শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২৫

১৪ তারিখের রাত, যা "লাইলাতুল বরাত" বা "মুক্তির রাত

পবিত্র শবে বরাত ফজিলত ও করণীয়
দৈনিক অনুসন্ধান ডেস্ক

ইসলামে শবে বরাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ রাত হিসেবে গণ্য হয়। এটি হিজরি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৪ তারিখের রাত, যা "লাইলাতুল বরাত" বা "মুক্তির রাত" নামে পরিচিত। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন যে, এ রাতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির দরজা খুলে দেন।

শবে বরাতের মাহাত্ম্য ও ফজিলত
শবে বরাত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস পাওয়া যায়, যেখানে এই রাতের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
১. আল্লাহর ক্ষমার ঘোষণা
 হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন:
“শাবান মাসের মধ্যরাতে (শবে বরাতে) আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে অবতরণ করেন এবং বনী কালব গোত্রের ভেড়ার পশমের পরিমাণ মানুষের গুনাহ মাফ করেন।” (তিরমিজি, ইবন মাজাহ)
২. নিয়তি নির্ধারণের রাত
 অনেক ইসলামিক পণ্ডিত মনে করেন, শবে বরাতের রাতে এক বছরের রিজিক, জীবন-মৃত্যু ও ভাগ্য নির্ধারিত হয়। কুরআনে বলা হয়েছে:
“সেই রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।” (সূরা আদ-দুখান: ৪)

শবে বরাতে করণীয় আমল
১. নফল নামাজ আদায় করা
 এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া উত্তম। কেউ চাইলে ২, ৪, ৬ বা ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।
তওবা ও ইস্তেগফার
 শবে বরাত ক্ষমার রাত, তাই এ রাতে আল্লাহর কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।


কোরআন তিলাওয়াত করা
 কোরআন তিলাওয়াত করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।


দোয়া ও মোনাজাত
 এই রাতে নিজের, পরিবারের ও সমগ্র উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উত্তম।


রোজা রাখা (১৫ শাবান)
 রাসূল (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন, বিশেষ করে ১৫ শাবান রোজা রাখা সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয়।


কবর জিয়ারত করা
 রাসূল (সা.) এই রাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করেছেন বলে হাদিসে পাওয়া যায়।



শবে বরাত সম্পর্কে ভুল ধারণা
আলোর সাজসজ্জা ও আতশবাজি
 অনেক দেশে শবে বরাত উপলক্ষে আতশবাজি ফোটানো হয়, যা ইসলামের কোথাও উল্লেখ নেই।


বিশেষ খাবারের বাধ্যবাধকতা
 অনেকে মনে করেন, হালুয়া-রুটি বা বিশেষ খাবার রান্না করা বাধ্যতামূলক, কিন্তু এটি ইসলামের কোনো নিয়ম নয়।


রাতভর জাগরণ বাধ্যতামূলক নয়
 শবে বরাতে ইবাদত করা সুন্নত, তবে রাতভর না জেগে যার যতটুকু সম্ভব ইবাদত করা উচিত।


শবে বরাত এক মহিমান্বিত রাত, যেখানে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অগণিত রহমত ও ক্ষমা বর্ষণ করেন। এ রাতে আমাদের উচিত বেশি বেশি ইবাদত, তওবা ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। তবে কোনো ভুল বিশ্বাস বা বিদআত থেকে বিরত থেকে সুন্নতের আলোকে এই রাত পালন করাই প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবে বরাতের ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios:

দৈনিক অনুসন্ধান
সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ দৈনিক অনুসন্ধান, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...