ফিচার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ফিচার লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, এপ্রিল ০৮, ২০২৪

পড়াশোনা না করেও এখন বিকাশের একজন স্টার এজেন্ট ও নগদের সফল উদ্যোক্তা তাহিরপুরের ফয়সাল

পড়াশোনা না করেও এখন বিকাশের একজন স্টার এজেন্ট ও নগদের সফল উদ্যোক্তা তাহিরপুরের ফয়সাল

ফয়সাল আহমেদের জন্ম সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশ ঘেষা হলহলিয়া গ্রামে। সেই মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশ ঘেষা জয়বাংলা বাজারেই তিনি এখন কর্মরত। মোবাইল ব্যাংকিং যেমনঃ বিকাশ এজেন্ট, নগদ এজেন্ট, রকেট এজেন্ট, ফ্লেক্সি লোড এবং পাশাপাশি শাড়ি,লুঙ্গি, থ্রি-পিস সহ বাচ্চাদের যাবতীয় পোশাকের একটি বস্র বিতান রয়েছে তার। সম্প্রতি তিনি 'বিকাশ এজেন্ট' ব্যবসায়ী হিসাবে 'স্টার এজেন্ট' এবং 'নগদ এজেন্ট' ব্যবসায়ী হিসেবে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে সনদ অর্জন করেন। কিন্তু তার এই অর্জনে শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত জীবনের এই সময়টাতে রয়েছে নানা রকমের হৃদয় স্পর্শকাতর গল্প। যেই গল্প পড়ে বর্তমান সময়ের তরুণরা অনুপ্রেরণা পাবে, পাবে অনেক দিকনির্দেশনা। শিক্ষণীয় সেই গল্প শোনাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজ ওয়েসি। 

পড়াশোনা না করেও এখন বিকাশের একজন স্টার এজেন্ট ও নগদের সফল উদ্যোক্তা তাহিরপুরের ফয়সাল 



বাবার স্বপ্ন ছিলো আলেম হিসেবে গড়ে তোলা। সেজন্য আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলেন। পড়াশোনায় আমি অনেক ভালো ছিলাম। আমার হাতের লেখাও অনেক সুন্দর ছিলো। সেজন্য ক্লাসের মধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়মিত আমার প্রসংশা করতেন। সবসময় বলতেন আমি অনেক বড় আলেম হতে পারবো। বার্ষিক পরীক্ষায়ও আমি সর্বদা প্রথম স্থান অধিকার করে মেধার পরিচয় দিতাম। পড়াশোনাও আমার অনেক ভালো লাগতো। এজন্য আমি নিয়মিত ক্লাসে যেতাম। সকাল বিকাল নিয়মিত পড়াশোনা করতাম। ক্লাসের পড়া সবসময় পরিপূর্ণভাবেই শিখতাম। এজন্য শিক্ষকও নিয়মিত আমার প্রসংশা করতেন। আর আমারও পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ বাড়তে থাকে। 

আমার পরিবার ছিলো অনেক বড় পরিবার। পরিবারে আমরা পাঁচ ভাই এবং পাঁচ বোন। বড় ভাই পরিবার থেকে আলাদা ছিলো। আর বড় বোনেরও বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। সেজন্য বাবা-মা সহ আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিলো দশ জন। আমার বাবা একজন কৃষক এবং মা একজন গৃহিণী। সেজন্য আমাদের পরিবারে আয়ের কোন উৎস ছিল না। কারণ আমি সহ আমার সকল ভাই বোন পড়াশোনায় ছিলাম। জমি থেকে আমরা যে ফসল পেতাম তা দিয়ে আমাদের ভরণপোষণ হলেও আর্থিক কোন আয় ছিল না। সেজন্য পরিবারকে অনেক কষ্টে দিন অতিবাহিত করতে হয়েছে। তিনবেলা ভাতের অভাব না হলেও তরকারির অভাব ছিলো বড্ড বেশি। এজন্য বড় ভাই আব্দুল কাদিরকেও পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছিল। কিন্তু  সাংসারিক অভাব ছিলো এক মানবেতর জীবনযাপনের মতো। বাবাও তখন বয়সে প্রায় বৃদ্ধ। তাই কাজের মানুষ নেই বললেই চলতো। 

