ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেশ বিদেশের মানুষের অনেক স্মৃতি বহন করে চলছে। চিকিৎসক রুগী (attendance) রুগীর সাথের লোক সবার কতো সুখ দুঃখের স্মৃতি বহন করে চলছে এই হাসপাতাল।বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ & হাসপাতাল । হাসপাতালের পশ্চিম পাশে মেডিকেল কলেজ এবং মেডিকেল কলেজএর উত্তর পাশে নতুন বিল্ডিং উত্তর দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বা জাতীয় শহীদ মিনার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৯৪৬ সালের ১০ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়।যা বর্তমানে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে হতে স্নাতক পর্যায়ে পাঁচ বছর মেয়াদি এমবিবিএস ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
১৯০৪ সালে নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের সচিবালয় হিসেবে ভবনটি স্থাপিত হয়। নতুন প্রদেশের স্বল্পস্থায়ী মেয়াদে এটি সচিবালয় হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ১৯২১ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার যাত্রা শুরু করে, ভবনটির কর্তৃত্ব পায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই সময় বিশাল এই ভবনের একপাশে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার, একাংশে ছিল ছাত্রদের ডরমেটরি এবং বাকি অংশ কলা অনুষদের প্রশাসনিক শাখা হিসেবে ব্যবহৃত হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তখন পুরো ভবনটিতেই স্থাপিত হয় ‘আমেরিকান বেস হাসপাতাল’। তবে যুদ্ধ শেষে মার্কিনীরা চলে গেলেও ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি থেকে যায়।
বৃহৎ এ হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ২৩০০। তবে এটি প্রতিদিন প্রায় ৩৫০০ রোগিকে অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও বিশেষায়িত ক্লিনিকগুলোতে অনেক রোগী দৈনিকসেবা নিয়ে থাকে।
ব্যবস্থাপনা
হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন হাসপাতালের পরিচালক। উপ পরিচালক ও সহকারী পরিচালকগণ এ ব্যাপারে তার সহায়ক হন। হাসপাতালের পরামর্শক, আবাসিক চিকিৎসক, রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, মেডিকেল অফিসার, ইন্টার্নসহ, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ও কর্মচারীগণ পরিচালকের নিকট দায়বদ্ধ থাকেন। এছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক, সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকবৃন্দ সংশ্লিষ্ট বিভাগের শীর্ষ আধিকারিক হিসেবে চিকিৎসা কার্যক্রমের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকেন।
প্রথম থেকে একই কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকলেও ১৯৭৫ সালে প্রশাসনিক সুবিধার্থে কলেজ ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ পৃথকীকরণ করা হয়। কলেজের দায়িত্বভার অর্পিত হয় অধ্যক্ষের উপর এবং হাসপাতাল পরিচালনার ভার পরিচালকের উপর। তবে উভয় কর্তৃপক্ষই বিভিন্ন কার্যক্রমে একে অপরকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করে শিক্ষাদান ও চিকিৎসা সেবাদানের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে থাকে।
একটি মাত্র ভবন নিয়ে পথচলা শুরু করা ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিজস্ব প্রায় ২৫ একর জমিতে বর্তমানে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা- কলেজ ভবন, অডিটোরিয়াম, পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্র, ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল, বার্ন ইউনিট ইত্যাদি। শুরুতে হাসপাতাল ভবনেই প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস হলেও ১৯৫৫ সালে একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য বর্তমান কলেজ ভবনটি নির্মিত হয়। এতে বেসিক সাবজেক্টগুলির জন্য স্থান বরাদ্দের পাশাপাশি আরও কিছু স্থাপনা রয়েছে। ২৮টি বিভিন্ন বিভাগ এবং হাসপাতালে ৪২টি ওয়ার্ডে ২৩৪ জন ডাক্তার, ২০০ জন ইন্টার্নি ডাক্তার, ৫৬০ জন নার্স এবং ১১০০ জন অন্যান্য কর্মচারী নিয়োজিত আছেন রোগীদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে। প্রায় ২৩০০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০০ জনকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এ হাসপাতালকে ৫০০০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ।
স্মৃতিময় ঢামেক
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ষাটের দশকের বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় রাজনীতিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। ১৯৭১এর মুক্তিযুদ্ধে এই কলেজ থেকে পাশ করা চিকিৎসক, তৎকালীন ছাত্র, কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।ডাক্তাররা এরশাদ সরকার ঘোষিত গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধে বিএমএর ব্যানারে ১৯৯০এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বরের কথা বন্ধু মোশারফ আর আমি ডামেকহা'র ডক্টরস্ কেন্টিন থেকে রাতের খাবার শেষ করে ফিরছিলাম নতুন বিল্ডিং এর নিচতলায় আত্মীয়স্বজনের চিৎকার কারণ কিছুখন পূর্বে তাদের রুগী শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। এমন ঘটনা প্রতিদিনই কম বেশি ঘটে অনেক হাসপাতালে রাখেনি শেষ আশ্বাস ডামেকহা এখান থেকে অনেক রুগী সুস্থ হয়ে উঠে। ডামেকহার প্রতিটি নার্স,ডক্টর, শিক্ষার্থী, কর্মচারী অনেক পরিশ্রমের সাথে যত্ন নিয়ে রুগীর সেবা দিয়ে থাকে।