্ছে এমন কোন কথা ওই ব্যক্তির উপস্থিতিতে বললে সে কষ্ট পাবে।
গীবত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে কি বলা হয়েছে এবং গীবতকারীর কি কি শাস্তির বিধান রয়েছে সে সম্পর্কে এবার জেনে নেওয়া যাক। সহীহ মুসলিম থেকে বর্ণিত একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন, 'তোমরা কি জানো গীবত কি?' সাহাবায়ে একরাম বললেন, 'আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন ।' রাসূল বললেন, 'তোমার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কথা বললে, ওই কথাটি সে যদি জানে তার কষ্ট লাগবে, সে চায়না যে তার অনুপস্থিতিতে এই কথাটা কেউ বলুক।' সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, 'ইয়া রাসূল আল্লাহ আমি যেটা বলছি সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলে কি গীবত হবে?' রাসূল বললেন, 'যদি তুমি যে কথা বলছো সেটা যদি সত্য সত্যই তোমার ভাইয়ের ভিতরে থাকে এবং তোমার কথা যদি শতভাগ সত্য হয় তাহলেও গীবত হবে।'
আপনি হালাল টাকা দিয়ে এক বোতল মদ কিনে খেয়েছেন।আপনার কবিরা গুনাহ হবে আপনি যেই মুহূর্তে আল্লাহর কাছে মাফ চাইবেন,তওবা করবেন,কান্নাকাটি করবেন আল্লাহ তখনই আপনাকে মাফ করে দিবেন । কিন্তু গীবতের ক্ষেত্রে গুনাহ্ ষোলআনা মাফ আল্লাহ করবেন না,যদি না ওই ব্যক্তির কাছে আপনি মাফ চান। গীবতের যেসব শাস্তির কথা কোরআন হাদিসে বর্ণিত আছে সেগুলোর কিছু কিছু আমরা আলোচনা করব। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, ' যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায় তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংসের দুঃসংবাদ।
কোরআনে বর্ণিত আছে, ' দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করবে।... অবশ্যই তারা হুতামাতে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে। তুমি কি জানো হুতামা কী? তা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি যা হৃদয়কে গ্রাস করবে,নিশ্চয়ই বেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।' (সূরা হুমাজা– ১০৪,আয়াত ১-৯)
আবার মহান আল্লাহ তা'য়ালা সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, 'হে ঈমানদারগণ !তোমরা অনুমান থেকে দূরে থাকো। কেননা অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপের কাজ। তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে গীবত করো না।'
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ' রাসূলে কারীম বলেছেন, দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে অর্থাৎ গীবত করবে কেয়ামতের দিন গীবতকারী পচা মাংস ভক্ষণ করতে বাধ্য করা হবে। অতঃপর সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে।'
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, একদা রাসূল কে সাহাবীরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ' হে আল্লাহর রাসূল! গিবত কি যেনার চেয়েও মারাত্মক? জবাবে তিনি বললেন, ' হ্যাঁ। কারণ, কোন ব্যক্তি যেনার পর তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। কিন্তু গীবতকারীকে যার গীবত করা হয়েছে, তিনি মাফ না করলে আল্লাহ মাফ করবেন না।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা থেকে বর্ণিত , " মহানবী বলেছেন, যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হল, তখন আমাকে তামার নখবিশিষ্ট একদল লোকের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। তারা তাদের নখগুলো দিয়ে স্বীয় মুখমন্ডলে ও বক্ষদেশ আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল ! এরা কারা? জিবরাঈল (আ.) বললেন , এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করতো এবং তাদের মান-সম্মান নষ্ট করতো অর্থাৎ মানুষের গীবত ও চোগলখোরী করতো।" (আবু দাউদ)
গীবতকারীদের জন্য যে ভয়ংকর শাস্তি সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানলাম। এখন কিভাবে এই গীবত থেকে বেঁচে থাকা যায় সে সম্পর্কে কিছু আলোচনা করব। যখন কেউ আপনার সঙ্গে বসে গীবত করে, তখন তাকে থামতে বলুন , আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিন ও গীবতের এসকল ভয়ানক শাস্তি সম্পর্কে অবগত করে সাবধান করুন । আর তাতে যদি কাজ না হয় তাহলে সেখান থেকে সরে আসুন। মহানবী বলেছেন , 'পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।' (বুখারী ও মুসলিম)
আমরা যারা নিজের অজান্তেই বা জেনেশুনে গীবত করেছি , গীবতের গুনাহ্ থেকে বাঁচার জন্য যে পন্থা হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে তা হল , 'গীবতের কাফফারা হল, তুমি যার গীবত করছো করেছ, তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে । তুমি এভাবে বলবে , ' হে আল্লাহ তুমি আমার ও তার গুনাহ্ মাফ করে দাও।' (বায়হাকি)
গীবত এক মুসলমান ভাইয়ের সাথে অন্য মুসলমান ভাইয়ের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে, দ্বন্দ্ব তৈরি করে। সমাজে গীবত একটি ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।সবাইকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামের বিধান জেনে এই ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে একযোগে কাজ করা উচিত।
লেখক:
মোঃ রাগীব হাসান মুন্না।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ফোন নম্বর : 01968387205
ই-মেইল: ragibmunna123@gmail.com
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
মোঃ রাগীব হাসান মুন্না।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ফোন নম্বর : 01968387205
ই-মেইল: ragibmunna123@gmail.com
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
0 coment rios:
দৈনিক অনুসন্ধান
সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ দৈনিক অনুসন্ধান, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...