পাঠকের লেখা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পাঠকের লেখা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

কক্সবাজারের আনন্দ ভ্রমণ

কক্সবাজারের আনন্দ ভ্রমণ

ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার ভ্রমণ:ছুঁয়ে এলাম সমুদ্র জল!

অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখি ত্বহা বাবু আর তুবা মনি মহা উৎসাহে টিভি দেখছে। পিঠাপিঠি ভাই বোন ওরা। ত্বহাবাবুর বয়স পাঁচ বছরে পড়েছে, নীলফামারিতে আমাদের কর্মস্থলের পাশে একটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি ওকে। আর তুবা মনির বয়স হলো একুশ মাস। ত্বহা শুধু প্রশ্ন করে, প্রচুর কৌতূহল সব বিষয়ে। অস্পষ্ট কিছু শব্দ সেও উচ্চারণ করতে পারে।

ডিসকভারি চ্যানেলে তখন উন্মুক্ত সমুদ্রের মধ্যে কয়েটা ডলফিন সাঁতার কাটছিল। ঢেউ গুলো সমুদ্রের পাড়ে এসে আছড়ে পড়তে দেখে ত্বহা বাবু বলে উঠলো বাবা সত্যিকারের সমুদ্র কেমন হয়? আমি বললাম সমুদ্র এমনই হয় বাবা। তুমি দেখবে? ওর মা কথার প্রায় মাঝখানেই বলে উঠলো চলো এবার সমুদ্রের পাড়ে ঈদ করি আমরা। কি ত্বহা বাবু! বাবাকে বলো এবার ঈদের ছুটিতে আমাদের কক্সবাজার নিয়ে যেতে ! তা হলেই তো তুমি সত্যিকারের সমুদ্র দেখতে পাবে। কথাটা অবশ্য মন্দ বলো নি, এবার ঈদে তাহলে কক্সবাজারই ঘুরে আসা যাক বেশ জোরেশোরেই বলে উঠলাম আমি। আমরা স্বামী স্ত্রী দু জনই কর্মজীবী। চাকরি জীবন যেমন হয় আরকি, অফিস থেকে বাসা আর বাসা থেকে অফিস। একদম গৎ বাঁধা সবকিছু । ভাবলাম এর মধ্যে একটু ঘোরাঘুরির সুযোগ পেলে সেটা আমাদের নেয়াই উচিত। বাচ্চাদের সাথে নিয়ে সুন্দর কিছু সময় তো উপভোগ করা যাবে অন্তত! সব মিলিয়ে তখনই সিদ্ধান্ত হলো ঈদ এবার কক্সবাজার করব আমরা।
সবাই মিলে ঈদ ঘোরাঘুরি 

আমার ছোট মামাতো বোন কক্সবাজার জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স। কল দিলাম বোন জামাইকে,উনি তো মহা খুশি। বললেন বড়ভাই আমরা বেশ কবছর ধরে এখানে আত্মীয় স্বজন ছাড়াই ঈদ করি। আপনারা আসলে তো খুবই ভাল লাগবে। বোনকে বললাম আসছি তাহলে এবার সামুদ্রিক মাছ আর শুটকি কিনে রেডি থাকো তোমরা!


নীলফামারী থেকে কক্সবাজার অনেক দূরের পথ। তাছাড়া রোজা রেখে বাচ্চাদের নিয়ে বাস বা ট্রেনে ভ্রমণ কষ্টদায়ক হবে। তার ওপর আবার ঈদের সময় টিকেট পাওয়ার ঝক্কিঝামেলা বেশি। তাই উড়ো জাহাজে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছিলাম। পরের দিন খোঁজ নিয়ে জানলাম, সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজার সরাসরি সপ্তাহে দুটি করে ফ্লাইট আছে। দেরি না করে বুকিং করে ফেললাম আমাদের যাওয়া আসার টিকেট।


 

