দুঃ
স্বপ্ন ইয়াছিন আরাফাত
![]() |
ইয়াছিন আরাফাত |
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, অনিন্দ্য সুন্দর রূপপুর।
দেশের নাম রূপপুর হওয়ার পেছনে অনেক গুলো কারণ না থাকলেও একটা রহস্য রয়েছে। এই গ্রাম যেমন সুন্দর তেমনি এই গ্রামের মেয়েদের রূপের রহস্য মানুষের অজানা হলেও খ্যাতি রয়েছে দেশ জুড়ে।
এমন সুন্দর মেয়ে পাওয়া মুশকিল সারাদেশ ঘুরে। তাইতো সুন্দরী রমণী বিয়ে করার জন্য দেশের মানুষ রুপপুরের উদ্দেশ্যে দৌড়ে।
তাই দেশের মানুষ এই দেশের নাম দিয়েছে রূপপুর। এই এলাকার মানুষজনও শান্ত, সহজ সরল ও সুন্দর মনের অধিকারী মনে হলেও আসলে এই এলাকার মানুষ জন খুবই হিংসা পরায়ন, কেউ কারো ভালো দেখতে পারে না, সহ্য করতে পারে না, অধিকাংশ মানুষ একজন অন্যজনের সাহায্যে এগিয়ে আসে না, এই এলাকার মানুষ ইসলাম ধর্মানুলম্বী হলেও ইসলাম সম্পর্কে তাদের তেমন ধারণা নাই বললেই চলে। যারা হুজুর তারাই শুধু ইসলাম কে নিয়মিত চর্চা করে। বাকি খুব কম মানুষজন নামাজ, যাকাত, রোজা, হজ পালন করেন। তাকরিমের বাড়ি এই রূপপুর এবং তার বন্ধু গালিবের বাড়ি তার বাড়ি থেকে একটু দূরে। ছোট থেকে কিশোর বয়স পযর্ন্ত দেশ সেরা রূপপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার শুভাতে কেউ কাউকে ভুলে থাকে নি, ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাদের মধ্যে কত মিল আর কত শক্তিশালী বন্ধুত্বের বন্ধন তা প্রকাশ করার মতো না। তবুও তাদের মধ্যে কি যেন অজানা শক্তি বিভেদ সৃষ্টি করছে।
তাকরিম থেকে গালিব সুদর্শন এবং পৈতৃক ভাবে অনেক টাকার মালিক। দুই জন যখন কোনো অনুষ্ঠানে যেত তখন গালিবকে সবাই বেশি সমীহ করত এবং তার বাবা-মা এবং পরিবার পরিজন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত কিন্তু তাকরিম একটু কালো এবং তার পৈতৃক ভাবে টাকা-পয়সার সংকট থাকার কারণে কেউ তার থেকে এতকিছু জিজ্ঞেস করত না। এমনকি প্রয়োজন না হলে কেউ নিজ থেকে তার সাথে কথা বলতে আসত না। ছোট থেকে এইসব বৈষম্য দেখতে দেখতে সে অভ্যস্ত আবার বিরক্তও বটে। কিন্তু এই দেশের মানুষ টাকার প্রতি আসক্ত, ভক্তি, এবং টাকার জন্য মানুষের গোলামী করার যে অভ্যেস যুগ যুগ ধরে চলে আসতেছে তা সেই একা কিভাবে দূর করবে? মানুষের ভিতরের সৌন্দর্যের প্রতি নজর না দিয়ে বাইরের সৌন্দর্যের প্রতি যে আকর্ষণ তা কবে যে দূর হবে? কবে যে সাদা-কালো, ধনী গরিবের বৈষম্য ঘুচবে সেটা নিয়ে সে সবসময়ই ভাবে এবং কিভাবে এই সুন্দর দেশের ন্যায় মানুষের মনও সুন্দর হবে। তবে সেটা কখন হবে? কিভাবে হবে? কার মাধ্যমে হবে? প্রায় সময় তাকরিম এইসব বিষয় নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার মন খারাপ হয়ে যায়। দেশের এতো সুন্দর, বিখ্যাত, টাকার মালিকের মাঝে নিজেকে খুব ছোট মনে করত। তাকরিম এরই মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে উচ্চ শিক্ষার জন্য মিশরে চলে যান। মিশরের আল - আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে তিনি দেশে চলে আসেন। এবং দেশের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। দেশের