এমন পরিস্থিতিে বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন আমরা বাকি তিন ভাইয়ের মধ্যে একজনকে পড়াশোনা ছাড়তে হবে। পড়াশোনা ছাড়তে বলার কারণ আয় রোজগার করা। কারণ পরিবারের সদস্যরা তখন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করছিলো। তাই বাবা যখন আমাকে বললেন পড়াশোনা ছাড়ার জন্য আমি বাবার কথার অবাধ্য হতে পারলাম না। আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিলাম। কারণ আমি নিজ চোখে পারিবারিক অবস্থা দেখছিলাম। তখন আমি পঞ্চম শ্রেণিতে ছিলাম। তারপর পড়াশোনা ছেড়ে আমি কাজ করে আয় রোজগার করার জন্য মনোযোগ দিলাম। শুরুতে আমি যেহেতু বয়সে ছোট ছিলাম তাই আমি সঙ্গী খোঁজে নিলাম। যার কাজের প্রতি নেশা আছে। সেই সঙ্গীকে নিয়ে গ্রামের পাশের নদীতে বর্ষাকালে মাছ ধরে, সেই মাছ বাজারে নিয়ে বিক্রি করতাম। মাছ বিক্রির টাকা এনে মায়ের কাছে দিতাম। সেই টাকা দিয়ে তরিতরকারি কেনা হতো। এভাবেই যাত্রাটা শুরু। 


কিন্তু যখন বর্ষার মৌসুম শেষ হয়ে গেলো তখন মাছ ধরার সুযোগও বন্ধ হয়ে গেলো। তাই আমি ভিন্ন কাজের সন্ধান করি। পড়াশোনার প্রতি যেমন আমার অনীহা ছিল না, কাজের প্রতিও আমি সেরকমই ছিলাম। যেহেতু আমার বাড়ি মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে তাই সেখানে কাজেরও অভাব ছিলো না। কারণ ভারত থেকে বাংলাদেশে কয়লা আমদানি করা হতো এখান দিয়ে। যাঁরা কয়লা আমদানিকারক ছিলো তাদের বিভিন্ন কর্মী প্রয়োজন হতো। কারণ ট্রাকে করে কয়লা আসতো বাংলাদেশে। সেই কয়লা আবার নৌকাযোগে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জয়গায় রপ্তানি করা হতো। সেজন্য কয়লা আমদানি রপ্তানি ইত্যাদি কাজের জন্য বিভিন্ন কর্মী প্রয়োজন হতো। আমার বন্ধুদের সাথে আমিও সেই কাজে অংশ নিতাম। ৩০০ টাকার বিনিময়ে সারাদিন হাজিরা দিতাম। সারাদিন হাজিরা দেওয়ার জন্য ভোর পাঁচটায় বের হতে হতো। আবার বাসায় আসতে সন্ধ্যা সাতটা, আটটা বা কখনো কখনো রাত নয়টাও বেজে যেতো। এভাবেই চললো কিছুকাল। 

আবার কোনো কোনো দিন এই তিনশত টাকার বিনিময়ে সারাদিন হাজিরা দেওয়ার কাজটিও পেতাম না। তখন বিভিন্ন কয়লা আমদানিকারক মালিকের ডিপোর পাশে গিয়ে কাজ খোঁজতাম। কখনো পেতাম কখনো পেতাম না। মাঝে মাঝে ভারতের বর্ডার অতিক্রম করে ভারতে গিয়েও কাজ করেছিলাম। এই কাজটি করতাম যেদিন বর্ডার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকতো সেদিন। এভাবে কাজ পেলে করতাম। না পেলে ফিরে আসতাম। বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কখনো কাজ করার জন্য অবহেলা করিনি। কাজ না পেলেও হাল ছাড়িনি। পরের দিন আবার বের হতাম। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই কাজ পেতাম। দিনশেষে যে টাকা পেতাম তা এনে মায়ের কাছে দিতাম। 