নির্ধারিত দিনে সৈয়দপুর বিমান বন্দরে পৌঁছে দেখি আমাদের ফ্লাইট পিছিয়েছে ঘন্টা খানেক।৷ কী আর করা, বসে থেকে রানওয়েতে উড়ো জাহাজের ওঠা নামা দেখে আর বাবুদের সাথে নিয়ে পায়চারি করতে থাকলাম। অবশেষে আসলো আমাদের সময়। সৈয়দপুরের রানওয়ে যখন আমরা ছাড়লাম তখন বেলা সাড়ে বারোটা। নীল আকাশ আর সাদা মেঘের মধ্য দিয়ে ঘন্টা দেড়েক ওড়ার পরে নিচে হঠাৎই সমুদ্রের দেখা মিললো। সাথে এয়ার হোস্টেজের সুমিষ্ট কন্ঠ, আমরা কক্সবাজার বিমান বন্দরে নামতে চলেছি এই বার্তা।
আমরা তাহলে চলেই এলাম কক্সবাজার!
কি আনন্দ আমরা সমুদ্রে 
 

বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে একদম সোজা বোনের বাসায়। তখন সময় দুপুর আড়াইটার মত। ত্বহা বিমান থেকে নামা অব্দি নাহলেও দশবার বলেছে, বাবা সমুদ্র কই,বাবা বাবা.. সমুদ্রে চলো...!!


বাসায় পৌঁছার পর ওরা দুজন আমার বোনের মেয়ে তাসনিয়ার সাথে খেলতে শুরু করল। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বোনকে বুঝিয়ে বললাম যে আমরা একটা হোটেলে উঠব। কারণ বাসায় থেকে ভ্রমণের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যাবে না। অনেক কষ্টে বোনকে রাজি করানো গেল।

 বোনজামাই শহিদুল ভাই সহ গেলাম হোটেল খুঁজতে। আমরা রুম পেলাম লাবনী আর সুগন্ধা পয়েন্টের মাঝামাঝি রাস্তার পাশের একটি হোটেলে। লাগেজ পত্র নিয়ে রুমে উঠার পর সবাই মিলে সুগন্ধা পয়েন্টে গেলাম সমুদ্র দেখতে। একে তো রোজার মাস তার ওপরে আবহাওয়া গরম, শরীর বেশ ক্লান্ত লাগছিল। তবে বিচের কাছাকাছি এসে বেশ ভালই লাগল। রোজার জন্যই হয়ত সমুদ্র পাড়ে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় নেই এখন।

সমুদ্র সৈকতে বালুর প্রাসাদ তৈরির শুরু 


কি বিপুল জলরাশি! ছোট-বড় ঢেউগুলো এসে আছড়ে পড়ছে পরিষ্কার ভেজা বালুর ওপর। ত্বহা প্রথম বার সমুদ্র দেখে বেশ অবাক হয়েছে। আর তুবা মনি ভয় পাচ্ছে কিছুটা। তবে ওদের মায়ের চোখেমুখে বেশ উচ্ছ্বাস দেখলাম। সব মিলিয়ে প্রথম বার সমুদ্র দেখাটা বেশ উপভোগ করেছিলাম আমরা।

আসল ঘোরাঘুরি শুরু হয়েছিল ঈদের দিন থেকে। নামাজ পড়লাম কক্সবাজার স্টেডিয়ামের সামনের প্রধান ঈদ গাহে। তারপর হোটেল থেকে বোনের বাসায় গিয়ে সবাই মিলে সেমাই মিষ্টিমুখ করার পর সিদ্ধান্ত হলো মহেশ খালী দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার। 


