শুক্রবার, নভেম্বর ১৭, ২০২৩

গরম একটু বেশি হওয়ায় ইলেক্ট্রিসিটি অনেক আগেই চলে গিয়েছে

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...


গোধূলি 




গরম একটু বেশি হওয়ায় ইলেক্ট্রিসিটি অনেক আগেই চলে গিয়েছে। গোধূলির পূর্ব মূহুর্তের উপভোগ নদীর তীর থেকে দেখা যে কতটা আহ্লাদের তা ভাষায় ব্যাখ্যা করা যাবে না।মেসো কাকার ছোট ছেলে তপ্বনকে দ্বিচক্রযানের পেছনে নিয়ে নদীর পাড়ে বেড়াতে এলুম।এই নদীর অনেক আগে নাকি একটা ঘাট ছিল তাই অনেকে ময়নার ঘাট বলেও এই জায়গাকে চিহ্নিত করে।আবার নদীর উপরে বিস্তৃত এলাকাকে সেই সূত্রে ময়নার ডাংগাও বলে অনেকে। কথিত আছে এই ডাংগায় নাকি চারিদিকে শুধু কাশবন,মোথা ঘাস আর জঙ্গলে ভরপুর ছিল।কাশবনকে কেন্দ্র করে কতরকম শিয়ালের বসবাস ছিল তা দাদাদের মুখে মুখে শোনা যেত।তবে এখন সেই ডাংগা আর ডাংগা নেই, হয়েছে ফসলের সোনার বাড়া।অনাবাদি জমি হয়েছে আবাদি জমিতে রূপায়ন এমন কী বিস্তৃত রাস্তা আজ আইলে পরিণত হয়েছে। এমনি তো নদীর কথা বলেছিলেন রবী ঠাকুর, "বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।" এখনও বুল্লাই নদীতে জল আছে,কিন্তু নদী তার জীবনের গতি হারিয়ে ফেলেছে। তার জীবনের অর্জিত সকল সম্পদ জলাঞ্জলি দিয়েছে। তাই বুল্লাইয়ের বুকে আশ্রিত জেলে সম্প্রদায় সাপের খোলসের ন্যায় তাদের পেশা পরিবর্তন করেছে।এই তো সেদিন বাড়ি ফেরার পথে গজেন চা তার রিকশা করে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল।প্রথমে তো চিন্তে না পেরে বললুম, ভাই এখন চলুন। কিছুক্ষণ পর আশ্চার্যান্বিত হলাম। তিনি বললেন, তুই আদিত্য দা'র ছেলে না?অঙ্ক তোর নাম না?তখন আর আমার বুঝতে দেরি হলো না। লজ্জিত হয়ে বললাম, গজেন চা চলেন খুবেই ক্লান্ত লাগতেছে। এই গজেন চা জেলে সম্প্রদায়ের লোক ছিল। মাছ বিক্রি ছিল  তাদের আয়ের একমাত্র উৎস। যেতে যেতে ওনার সাথে আলাপচারিতায় মজেছিলাম। তখন ওনি বলেছিলাম, নদীতে আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না,সংসারের খরচ বেড়েছে, কিস্তির টাকা সপ্তাহে পনেরো শত দিতে হয় ইত্যাদি। তাছাড়া নদী এখন জমিতে পরিণত হয়েছে,সত্যিই তাই হয়েছে। নদীর কোথাও কোনো পানকৌড়ি,পাতিহাঁস, মাছ রাঙায় দেখা মিললো না।সূর্যাস্ত প্রায় তবুও কিছু সময় ইন্দ্র দার অপেক্ষায় ছিলাম।ইন্দ্র দা আমার বোধ অবধি এই নদীতে টনি জাল ফেলে মাছ ধরতে অভ্যস্ত। নদীর ধারে এসে বললো, মাছ নাই রে ভাই। বিশ্বাসই যখন আমার হলো না, তখন তার খোলাই উপুর করে দেখলাম তিনটা পুটির সাথে একটা শাটি।বলার আর কিছু থাকল না।তপ্বনকে বললুম,পেছনে বস রেডি, স্টার্ট বলে চক্রযানের পেডেল মারতে লাগলাম। মনে হচ্ছে, পেডেল ঘোরার সাথে সাথে মানুষ ও চার পাশের পরিবেশেরও পরিবর্তন হচ্ছে। তবে মানুষ না পরিবেশ আগে পরিবর্তন হচ্ছে,তা ভাবার বিষয়।


দিন পেরিয়ে রাত আসে মানুষ দিন-বদলের জোয়ারে ভাসে।আর সেই জোয়ারের স্রোতে গা ভাসিয়ে নয়, বরং নিজের অবস্থান ঠিক রাখাই হচ্ছে রদবদল অথব সমাজের অগ্রগতি। কে যেন স্যামবা স্যামবা বলে এদিকে আসছে। নক্ষত্রহীন আকাশে অন্ধকারের জন্য তাকে দেখতে পেলুম না।কাছাকাছি এসেই বললো, বড়দা হোয়াটসঅ্যাপ? আমি বললুম এই তো।তোর কি অবস্থা, নয়ন? আই এ্যাম ফাইন।বাট আই সাফার থিংকিং প্রোবলেম। ডোন্ট মাইন্ড ক্যান আই আস্ক এ্যা কইসেন? অফকোর্স। বড়দা, (a+b)2 =a2+2ab+b2 হয় এটা জেনে আমাদের লাভ কি? আমি বললাম,বাহ্! নয়ন দারুণ প্রশ্ন করেছিস। ভাই এর উত্তর আমার কাছেও জানা নেই।আর কোনো দিন জানাও চেষ্টা করিনি,তবে সূত্র মুখস্থ করে গণিতের এই অঙ্কগুলো পরিক্ষার খাতার চুকিয়ে দিতাম । বড়দা,বইয়ে এমন কিছু বিষয় থাকে যা আমি বাস্তবে অনুধাবন করতে পারি না। তাই আমার বই পড়তে ভালো লাগে না। বর্গের সূত্র কি কাজে লাগে, তা জানার জন্য তো তোকে পড়তে হবে,পাগল।সে আর কর্ণপাত করলো না আমার কথা,ওকে ব্রো বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। অন্ধকার যতই ঘনীভুত হয় ততই ওদের ক্ষুৎপিপাসা বাড়তে থাকে।পশ্চাৎ চারণ না করে ওরা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে পড়ে।হোক সেটা ভালো আর মন্দ। এ বয়সটাই তো ওদের।হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খিস্তির শব্দ শুনে পশ্চিম দিকে তাকাতে কিছু সদ্য আলোর ব্যঞ্জন দেখতে পেলুম। এ যেন অস্ত্র বিনা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।মুজে মারো মুজে মারো,ঠিস ঠিস, এনিমি এনিমি, ইস ইস কত হতাশার শব্দ। গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পরে আমার মন ভুলায় রে, গান শুনতে শুনতে ওদের সামনে হাজির হলাম। গানেও ওদের স্নায়ুতন্ত্র কাজ করে না।নিমিষের জন্যেও ৭ ইঞ্চির বাইরে পলক ফেলতে পারে না। এটাই যেন ওদের পণ।ওদের যেন ক্লান্তি আসে না,  এ যেন একান্তই ওদের পরিবেশ। এভাবেই ওরা চলছে…..


নাম : বসুদেব রায়,শিক্ষার্থী  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য বাংলাদেশ তরুন কলাম লেখক ফোরাম রাবি শাখা। 

ই-মেইল :basu3dev3@gmail.com



শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios:

দৈনিক অনুসন্ধান
সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ দৈনিক অনুসন্ধান, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...