পারিবারিক পরিস্থিতি আর আমার কাজে যাওয়া, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় তখন আমাকে ধীরে ধীরে ভাবাতে শুরু করলো। আমি তখন জীবনের মানে বুঝতে শুরু করলাম। বুঝতে শুরু করলাম জীবন কোনো পুষ্পশয্যা নয়। জীবন এক যুদ্ধের নাম। এই যুদ্ধ সেই যুদ্ধ নয়। এই যুদ্ধ হলো কাজ করে পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটানো। তাই যত কষ্টই হতো প্রতিদিন কিছু না কিছু টাকা উপার্জন করার চেষ্টা করতাম। এভাবে কাজ করে উপার্জন করে আল্লাহর রহমতে কিছু আয় হলে বাবা আমাকে একটা ফল বিক্রির দোকান করে দেয়। প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাদাঘাট বাজার। সেখান থেকে পায়ে হেটে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার ফল যেমন আপেল, আঙ্গুর ইত্যাদি কিনে এনে জয় বাংলা বাজারে আমি বিক্রি করতাম। এভাবে ফল বিক্রি করে অনেক দিন পার করি। এই জয়বাংলা বাজারে আবার আমার বড় ভাইয়ের (যিনি পরিবার থেকে আলাদা ছিলো) একটি বস্র বিতান ছিলো। হঠাৎ তার দোকানে একজন কর্মচারী প্রয়োজন হলো। সেই সুবাদে তিনি আমাকে নিতে আগ্রহী হয়ে বাবার কাছে বললেন। বাবাও রাজি হলো। তখন থেকে আমার জীবন একটা নতুন মাত্রা নিতে শুরু করে। 

আমি প্রথমে বস্র বিতান পরিচালনা করার জন্য সকল নিয়ম কানুন শিখে নেই। বেচা কেনা সম্পর্কেও শিখতে শুরু করি। এই শিক্ষাটা আমার জন্য একটা প্রশিক্ষণের মতো ছিলো। যেখানে প্রশিক্ষক আমার বড় ভাই। তবে এটা শিখতে আমার খুব বেশি সময় লাগে নি। কারণ আমি প্রথমত কাজের প্রতি অবহেলা করিনি। দ্বিতীয়তো ফলের ব্যবসা থেকে হিসাবের ব্যাপারেও ছিলাম সতর্ক। কাস্টমারের সাথে দরকষাকষিও করতে পারি ভালো। সবকিছু মিলিয়ে ছয় মাসের মধ্যে ট্রেইনিং শেষ হয়ে যায়। এই ট্রেইনিংয়ে শুধু পোশাক কেনা বেচা করাই শিখিনি, শিখেছি বিকাশ,নগদ,রকেট এজেন্ট পরিচালনা করাটাও। আমার বড় ভাই তখন আমাকে বাৎসরিক বেতন ভুক্ত হিসাবে চুক্তি করে ফেলেন। বাবার সাথে করা সেই চুক্তি অনুযায়ী শুরুতে আমি ৩৬০০০ টাকা বেতনে বাৎসরিক কর্মচারী ছিলাম। চার বছর পর তা ৫০০০০ টাকায় উন্নীত হয়। এভাবে ছয় বছর কর্মচারী হিসেবে কাজ করার পর আমার মনে হলো, এখন আমি নিজেই একটা বিজনেস পরিচালনা করতে সক্ষম হবো।  