স্পিডবোট যখন আমাদের মহেশ খালী নামিয়ে দিল তখন সরু প্যাসেজের মত লম্বা জেটিটা চোখে পড়ল। আশেপাশে কেউড়া, গোল পাতার মত ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। এটা কি সুন্দরবন নাকি?বলে উঠলাম আমি, বোনজামাই বলল না ভাই তবে কিছুটা সুন্দর বনের ফিল নিয়ে নেন, এক ভ্রমনে দুই ফ্লেভার আরকি! মুচকি হেসে সামনের দিকে পা বাড়ালাম আমরা। মহেশখালীতে শুটকি আর লবণের ঘের দেখলাম। ঝাউবন,আর বেশ কিছু মন্দিরও দেখেছিলাম। বিকেলের দিকে বোনের বাসায় ফিরে আরেকপ্রস্থ খাওয়া দাওয়া হলো। রুপচাঁদা মাছ, চিংড়ি মাছ, শুটকি ভর্তা আরো দুই এক রকম তরকারি করেছে আমার বোন। খেতে খেতে পরদিন কোথায় যাওয়া যায় সেই বিষয়ে আলাপও করা হলো।বোনজামাই বলল হিম ছড়ি মেরিন ড্রাইভ এবং ইনানি বিচ ঘুরতে হবে, ঐদিকটায় মিনি বান্দরবন, রেজুখাল আর এই দিকে ফিশওয়ার্ল্ড এই কয়টা জিনিস আপনাদের দেখতেই হবে বড়ভাই।আমি বললাম হু তাহলে কালকে চলেন হিমছড়ির ঝর্ণা দেখে আসি।

মাছটাতো বেশ স্বাদ হয়েছে সালমা,তা আর কি কি মাছ খেয়েছ তোমরা এখানকার ? খেতে খেতে বোনকে বললাম আমি। আরো অনেক মাছ আছে ভাই তোমরা আরো কটা দিন থাকো তাহলে একে একে সব মাছ খেয়ে যেতে পারবে। এই কয় দিনের সেহেরি ইফতার সব আমার বোন পাঠিয়েছে,অর্থাৎ আমরা থেকেছি হোটেলে কিন্তু প্রতি বেলার খাবারই পাঠিয়েছে ওরা। বোনগুলো এমনই হয় হয়ত।

সমুদ্র সৈকতে বালু দিয়ে আঁকাআকি করছে দুইটি শিশু 


সেদিন সন্ধ্যায় সুগন্ধা পয়েন্টের রাস্তায় আমরা মাছ ভাজা খেতে গেলাম। এখানে ছোট ছোট ভ্যানে করে কাঁকড়া, অক্টোপাস, লবস্টার, চিংড়ি ফ্রাই, বারবিকিউ করে বিক্রি হয় রাস্তার পাশে। কাঁকড়া, স্কুইড ,লবস্টার আর কয়েকটা মাছ খেয়েছি আমি। ত্বহা বাবু আর তুবামনি কাঁকড়া খেয়েছে তবে ওদের মা শুধু স্কুইডের ফ্রাই খেয়েছে দু একটা। কাঁকড়া দেখে নাকি ওর ভয় ভয় লাগে!


ঈদের পরের দিন সকালে আমরা বের হলাম হিম ছড়ি পাহাড় আর ঝর্ণা দেখতে। অটোতে করে যখন মেরিন ড্রাইভ রোডে ঢুকলাম তখন মনে হলো এটাই কক্সবাজারের সবচেয়ে সুন্দরতম স্থান। রাস্তার একপাশে সমুদ্র অন্য পাশে পাহাড়। কিছু কিছু স্থানে তো সমুদ্র একদম রাস্তার কাছাকাছি। বালুর ওপরে রাখা সাম্পান, জলের ঢেউ, বাতাস, ঝাউ গাছ, পাহাড় আর গাছ পালার ঝোপঝাড় মিলিয়ে অসাধারণ প্রাকৃতিক শোভার মধ্য দিয়ে আমরা পৌঁছুলাম রেজুখাল সংলগ্ন কক্সবাজারের মিনি বান্দরবানে। আমরা পাহাড়ে উঠতে শুরু করলাম। ত্বহা বাবু উপরে উঠে ভালই মজা পেয়েছে বলে মনে হলো। একটু পর পর বলছে বাবা পাহাল পাহাল,ও মাঝে মাঝে "র"এর উচ্চারণ করতে পারে না। তাই পাহাড় কে পাহাল শোনাচ্ছিল। আমরা কিছুক্ষণ বসে ছবি তুলে চলে আসলাম হিম ছড়ি। টিকেট কেটে ঢুকে হাতের ডান পাশে পড়বে ঝর্ণা। বেশ কিছু লোক সমাগম হয়েছে দেখলাম। সব সময়েই নাকি এমন পর্যটক থাকেন এখানে।ঝর্ণা খুব বেশি একটা বড় না, তবে দেখতে সুন্দর আছে। ঝর্ণার পানি হাতে নিয়ে তুবা মনির গালে ছিটিয়ে মজা করলাম কিছুক্ষণ। এবার পাহাড়ে ওঠার পালা, সবাই পাহাড়ের গায়ে লম্ব ভাবে দেয়া সিড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। অনেকগুলো সিঁড়ি ভেঙে যখন আমরা পাহাড় চূড়ায় পোঁছালাম তখন প্রায় বিকেল। সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। ওপর থেকে সমুদ্রের জলে সূর্যের আলোর অপূর্ব খেলা দেখলাম আমরা। সবাই বেশ হাঁপিয়ে উঠেছিল। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিচে নেমে পড়লাম।