আপনি নিজ চোখে না দেখলে বুঝতে পারবেন না তারা কি পরিমাণ পরিশ্রম করে। তবে বেশির ভাগ অনিয়ম গুলো ঘটে বহিরাগতের দ্বারা ভিতরে তাদের সহযোগী থাকতে পারে। কিন্তু এই বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। একই দিনে রাজধানীর রমনা এলাকায় ‘জ্বালানি মন্ত্রণালয়’ লেখা একটি গাড়ির ধাক্কায় এক মোটর সাইকেলচালকের পা ভেঙে গেছে। তাঁর নাম ইকরামুল রাব্বি (২৭)। আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলের আরোহী হেলাল উদ্দিন (২৮)। রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে হেয়ার রোডে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে আসা হয়। ইমার্জেন্সি বিভাগে প্রতি রাতে অনেক এক্সিডেন্ট —এর পেশেন্ট আসে যারা সন্ত্রাসী হামলা কিংবা বিভিন্ন দূর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
এই ঢামেকহাতে আমাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে বগুড়ার জিহাদ, সাইফুর,অনামিকা, কুমিল্লার : মোশাররফ, কামরুল, ঢাকার : হাশমত,আনোয়ার, রাজিব,ফারহানা,মোরাদ,নাদিয়া কক্সবাজারের আজহার, সালাম ভাই সহ অনেকে ডিউটির ফাঁকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ঘুরাঘুরি, কখনো সবাই মিলে ছুটে যেতাম লালবাগ, আহসান মঞ্জিল,কার্জন হল,টিএসসি,লালবাগের কেল্লা এখনো মনে হয় সেদিনের কথা সবাই সময়েে পরিক্রমায় পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে দ্বায়িত্ব বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই চলে গেছে নিজেদের দেশে কেউ কেউ চেম্বার করছে। আবার কেউ নিজেই হাসপাতালের মালিক তবে এখনো নিয়মিত ডিউটি করে যাচ্ছে আনোয়ার, মোশাররফ, হাশমত সবার জন্যই শুভকামনা মানব সেবায় মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিবে এটাই প্রত্যাশা।
আয়েশা মেম ডাঃ শারমিন সুলতান, আঞ্জুমান মেম দের কথা মনে পড়ে যারা আমাদের কে যত্ন সহকারে শিখিয়েছেন চিকিৎসার জটিল সব বিষয়। তাছাড়া ডাঃ মামুন স্যার,দেবাশীষ স্যার, রাজিব স্যার সহ সবাইকেই মনে পড়ে কারণ তাদের অবদান আমরা কেউ কখনো অস্বীকার করতে পারবো না। সবার ভালোর জন্য সব সময় দোয়া করি তারা যেন ভালো থাকেন।
ঢামেকহার দৃষ্টিনন্দন ভবনটি সময়ের সঙ্গে পুরুনো হয়ে গেছে, পাশাপাশি হাসপাতালে দিন দিন রোগী বাড়ায় সেই রেল স্লিপারের ওপরেই নির্মিত হয়েছে সম্প্রসারিত ভবন। রোগীদের নিরাপদ আশ্রয় হওয়া ১২০ বছরের পুরনো এই ভবনটি এখন নিজেই আর নিরাপদ নেই। বর্তমানে মূল ভবনে হাসপাতালের পরিচালকের অফিস। এই অফিসের নিচেই ছিল ব্রিটিশদের অস্ত্র কারখানা। সম্প্রতি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মূল ভবন পরিদর্শনে অগ্নিকান্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ডাক্তার, নার্স, কর্মচারীরা বলেন, এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি যেকোন সময় জগন্নাথ হলের মতো ভেঙে পড়ে বিভীষিকাময় অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ৫ হাজার বেডের নতুন ভবনটি নির্মাণ করতে ৫ থেকে ৭ বছর সময় লাগবে। এই সময়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য পুরাতন ভবনের যে অংশ মেরামত করার অযোগ্য সেটা ভেঙে ফেলা হবে। আর যেটা মেরামত করার যোগ্য সেটা সংস্কার করা হবে।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ৫০০০ বেডের অত্যাধুনিক হাসপাতাল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সব ধরনের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, নিউরো সার্জারি, অর্থপেডিক, হৃদরোগ, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টসহ সাব-স্পেশালাইজড সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে এখানে। সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত ও নতুন ভবন নির্মাণ করতে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিবকে (উন্নয়ন) আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। হাসপাতালের মূল ভবন, ডিএসসি-২ ভবনের সামনে ডক্টরস হোস্টেলের রক্ষণাবেক্ষণ করাসহ তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছেন।
স্থাপত্যবিদ ইকবাল হাবিব ইত্তেফাককে বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শত বছরের পুরনো যে ভবন রয়েছে তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এখন আপনি চাইলেই এটা ভেঙে ফেলার সুযোগ নাই। ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে হবে। এই ভবনটি ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত। এই ভবনটির নকশা ঠিক রেখে সংরক্ষণ করতে হবে। আমার বিশ্বাস এই কাজ করার মত মানুষ আমাদের আছে। তারা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন। ভবনটিকে কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় সেটা ভেবে দেখবেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, হাসপাতাল ভবন ও কলেজ বিল্ডিং ভাঙা হবে এটা ঠিক। তবে, তার আগে, বকশি বাজারে ডা, ফজলে রাব্বী হলের মাঠে দুইটি অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এরপর পুরানো ভবন ভাঙার কার্যক্রম শুরু হবে।
0 coment rios:
দৈনিক অনুসন্ধান
সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ দৈনিক অনুসন্ধান, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...