তারপর বাবা মায়ের সাথে পরামর্শ করে বড় ভাইয়ের দোকানের পাশেই একটা বস্র বিতান দেই। যেখানে শাড়ি, লুঙ্গি, শার্ট, প্যান্ট, থ্রি পিস সহ বাচ্চাদের যাবতীয় পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি বিকাশ এজেন্ট, নগদ এজেন্ট, রকেট এজেন্টে লেনদেন শুরু করি। ধীরে ধীরে আমার আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। আমি নিজেই ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকি। এভাবে চার বছর ব্যবসা পরিচালনা করার পর 'বিকাশ' থেকে আমাকে উপজেলার অন্যতম 'স্টার এজেন্ট' বা 'এজেন্ট তারকা' এবং 'নগদ' থেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে মনোনীত করে সনদ প্রদান করেছেন। এতে আমি অনেক আনন্দিত। বিকাশ ও নগদে প্রতি আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। মহান আল্লাহ'র নিকট আমি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। কারণ এখন আমি আমার বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হয়ছি। আল্লাহর রহমতে আমার পরিবারে এখন আর কোনো অভাবের অভিযোগ নেই। আমি এখন ভাই বোনদের পড়াশোনার খরচ বহন করতে সক্ষম হয়েছি। আল্লাহর রহমতে এখন আমি সুখী। কারণ এখন আমি একজন উদ্যোক্তা। 

তরুণ যারা পড়াশোনা করেনি কিন্তু এখনো বেকার তাদের উদ্দেশ্যে আপনার কী বক্তব্য? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি সেই যেই হোক বসে না থেকে কাজে লেগে পড়া। কাজ করতে করতেই অভিজ্ঞতা অর্জন হবে। কাজে নেমে পড়লেই নতুন কাজের সন্ধান পাওয়া যায়। তাই অবহেলা না করে কাজের খোঁজে ঘর থেকে বের হতে হবে। কাজের কোনো অভাব নেই। তাই অবহেলায় জীবন অতিবাহিত না করে কাজে নেমে পড়লে একদিন না একদিন সফলতা আসবেই, আসবে। 

লেখকঃ আজিজ ওয়েসি 
শিক্ষার্থীঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইলঃ azizquadery1234@gmail.com

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৬, ২০২৩

দুশ্চিন্তা, হতাশা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ইসলামীক সমাধান

দুশ্চিন্তা, হতাশা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ইসলামীক সমাধান

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...

ইসলাম

নানাবিধ দুশ্চিন্তা ও হতাশার কারণে মানুষের মাঝে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়।কেউ কেউ সমাধান হিসেবে বেছে নেয় আত্মহত্যা কে আবার কেউ জীবনের স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়ে ফেলে। বিশ্বাস অবিশ্বাস থেকে অশান্তি আর সেখান থেকে জন্ম নেয় বিভিন্ন কৃত্রিম সংকট ও সমস্যা। কেউ কেউ তা মোকাবেলা করতে পারে কেউ কেউ পারে না। সহজ সমাধান খুঁজতে গিয়ে কেউ পথ হারিয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে আর মুমিনগণ মাথা অবনত করে মহান আল্লাহ্ দরবারে। মুসলিম হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ নেই যার চিকিৎসা আল্লাহতায়ালা দেননি। মানসিক চাপসহ নানাবিধ রোগবালাই থেকে উত্তরণে ইসলামি ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর।
অহেতুক দুশ্চিন্তা অনেকটা চক্রের মতো। যত দূর করতে চাইবেন, তত আপনাকে জেঁকে ধরবে। কথায় আছে, ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’ মস্তিষ্ক যত অলস বসে থাকে, তত মাথায় জমা হয় অহেতুক চিন্তা। 
তাই নিজেকে ব্যাস্ত রাখুন, আপনার ভালো লাগে এমন ভালো কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করুন। জীবনে পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় হতাশ হওয়া কিংবা মানসিক চাপ অনুভব করা নতুন কোনো বিষয় নয়। বিপদ-আপদ, চাপ কিংবা না পাওয়ার বেদনা যত বেশিই হোক না কেন কোনো অবস্থায়ই হতাশ হওয়া ঈমানদারের কাজ নয়। বরং সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রাখাই সুস্থ থাকার উপায় এবং বুদ্ধিমানের কাজ।
সাদাত হোসাইনের একটা লাইন আছে, 'যা আমার নয় তা পেয়ে গেলেও আমার নয় আর যা আমার তা না পেলেও আমার কখনো মুক্তিই বন্দিত আবার কখনো কখনো বন্দিত্বই মুক্তি' মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে এটা একটা চমৎকার যুক্তি। যুবক-যুবতীদের মধ্যে প্রেম সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা স্বামী-স্ত্রী মধ্যে সাংসারিক জটিলতা থেকে একজন অন্য জনকে কে ছেড়ে যাওয়া কিংবা কোনো কিছু না পাওয়া থেকে মানুষ হতাশ হয়ে পড়েন।
মানসিক অশান্তি থেকে মুক্ত থাকতে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের বিকল্প নেই। কেননা তিনিই বলেছেন, ‘যে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা তালাক : আয়াত ৩)।
আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা ও পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপনে তার মনোবল বেড়ে যায়। ফলে সে অন্তরে খুঁজে পায় এক অনাবিল সুখ ও পরিতুষ্টি।
সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়ায় সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করতে জানে তার জন্য কোনো চিন্তা নেই। হাদিসে এসেছে-রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি)।
মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত দোয়া করাও উচিত। কারণ হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দোয়া বা প্রার্থনা করলে, কোনো কিছু চাইলে মহান আল্লাহ খুশি হন। না করলে বরং অসন্তুষ্ট হন। তবে দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।



 রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে জানি, কোনো বিপদে পড়া লোক যদি তা পড়ে তবে আল্লাহ সে বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে- আমার ভাই (হজরত) ইউনুস (আলাইহিস সালাম)-এর দোয়া। তাহলো, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।’ -তিরমিজি


যে কোনো বিপদ-মুসিবত, পেরেশানির সময় নামাজের মাধ্যমেই প্রকৃত প্রশান্তি লাভ কর যায়। কেননা নামাজের মাধ্যমেই বান্দা মহান আল্লাহর সাহায্য লাভ করে থাকেন। তাই মানসিক প্রশান্তি লাভে নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহতায়ালা বলেন-‘তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার নিকটে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সেসব বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব। (সূরা বাকারা : আয়াত ৪৫)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ)। সাহাবায়ে কেরামও এ আমলে অভ্যস্ত ছিলেন। ছোট থেকে ছোট কোনো বিষয়ের জন্যও তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।


মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে বেশি বেশি ইসতেগফারের বিকল্প নেই। যেসব কারণে মানুষ চাপে পড়ে, তন্মধ্যে অন্যায়-অপরাধ বেশি করা, অর্থ কষ্টে থাকা, সন্তানসন্ততি না থাকা, জীবিকার অপ্রতুলতা,বেকারত্ব সমস্যা, সামাজিক সমস্যা,পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি। এ সবের সমাধানে কুরআনের প্রজ্ঞান হলো ইসতেগফার করা। এ ইসতেগফারেই মানুষ উল্লিখিত সমস্যা থেকে সামাধন খুঁজে পায় বলে ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ।
কুরআনে এসেছে-‘অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সূরা নুহ : আয়াত ১০-১২)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহতায়ালা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। -সুনানে আবু দাউদ

কুরআন তেলাওয়াত মানুষের অন্তরকে প্রফুল্ল করে তোলে হৃদয়কে করে প্রশান্ত। কেননা কুরআন তেলাওয়াত মুমিনের প্রফুল্লতার অনন্য উৎস। শুধু তাই নয়, কুরআন তেলাওয়াতে মুমিনের মনের প্রফুল্লতা ও মানসিক প্রশান্তি বাড়তে থাকে।
কুরআনের আলোয় আলোকিত মানুষ সব দুশ্চিন্তা ও হতাশা থেকে মুক্ত থাকে। আল্লাহ বলেন, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, আল্লাহ তাদের পবিত্র কুরআন দ্বারা শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে তাদেরকে কুফরির অন্ধকার থেকে বের করে ইমানের আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।’ (সূরা মায়িদা : আয়াত ১৫-১৬)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) হতাশা দুশ্চিন্তা দুঃখ-কষ্ট মানসিক চাপ থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে কীভাবে দোয়া করব তা বলে দিয়েছেন।
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি ওয়া দ্বালাইদ-দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে পানাহ চাচ্ছি। -সহিহ বোখারি: ২৮৯৩