বাবা মেয়ের ঈদ 

ইনানি সৈকতটা বেশ নিরিবিলি, তার একটু সামনে গেলেই একটি কাঠের সেতু ও ঝাউবন দেখা মিললো । আমার বোনটা বলল ভাইয়া এই জায়গায় যাই চলেন। ঝাউবন, কাঠের সেতু তার বিপরীতে বড়সড় একটা পাহাড়। নির্মল বাতাসে এখানে মন হারিয়ে যাওয়ার মত আবহাওয়া। ত্বহা তুবা, আর আমার বোনের মেয়ে তাসনিয়া নিচে নেমে ঝাউ বনের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি আর খুনসুটি করল কিছুক্ষণ। আমরা বসে দেখছিলাম ওদের।

ঝাউবন থেকে ফেরার পথে দেখলাম প্যারাসেলিং। ঐতো প্যারাশুট দড়ি বেঁধে উড়া উড়ি আরকি। বাচ্চারা প্যারাসেলিং দেখে বেশ মজা পেল মনে হলো, অবশ্য আমাদেরও ভালই লাগছিল দেখতে।

পরের দিন যাওয়া হয়েছিল ফিশ ওয়ার্ল্ড দেখতে। কত বিচিত্র ধরনের মাছ যে আছে ওখানে না গেলে বুঝা যাবে না। কাঁচের একুরিয়াম পুরো ঘর জুড়ে তার ভেতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে জীবন্ত হাঙ্গর, কচ্ছপ আর নানান সামুদ্রিক জীব। বেশ মনোমুগ্ধকর লেগেছে এই ফিশ ওয়াল্ড।

পাহাড় সমুদ্রের মাঝে ওদের দুষ্টুমি 

সমুদ্র পাড় হতে ঈদ মোবারক 

ঘুরাঘুরি মাঝে সমুদ্র সৈকতে সবাই এক রংয়ের পোশাকে বেশ কিছু ছবি তুলেছিলাম আমরা। আর সৈকতের সামনে দোকানগুলো থেকে কেনা হয়েছিল আচার, শামুক ও মুক্তার মালা। শুটকি কিনেছিলাম কিছুটা,মহেশ খালি থেকে কিনেছিলাম পাহাড়ি পোশাক আর চন্দন। 

পরের দিন সকালে আমাদের ফিরতি ফ্লাইট। রাতে তাই শেষ বারের মত সমুদ্র দেখতে গেলাম আমরা। সমুদ্র সৈকতে ত্বহা বাবুকে নিয়ে ঘোড়ায় উঠলাম আর ও ঘুড়ি কিনে চাইলে ওকে ঘুড়ি কিনে দেয়া হলো। শেষ দিন তাই সৈকতে মধ্যে বসে বালু দিয়ে রাজপ্রাসাদ বানানোর অনুমতিও মিলল আরেকবার।