দরিদ্র মানুষ ইসলামকে ভালো ভাবে না জানলেও ইসলামকে পালন করার যথা সাধ্য চেষ্টা করেন। বিদেশ থেকে পড়ালেখা শেষ করে এসে দেখে ততদিনে গালিব দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বসে আছে। তার বন্ধু তাকরিম বিদেশ থেকে এসে দেশের মানুষের মাঝে ইসলাম প্রচার করতে শুনে সেই অনেক খুশি হলো এবং তার সাথে দেখা করার মনস্থির করল কিন্তু দেশের নানা কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকাই বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি।
গালিব দেশের নানা কাজে দেশের মধ্যে তেমন ঘুরে বেড়াতেন না। দেশের নাগরিকদের অবস্থা সম্পর্কে সেই বেখবর। প্রতিদিনের ন্যায় ঘুমিয়ে পড়লেন এবং গভীর ঘুমে কোথায় যেন হারিয়ে গেল। স্বপ্নের মধ্যে দেখতেছে তার কৈশোরে হত দরিদ্র মানুষের সাথে তার বসবাস। দেশের শিক্ষিত সমাজ তাদের পরিত্যক্ত বস্তুর মতো ফেলে তাদের থেকে অনেক দূরে বসবাস শুরু করেছে যেখানে তাদের যাওয়া নিষেধ। খেয়ে, না খেয়ে জীবন চলছে। এক সময় তাদের খাওয়ার মতো কিছু নেই তখন তাদের সরদার তাদের সকলকে ডেকে সিদ্ধান্ত নিল যে পরবর্তী খাবার না পাওয়া পযর্ন্ত এক পরিবার থেকে একজনকে খাবার হিসেবে দান করতে হবে। এক পরিবার থেকে একজন একজন করে খেতে খেতে এবার তাদের পরিবার থেকে তাকে খাবার হিসেবে দান করেন। যখনই তাকে খাওয়ার জন্য জবাই করা হবে, যখনই তার গলায় ছুরি চালানো হয় সাথে সাথে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়, এবং গলায় হাত দিয়ে বড় করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে, হার্টবিট অনেক দ্রুত ওঠা নামা করতে শুরু করল। এরপর সকাল হওয়া পযর্ন্ত সেই আর ঘুমাতে পারল না। এর কিছুক্ষণ পর ফজরের আযান হলে ওযু করে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে চলে যান।
গালিব এই স্বপ্ন দেখার পর কোথাও কোনো শান্তি পাচ্ছিল না। তার হঠাৎ তার বন্ধু তাকরিমের কথা মনে পড়ল এবং বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করার জন্য বেরিয়ে পড়লেন। সারাদিন বন্ধুর খোঁজে কেটে গেল কোথাও বন্ধুকে পেল না। গালিব এশার নামাজ আদায় করে মসজিদের এক কোণে বসে যখন বন্ধু তাকরিমের কথা চিন্তা করছিলেন এমন সময় হঠাৎ এক লোক তাকে এসে সালাম দিল এবং কেন এভাবে মসজিদের এক কোণে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে জানতে চাইলে সেই বন্ধুর কথা বলে। তখন ঐ লোকটি তার বন্ধু তাকরিমের কাছে নিয়ে যায়। গালিব তার স্বপ্নের কথা বন্ধুকে খোলে বলেন। তখন তার বন্ধু তাকরিম বলে-- তুমি কি দেশের খবরাখবর রাখ? তখন গালিব বলে হ্যাঁ। তাকরিম তখন তাকে বলে দেশের অর্ধেক মানুষ না খেয়ে দিন কাটায়। যারা ধনী তারা দিন দিন আরো ধনী হচ্ছে আর যারা গরিব তারা আরো গরীব হচ্ছে। দেশের মধ্যে সাদা-কালো, ধনী-গরিব বিশালাকার বিভেদ সৃষ্টি করেছে। তোমার ঐ মিডিয়া যেসব খবর প্রচার করে তা তোমাকে খুশি করার জন্য করে। দেশের মানুষ ভালো নেই বন্ধু ভালো নেই। তাই তুমি এই স্বপ্ন দেখেছ বন্ধু।
গালিব: এর সমাধান কী?