দরুদ পড়লে আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি রহমত নাজিল করেন। এ রহমত মানুষকে যাবতীয় মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে। এটি আত্মপ্রশান্তি লাভের সহজ উপায়ও বটে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়া এমন একটি ইবাদত যে, আল্লাহতায়ালা তা কবুল করে নেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার ওপর অনেক বেশি দরুদ পড়তে চাই। আপনি বলে দিন আমি দরুদে কতটুকু সময় দেব? তিনি বললেন, ‘তুমি যতটুকু চাও! আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ সময়?
তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও! যদি আরও বাড়াও তা তোমার জন্য ভালো। আমি বললাম, অর্ধেক সময়? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু সময় পড়তে পার, যদি এর চেয়ে আরও সময় বাড়াও তোমার জন্য ভালো। আমি বললাম, তাহলে সময়ের দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও, যদি আরও বাড়াও তোমার জন্য ভালো। আমি বললাম, সম্পূর্ণ সময় আমি আপনার ওপর দরুদ পড়ায় কাটিয়ে দেব। তখন তিনি বললেন, তাহলে এখন থেকে তোমার পেরেশানি দূর হওয়ার জন্য দরুদই যথেষ্ট এবং তোমার পাপের কাফফারার জন্য দরুদই যথেষ্ট।’ (তিরমিজি)।
 সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ সবকিছুর ক্ষেত্রেই মুমিন তাকদিরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে। আর দুঃখ-হতাশা, অভাব-অনটন, বিপদ-আপদে তাকদিরের ওপর বিশ্বাস থাকলে কোনো মানুষই মানসিক চাপে ভোগে না। তাই মানসিক চাপের সময় মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাকদিরের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় রয়েছে মানসিক প্রশান্তি। আল্লাহ বলেন,আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা মোচন করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তার অনুগ্রহ পরিবর্তন করারও কেউ নেই।-সুরা ইউনুস : ১০৭।

মৃত্যুর স্মরণ মানসিক চাপকে একেবারেই মিটিয়ে দেয়। পরকালের কঠিন পরিস্থিতির কথা স্মরণ রাখলে দুনিয়ায় মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ফলে মানুষের দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। তখনই মানুষ থাকে মানসিক চাপমুক্ত। কারণ পরকালের তুলনায় দুনিয়ার বিপদ-আপদ একেবারেই নগণ্য। আল্লাহ বলেন-
যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে। (সূরা নাযিআত : আয়াত ৪৬)।

অনেক ক্ষেত্রেই হতাশা থেকে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। তাই দুনিয়ার জীবনে বিপদ-আপদে হতাশ না হওয়া ইমানদারের কাজ। যেকোনো সময়, যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ আসতে পারে এ মানসিকতা সব সময় পোষণ করা। ফলে তা মানুষকে বিপদে হতাশা থেকে রক্ষা করে মানসিক চাপমুক্ত রাখে। কোরআনে কারিমে এসব বিপদ-আপদ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তার কাছেই ফিরে যাব।’ -সুরা বাকারা : ১৫৫-১৫৬