দুপুর বারোটা নাগাদ বোন দের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা পোঁছালাম কক্সবাজার বিমান বন্দরে। এবার অবশ্য যথা সময়েই এলো আমাদের বিমান। ওঠার আগে এই কয় দিনে দেখা সকল স্মৃতিগুলো অকপটে আরেকবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। কালকে থেকেই আবার নিয়মিত জীবন শুরু তবে এই ভ্রমণের স্মৃতি আমাদের থেকে যাবে আজীবন। মাঝে মাঝে সময় পেলে এমন ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ব। বেশ সতেজ শরীর ও মন নিয়ে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে উড়ে চললাম আমরা।
-নুরুল্লাহ কামিল।
wushukamil621@gmail.com
মুঠোফোন :01778117147



শনিবার, এপ্রিল ০৬, ২০২৪

 পৃথিবীতে আগমন করার পর বাবা মা আদর করে নাম রেখেছিল শিলা।

পৃথিবীতে আগমন করার পর বাবা মা আদর করে নাম রেখেছিল শিলা।

   অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত 




পৃথিবীতে আগমন করার পর বাবা মা আদর করে নাম রেখেছিল শিলা। আমরা চার বোন এক ভাই। আমার বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। মা গৃহিণী এবং আমার বাবা ব্যবসা করতেন। কিছুদিন হলো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে স্বর্গে পাড়ি জমিয়েছেন। বাবা বেঁচে থাকতে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিল আমার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে। ফুফাতো ভাই ইতালি থাকেন। এখনো দেশে আসেন নি। আমার ফুফির স্বামী অনেকদিন হলো মারা গেMছে। তাই ছেলের বিয়ের দায়িত্ব সব তার ওপরেই বর্তায়। তাই তিনি ছেলের জন্য এবং নিজের সুবিধার জন্য ভাইয়ের মেয়েকে ছেলের জন্য ঠিক করে রাখলেন। আত্মীয় স্বজনের মধ্যে জানা জানিও হলো বেশ। ছেলে ইতালি থেকে মাঝে মধ্যে কল দিয়ে আমার সাথে কথা বলত। সেই নিয়মিত কথা না বললেও নিয়মিত কথা বলার, মেসেজ করার মানুষের সংখ্যা আমার কম নেই । তবে পড়ালেখা, পারিবারিক চাপ ও ধর্মীয় রীতি নীতি মেনে চলার ফলে এখন পযর্ন্ত কারো সাথেই প্রেম হয়ে ওঠে নি । আমার ফুফাতো ভাই রায়হান মাঝে মধ্যে যা কথা বলত তার মধ্যে কোনো রোমান্টিক আলাপ আলোচনা হতো না। দুষ্টুমিও করত না।  যা কথা হতো সব গতানুগতিক কথা । তাই রায়হানের প্রতি আমার তেমন মনযোগ ছিল না। মনযোগ আকর্ষণ করতে সেই ব্যর্থ। কারণ ফেসবুকের মাধ্যমে তারিফ নামের একটা ছেলের সাথে আমার পরিচয় হয়। তার বাড়ি বরিশাল। 




