সোমবার, এপ্রিল ০৮, ২০২৪

পরিস্থিতি আরাম আয়েস বিচার করে না

রবিনের দিন যায়

সাঈদুর রহমান লিটন 


এই গরমে আমরা সবাই হাঁপিয়ে উঠেছি। পিপাসায় বুক ফেঁটে যাচ্ছে।ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে করছে না।অথচ 

রবিন বাসে বাসে শসা বিক্রি করছে।কথায় আসে প্রয়োজন আইন মানে না। আসলে পরিস্থিতি আরাম আয়েস বিচার করে না।রবিন পরিস্থিতির স্বিকার। রবিনের ছোট হাতে এই কাজ করা ছাড়া আর কোন পথ নেই।

বড় ছড়ানো একটা প্লেট, তাতে শসা কেটে রেখেছে রবিন।গলায় ঝুলানো একটি ঝুঁড়ি যা মাজা অবধি পড়েছে।ঝুঁড়িতে আস্ত শসা, বরফ, আর ঝাল রেখে দিয়েছে।

এই গরমে বেশ বিক্রি হচ্ছে। লাভ ও ভালো। একটা শসা দুটি বানিয়ে বিক্রি করে। এমন করে এক শসা থেকে দুইটি শসা বানাবে আপনি নিজেও  বুঝতে পারবেন না।আপনি ভাববেন এটিই পুরো একটি শসা।মূলত এটি হাফ শসা। এগুলো সুচারু হাতের দক্ষতা। প্রতি শসা পাঁচ টাকা করে বিক্রি করে। রোজার দিনে বেশি বিক্রি হয় না। তবে অতিরিক্ত গরম পড়ায় বিক্রির সংখ্যা বেড়েছে।স্টীলের চামচের নিচে ছিদ্র করে নিয়েছে। ওটা দিয়েই শসার চামড়া ছুঁলে নেয় রবিন।খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই কাজ টি করতে পারে সে।আসলে মানুষ অভ্যাসের দাস। কাজটি করতে করতে ওর হাত পেকে গিয়েছে। একমিনিটের মধ্যেই চার পাঁচটি শসা ছুঁলে ফেলতে পারে সে।

সেই বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে শসা বিক্রি করা শুরু করেছিল, যা এখনো চলছে। প্রথমে বাসস্ট্যান্ডের এক পাশে একটা ফাঁকা জায়গায় বসে রবিনের মা শুরু করেছিল। রবিন সহায়তা করতো। মাকে বেশিদিন করতে হয়নি। রবিন কয়েক মাসেই বিষয়টি বুঝে নিয়েছে। তাই তার মাকে আর আসতে দেয় না। মা শসা বিক্রি করুক রবিন ও তা চায় না। একটু লজ্জা লজ্জা করে। রবিন মায়ের একমাত্র অন্ধের যষ্টি। রবিন কাজটি শিখে নিয়েছে মা ও খুব খুশি।শসা বিক্রি করে সংসার মোটামুটি ভালোই চলছে। মা, ছেলে মিলে কতই বা খরচ হয়। রবিন মডেল প্রাইমারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস করে। আর চারদিন এই কাজ করে। তিন দিনের বেশি ক্লাস করা সম্ভব না। পরীক্ষা এলে খুব সমস্যায় পড়ে যায় রবিন।  আয় রোজগার করতে পারে না। তাহলে খাবে কি? তাই কিছু কিছু টাকা জমায় যাতে পরীক্ষার সময় কাজ না করলেও বেগ পোহাতে না হয়।


সাঈদুর রহমান লিটন 




আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো স্যার এই গরমে একটা শসা লন।আর একটাই আছে। টাকা দেওয়া লাগবে না স্যার। আমি আপনাকে এমনিতেই দিলাম। পরক্ষণেই জিভে কামড় দিয়ে বলল, মাফ করবেন স্যার। আপনি রোজা আছেন ভুলে গেছি। 
এমনটা আর হবে না। 


আমি বললাম, না না না সমস্যা নাই। তুমি কি আজ ও রোজা আছো?

রবিন কাঁচুমাচু করে বলল, না স্যার এই গরমের মধ্যে থাকতে পারি না।

বললাম, বেচাকেনা কেমন হলো? 

বলল, ভালোই হয়েছে স্যার। আজকের মতো বেচাকেনা শেষ। 

তবে চলো ঐ আম তলায় চলো গল্প করি গিয়ে।

বললাম, এখন বলো, আজ কি পরিমান লাভ করেছো।

রবিন বলল, স্যার আজ দশ কেজি শসা এনেছিলাম।

দশ কেজি শসায় প্রায় একশটি শসা হয়। একেক টি শসায় দুই পিচ করি। প্রতি পিচ পাঁচ টাকা বিক্রি হয় স্যার।

তাহলে দুই শো পিচ শসা ১০০০টাকা বিক্রি হওয়ার কথা। প্রতি কেজি কিনেছি ২৫টাকা করে। দশ কেজির দাম দুই শত পঞ্চাশ টাকা। আর ঝাল ও অন্যান্য কিছু খরচ হয়েছে একশ টাকা। আমার মোট পুঁজি ৩৫০ টাকা। বিক্রি করেছি এখন পর্যন্ত ৯৯০ টাকা। আমি এক পিচ খেয়েছি।আর এক পিচ আছে। আমার প্রতিদিন ঠিক মত বেচতে পারলে ৫০০/৬০০ টাকা 

লাভ হয়। এতে আমার আর আমার মায়ের সংসার মোটামুটি ভালোই চলে যায়।তবে শীতের দিনে বিক্রি ভালো হয় না।তখন ঝাল মুড়ি বিক্রি করি। আর আমার মা চিতই পিঠা বিক্রি করে।  ভালোই বিক্রি হয় স্যার।

বললাম খুব খুশি হলাম শুনে। ঈদে কি নিয়েছ?

নিজের জন্য কিছু নেই নাই স্যার। মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনেছি।মা খুব খুশি হয়েছে। এর আগে কিছু টাকা দেনা ছিলাম তা পরিশোধ করেছি। তাই আর আমার জন্য টাকা হয় নাই। তবে ভালো লেগেছে, মায়ের জন্য কিছু কিনতে পেরেছি এই ভেবে।ঈদের আরও কয়েকদিন বাকি আছে যদি লাভ হয় একটা জামা কেনার ইচ্ছা আছে। না পারলে পুরোন জামাটা ধুয়ে ইস্ত্রি করে ঈদের নামাজ পড়তে যাবো।

রবিনের হিসাব আর অল্প বয়সের এই বোধ বুদ্ধি আমার খুব ভালো লাগলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিলাম। তুমি একদিন বড় হবে বাবা।

আমাকে কদমবুসি করে উঠে মনের আনন্দে, আমায় ভাসাইলিরে, আমায় কাঁদাইলিরে........ গানটি গাইতে

গাইতে চলে গেলো।এই অল্প বয়সে বাস্তবতা মেনে নিয়ে

সংসারের হাল ধরে নেওয়ার দক্ষতা দেখে অবাক হয়ে ভাবতে ভাবতে আমার গন্তব্য পানে ছুটলাম।


গ্রামঃ জগন্নাথদী পোঃ ব্যাসদী গাজনা 
উপজেলাঃ মধুখালী জেলাঃ ফরিদপুর 




শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios:

দৈনিক অনুসন্ধান
সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ দৈনিক অনুসন্ধান, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...