আজকাল মানসিক চাপে থাকেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুর্গম। কম-বেশি সবাই মানসিক চাপ ও উদ্বেগে থাকে। মনে হয় তা যেন এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই উল্লিখিত আমলগুলো অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
যারা ইমান আনে ও আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই শুধু হৃদয় প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ, আয়াত ২৮)
মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের কে বেশি বেশি হাদিস কোরআন পড়তে হবে এবং আমাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে বেইর করতে হবে। আল্লাহ্ উপর ভরসা রাখতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে যা কিছু হয় আমাদের ভালোর জন্যই হচ্ছে হয়তো জ্ঞান স্বল্পতার জন্য আমরা তা বুঝতে পারছি না। আমরা আমাদের যায়গা থেকে যা করতে পারি তা হলো চেষ্টা ফলাফল দেওয়ার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ্ তায়ালা।চেষ্টা করে যদি আমরা সফল হতে না পারি তাহলে বুঝতে হবে এটা আমার জন্য না কিংবা আমার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রয়েছে।তবে আমার এই চেষ্টার উত্তম প্রতিদান নিশ্চয়ই একদিন পাবো।

সোমবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৩

চিকিৎসকের পরামর্শ মানতে হবে সবাইকে গ্যাস্ট্রিক থেকে রক্ষা পেতে

চিকিৎসকের পরামর্শ মানতে হবে সবাইকে গ্যাস্ট্রিক থেকে রক্ষা পেতে

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক...

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বর্তমান সময়ের সবার একটা কমন সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। দিন দিন মানুষের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়েই চলছে। খাবারে ভেজাল, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ও ধূমপানসহ নানা কারণে গ্যাস-গ্যাস্ট্রিক প্রায় ঘরোয়া রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাম থেকে শহরে সকল মানুষেরই কম বেশি গ্যাস্ট্রিক রয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসাবেও দেশে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। যার অধিকাংশই বিক্রি হয় থাকে কোনো ধরনের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন ডেকে আনছে মারাত্মক ক্ষতি। আমরা তাহলে প্রথমে জেনে নেই গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি কি? 
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি হল পাকস্থলীতে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং অবশেষে ক্ষতের সৃষ্টি করা। সাধারণত অতিরিক্ত ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারে এটি বেশি হতে পারে। কারণ এসব খাবারকে হজম করতে অতিরিক্ত এসিডের দরকার হয়; ফলে অনেক হাইড্রোজেন ক্ষরণ হয়ে ক্লোরিনের সঙ্গে মিলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি করে।এ এসিডের পরিমাণ বেশি হলে আমাদের পাকস্থলীর চামড়া ভেদ করে এবং আলসার (ঘা) তৈরি হয়, তখন আমরা ব্যথা অনুভব করি। 
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, গ্যাস্ট্রিক হলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- খিদে কম পায়, পেটে গ্যাস হয়, বুক জ্বালা করে, পেটের মাঝখানে চিনচিনে ব্যথা হতে পারে। বুক ও পেটে চাপ অনুভূত হয়, হজমে অসুবিধা হয় এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির বারবার বমিও হতে পারে। লক্ষণীয় বিষয় বাইরের খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে দিন দিন তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরেও গড়ে উঠেছে বড় বড় রেস্তোরাঁ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে যে ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে তাতে খাবার গ্রহণে আমাদের অবশ্যই আরও সচেতন থাকতে হবে। এদিকে অতিমাত্রায় ফাস্টফুডে আসক্তির কারণে যে গ্যাস্টিক সমস্যা বাড়ছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
Towfiq Sultan (DMCH)




দীর্ঘসময় যাবৎ খাবারের অনিয়ম এবং অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবারের কারণে অনেককেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। যারা এই সমস্যায় ভোগেন তাদের খাবারে সামান্য একটু অনিয়ম হলেই শুরু হয়ে যায় গ্যাস্ট্রিকের মারাত্মক ব্যথা। অনেক সময় অতিরিক্ত অনিয়মে এই সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাই সৃষ্টি করে আলসার। তাই শুরুতেই সতর্ক হওয়া জরুরি। জেনে নিন গ্যাস্ট্রিক সমস্যার চটজলদি দারুণ কিছু প্রাকৃতিক সমাধান। সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন এই সমাধানগুলো দূর করবে সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা।