যদিও প্রথম দিকে তার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল না। প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে একবার মেসেজ পাঠানোই যেন  তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। সেই কি জানি একটা প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দর করে দিয়েছিল। তাই বললাম আপনি তো খুব সুন্দর করে কথা বলেন। সে বলল, সুন্দর মনের মানুষের কাছে সবকিছু সুন্দর বলে মনে হয়। আমি বললাম, আমার মন তো সুন্দর নয়। সেই বলল, পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য, সুন্দরী, সুন্দর, ভালো মানুষ কখনো নিজেকে সুন্দর, ভালো মানুষ বলে দাবি করে না। বড় লোক কখনো নিজেকে বড় লোক দাবি করে না। বলতে পারেন,সে যে বড় লোক সবাই জানে দাবি করার কি আছে? আমি বললাম, ঠিক তাই। আপনার মতো জ্ঞানী মানুষের সাথে কথা বলতে পেরে নিজেকে ধন্য  মনে হচ্ছে। সেই বলল, আস্তাগফিরুল্লাহ,আস্তাগফিরুল্লাহ। সুন্দরী মেয়েরা কি এভাবেই কথা বলে? আমি বললাম, আমাকে সুন্দরী বানিয়ে দিলেন? সেই বলল, যিনি আগে থেকে সুন্দরী তাকে আর কি সুন্দরী বানাবো বলেন তো? ঠিক আছে বুঝলাম।আমাকে কেন আপনার সুন্দরী মনে হয়? সেই বলল,সুন্দর জিনিসটা আপেক্ষিক বিষয়, আমার কাছে যাকে সুন্দর বা সুন্দরী বলে মনে হয় অন্যের কাছে সেটা নাও হতে পারে। আবার যাকে আমার পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সুন্দরী বলে মনে হয়, অনেকের কাছে সেই পাত্তাও না পেতে পারে। তবে নির্দিষ্টভাবে তোমাকে নিয়ে যদি বলি,যদিও সরাসরি প্রশংসা কিংবা দুর্নাম কোনটি ভালো না তবুও বলছি তোমার সরল মন, তোমার চলন, বলন, কথার নানা ধরন, বাইরে অমায়িক ভাব, মনের ভিতরে শয়তান দেয় লাপ, জীবনে চলার পথে এগিয়ে আছেন অনেক মানুষ থেকে অনেক ধাপ। আর আল্লাহর দেওয়া সৌন্দর্যও কম না,। যেকোনো পুরুষ কে ইম্প্রেস করতে কষ্ট পেতে হবে বলে মনে হয় না। যদি না সেখানে কোনো স্বার্থ না থাকে। আমি বললাম, এটা আসলেই সত্যি সবার চোখে সবাই সুন্দর না ।আর আমার মতেও এটা ঠিক,সৌন্দর্য শুধু চেহারা দেখে হয় না। তার সাথে এভাবে কথা বলতে বলতে  দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে গেলাম। প্রতিদিন কথা বলাই  তার প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পেতেই থাকল। তাকে ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব মনে হতো । এভাবে তারিফের সাথে কথা বলতাম যে এটা আমার ছোট বোন জানত কিন্তু কাউকে বলত না। কিন্তু একদিন বড় আপু বেড়াতে এসে জেনে গেল আমি ফুফাতো ভাই রায়হান ছাড়াও আরেকজন ছেলের সাথে কথা বলি। বড়  আপু থেকে বাবা ছাড়া পরিবারের সবাই জেনে গিয়েছিল এবং কথা না বলার জন্য সবাই নিষেধ করেছিল । 