তাকরিম:- মানুষের তৈরি শাসন বাদ দিয়ে দেশের মধ্যে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
গালিব:- তারপর কী করতে পারি?
তাকরিম:- দেশের মানুষকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। যেহেতু দেশের মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানে না তাই বয়স্কদের কে রাতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। পড়াই যাতে মনযোগ থাকে এবং নিয়মিত শিখতে আসে সে জন্য আধা ঘন্টা করে পড়াতে হবে। যারা নিয়মিত ক্লাস করবে পড়া হাজিরা দিবে তাদের মাসিক তিন হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে । যারা বর্তমানে পড়ালেখা করতেছে তাদের জন্য পাঠ্য বইয়ে বৈচিত্র্য আনতে হবে। ইসলামীক বইয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞান, ভৌগোল, দর্শন বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার বই ইত্যাদি পাঠ দানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক যাতে আন্তরিকতার সাথে পড়াই সে জন্য উচ্চ সম্মানীর ব্যবস্থা করতে হবে।
গালিব: তা ঠিক আছে। শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হলো। দেশের গরিব মানুষ গুলোর কি হবে?
তাকরিম:- দেশের মানুষ যখন ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যাবে। যখন সবাই এক সাথে নামাজ পড়বে তখন ধনী-গরিব, সাদা-কালো বিভেদ ভুলে যাবে। সমাজ থেকে ভেদাভেদ দূর হয়ে যাবে। ধনীদের থেকে যাকাত আদায় করে গরিবদের মধ্যে বন্টন করার ফলে দেশের মধ্যে আর গরীব থাকবে না। বর্তমানে যেভাবে মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন এটা আর থাকবে না।
গালিব : ঠিক আছে। তবে একটা শর্ত আছে।
তাকরিম : কি শর্ত?
গালিব: আমি প্রথমে দশ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিব। দশ বছর পর যদি দেশের অবস্থার পরিবর্তন না হয়। জন সম্মুখে নিজ হাতে তোর প্রাণ নিব।
তাকরিম: মুহূর্তে রাজি হয়ে গেল। তবে সে একটা শর্ত দিল সেটা হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্বে আগামী দশ বছর তার কথা মতো চলবে।
গালিব:ঠিক আছে।
ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠার দশ বছর পর রুপপুর দেশের মধ্যে সত্যি সত্যি যেন আসমান থেকে শান্তি নেমে আসল। তাকরিমের জীবন রক্ষা পেল। দেশের মধ্যে সবাই শিক্ষিত এবং জ্ঞানে গুণে বিশ্বের মধ্যে রূপপুর এখন সু-প্রসিদ্ধ। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে জ্ঞান চর্চার জন্য মানুষ এখন রূপপুর আসে। গালিব চিন্তা করে দেখল এই স্বপ্ন যদি সেই না দেখত এবং জ্ঞানী বন্ধুর কাছে না বলত। তাহলে এই পরিবর্তন কখনো সম্ভব হতো না। গালিব বুঝতে পারে- সেই দুঃস্বপ্নও ভালো, যদি সেটা মঙ্গল বয়ে আনে।
-
আমি ইয়াছিন আরাফাত
কবি,গল্পকার ও প্রাবন্ধিক
উপ-দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
মোবাইল :- 01876729147
ইমেইল :- eashina404@gmail.com
0 coment rios:
দৈনিক অনুসন্ধান
সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ দৈনিক অনুসন্ধান, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...