১) হলুদের পাতা
হলুদের পাতা কুচি করে কেটে প্রতিদিন দুধের সাথে মিশিয়ে পান করে নিন। এতে করে পেটে ব্যথা এবং গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে।

২) বেকিং সোডা
বেকিং সোডা পেটের অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিক রেহাই পেতে সাহায্য করে। ১ গ্লাস পানিতে ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করুন।ভালো ফলাফল পাবেন।

৩) কাঁচা আলুর রস
আলু স্লাইস করে কেটে ওপরে কিছুটা লবণ ছিটিয়ে রেখে দিন পুরো রাত।
পরের দিন এই আলুর রস বের করে পান করুন। দিনে ৩ বার আধা কাপ আলুর রস পান করলে খুব ভালো ফলাফল পাবেন।
৪) দারুচিনি
দারুচিনি খুব সহজেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান করতে কার্যকরী। দারুচিনি অ্যাসিডিটি সমস্যা কমায়, গ্যাস দূর করে। দারুচিনি প্রদাহ কমায় এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করতেও বিশেষভাবে কার্যকরী। ভালো ফলাফল পেতে কফি, দুধ অথবা ওটমিলের সাথে দারুচিনি গুঁড়ো যোগ করে নিন।
৫) পেয়ারা পাতা
২ কাপ পানিতে পেয়ারা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। পানি ১ কাপ পরিমাণে হলে ছেঁকে পান করুন। এতেও বেশ ভালো উপকার হবে।

৬) আদা
আদার ওষধি গুণ গ্যাসের সমস্যা, বুক জ্বালাপোড়া, হজমে সমস্যা এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা দ্রুত সমাধানে সক্ষম। কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা আদার রস বের করে পান করতে পারেন কিংবা আদা পানিতে ফুটিয়ে চায়ের মতো পান করে নিলেও সমস্যার সমাধান হবে।

৭) আপেল সাইডার ভিনেগার
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিক রেহাই পেতে এর জুড়ি নেই। ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করে ফেলুন।


আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক গ্যাস্ট্রিক থেকে বাঁচার উপায় কি?

১। ঘুমানোর কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন
২। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে দুপুর ও রাতের খাবার খাবেন।
৩। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমান। নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
৪। একবারে বেশি পরিমাণে না খেয়ে অল্প করে বারবার খান।
৫। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পেট খারাপ বা বমির ওষুধ কিনে খাবেন না।
৬। দিনে কিংবা রাতে খাওয়ার পরপরই অনেকে শুয়ে পড়তে পছন্দ করেন। এটা না করে কিছুক্ষণ আস্তে আস্তে হাঁটাচলা করতে পারেন অথবা বসে থাকতে পারেন সোজা হয়ে। অন্তত ৩০ মিনিট পর ঘুমাতে যান।
৭। ধূমপান ও মদ্যপানকে এড়িয়ে চলুন।
৮। অতিরিক্ত তেল ও মসলা দেয়া খাবার খাবেন না। বাইরের খাবার না খেয়ে বাড়ির তৈরি খাবার খান। তাজা খাবার খান, স্টোর করা বা ফ্রোজেন ফুড কম খাবেন।
৯। খাওয়ার পরপরই অনেক বেশি পানি পান করার প্রবণতা বাদ দিন। ভাত খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর পানি পান করুন।
১০। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা অনেক সময় এসব সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। তাই মানসিক চাপ নেবেন না।

১১। তৈলাক্ত খাবার বাদ দিতে চেষ্টা করুন। মাংস, ডিম, বিরিয়ানি, মোগলাই, চায়নিজ খাবার যা-ই খান না কেন, তা দুপুরের মেন্যুতে অন্তর্ভুক্ত করুন। রাতের খাবারটি যেন হালকা হয়। শাকসবজি, ছোট মাছ এসব দিয়ে রাতের মেন্যু সাজান।


[প্রিয় পাঠক, আপনিও দৈনিক অনুসন্ধান অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন- welftion.help@gmail.com -এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]