এরপরও আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তারিফের সাথে কথা বলতাম। এর কিছুদিন পর আমার বাবা হঠাৎ করে হার্ট স্টোক করেন, হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে স্বর্গের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তবুও মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তার বাবাকে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন বলে ঘোষণা করেন। পরিবারের সবাই মানসিক ভাবে  ভেঙ্গে পড়েন। এসময় আত্মীয় স্বজনদের সাথে তারিফকেও কল করে জানিয়ে দিছি বাবা পৃথিবীতে আর নেই। বাবার মৃত্যুর খবর শোনার কিছুক্ষণ পর তারিফ কল দিয়ে বলতেছে তারাও নাকি আসবে। এই কথা শুনে আমি তাকে না আসার জন্য বলে দিয়েছি।কারণ বরিশাল থেকে আমাদের কক্সবাজার আসতে আসতে বাবাকে দাফন করে দিবে। আমার কথা শুনে সেই আর আসল না। বাবার মৃত্যুর চল্লিশা দেওয়ার সময় আত্মীয়স্বজন প্রায় সবাই এসেছে। চল্লিশা শেষ হওয়ার কিছু দিন পর আপুরা জানতে পারে যে আমি এখনো তারিফের সাথে কথা বলি। পরিবারের সবাই আমাকে বুঝাতে শুরু করল। তাদের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে, সেখানে আমার ভালো মন্দ দেখার মতো কেউ থাকবে না আরো অনেক কিছু যা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু কেমন জানি এগুলো শুনতে আমার খুবই বিরক্ত লাগছিল এবং তার প্রতি আরো ভালোবাসা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। পরিবারের সদস্যদের কথা গুলো তারিফকে বললাম এবং সেই আমাকে বিয়ে করার জন্য পরিবারের কাছে আবেদন করতে চাইল। কিন্তু পরিবার তাতে রাজি হবে না। তাই আমি বলতে না করেছিলাম। সেজন্য সেই আর বলে নাই। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই এর পরের দিন চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট চলে আসে এবং আমাকে কল করলে পরিবারকে না জানিয়ে আমি চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট তার সাথে প্রথম দেখা করি। সেই আমি ভালো আছি কি'না এবং কিছু  খাব কি'না জিজ্ঞেস করলে আমি ভালো আছি এবং কিছু খাব না বললেও কিছু নাস্তা নিয়ে গাড়িতে ওঠে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। গাড়িতে, লঞ্চে সারা পথ তেমন কোনো কথা হয়নি। 



 কাজি অফিস থেকে সোজা তাদের বাড়িতে নিয়ে গেল। তাদের বাড়ি, গাড়ি, সম্পদ, আত্মীয় স্বজন সম্পর্কে আমার আগে জানা ছিল না এবং এসব সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহও ছিল না। গিয়ে দেখি ভাঙ্গা বাড়ি সম্পদ বলতে জমানো অর্থসম্পদ নাই বললেই চলে। তারা তিন ভাই পাঁচ বোন। তারিফ ছিল পরিবারের সবার বড় কিন্তু তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর বিয়ে করেছে দুই বছর হয়েছে। তাদের ঘরে একটা ছোট কন্যা সন্তান রয়েছে। তার ছোট তিন বোনের আগে বিয়ে হয়েছে। এখন পরিবারে তার বাবা মা, ভাই, ভাইয়ের বউ, চার পাঁচ বছরের ছোট বোনদের নিয়ে একসঙ্গে থাকেন। বলা যায় একটা যৌথ পরিবার।  বাড়িতে যখন ঢুকলাম তখন তারিফের বাবা ছিলেন না, মা এবং তার বোনেরা ছিলেন। আমাকে যে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবেন সেটা আমাদের বাড়ির কেউ না জানলেও তাদের বাড়ির সকল লোক জানতো। তাই আমাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে কোন সমস্যা হয়নি। বরিশাল শহরে পৌঁছার পর বিয়ে করে যখন তাদের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমার বাড়িতে কল করেছিলাম। কল আমার বড় আপু রিসিভ করেছিল। আমি কোথায় জিজ্ঞেস করতেই আমি তারিফকে বিয়ে করেছি বলেই কেটে  দিছি। বাড়িতে আম্মু ছিল,আমার একটা খালা ছিল এবং আমার ভাই বোনেরা ছিলেন। 




আমার বিয়ের কথা শুনে আম্মু অনেক কান্নাকাটি শুরু করেন। সমাজে এখন মুখ দেখাবে কি করে।  কিভাবে পারলে পালিয়ে যেতে? ফুফাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাদেরকে কি জবাব দিবে? নানা চিন্তা মাথায় ভর করে কান্নাকাটি করছিলেন আর বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন।কারণ বাবা মারা গেছে বেশিদিন হয়নি এর মধ্যে আবার তার মেয়েটা পালিয়ে বিয়ে করেছে। যদিও বাবা থাকলে এই সাহস আমি কখনো করতাম না। পরে কল করে আমাকে বাড়িতে চলে যেতে বলল কারণ এলাকার মানুষ জানে না যে আমি পালিয়ে আসছি। তাই বাড়ির লোক বলছিল বিয়ে তো হয়ে গেছে কেউ তো জানে না। তাই বাড়ি থেকে মানুষকে জানিয়ে আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে সুন্দর করে বিয়ে দিবে। তারিফ বাড়িতে এটা বললে তারিফের বাড়ির কেউ রাজি হয় না। তাকে একেকজন একেক পরামর্শ দিতে থাকেন। তাকে অনেক লোক বলতে লাগলো যে তোকে এরকম বলে নিয়ে যাবে এবং তোকে বেঁধে রেখে পিটিয়ে তোর বউকে বাড়িতে রেখে তোকে কোথাও ফেলে দিবে।  এরকম নানা কথা শুনে কি করবে সে কিছু বুঝে ওঠতে  পারছিল না। তবুও নানা মানুষের নানা কথা শুনে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিল আমাদের বাড়ির কথা অনুযায়ী কাজ করবে। তাই সে আমাকে আগে বাড়িতে পাঠিয়ে দিল এবং দুইদিন পর আমাকে একটা মাইক্রো বাস নিয়ে নিতে আসলো। যদিও ইতিমধ্যে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে অনেকেই সত্যি ঘটনা গোপনে জেনে গেছে। 



তবুও কিছু করার নাই। কেউ জিজ্ঞেস করলে সম্মান বাঁচানোর জন্য মিথ্যে বলতে হয়। অনেকে আবার জিজ্ঞেস করে প্রেমের বিয়ে নাকি? তখন আমার খালাতো বোনের স্বামীর বন্ধু বলে পরিচয় দেন। যারা জানেনা তারা বুঝ পেয়ে যেত আর যারা সত্যি ঘটনা জানতো তারা মজা নিতেন। তারপর আত্মীয়-স্বজন এবং এলাকার কিছু মানুষকে দাওয়াত দিয়ে আমাকে নামিয়ে দিল শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসলো এবং সবকিছু সুন্দরভাবে চলতে থাকল। শ্বশুর বাড়ির সকলেই আমাকে আদর করে। তার বিশেষ কারণ হচ্ছে আমি নামাজ দোয়া পড়ি। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির মানুষজন নামাজ দোয়া কম পড়ত। অভাবের সংসার তবুও দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল। এই অভাবের সংসারেও আমার স্বামী তারিফ আমাদের বাড়িতে প্রতি মাসে ২-৩ হাজার টাকা করে পাঠাতো এবং আমার ছোট ভাইবোনদের ঈদের সময় কাপড়-চোপড় কিনে দিত। তারিফ ইলেকট্রিসিটির কাজ ভালোই পারত। কিন্তু দেশের মধ্যে তার এই কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই সেই বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছে। তার আত্মীয়-স্বজন যারা বিদেশ থাকেন তাদেরকে অনেক আগে থেকে  একটা ভিসার ব্যবস্থা করে দিতে বলছিলেন কিন্তু তারা কেউ নানা অযুহাতে ভিসার ব্যবস্থা করে দেননি। আমার বিয়ের পর আমার বড় আপুর স্বামী রফিকের মাধ্যমে একটা ভিসা নিয়ে সৌদি আরব চলে যান এবং অল্প দিনেই অনেক টাকার মালিক হয়ে যান। কারণ সেখানে ইলেকট্রনিক্সের কাজে প্রচুর চাহিদা থাকাই টাকা ইনকামের পথ সহজ হয়ে গিয়েছিল। 


আমার বিয়ের একবছর পূর্ণ হয়েছে কিন্তু এখনও কোন বেবি হয়নি। কারণ একটা বেবি এক মাস হওয়ার পর নষ্ট হয়ে যায় এরপর আর বেবি আসেনি। তারিফ যত বেশি টাকা আয় করতে থাকে তত বেশি আমার সাথে আচরণ খারাপ হতে থাকে এবং তারিফ বিভিন্ন মেয়েদের সাথে কথা বলতে থাকে এবং যেকোনো কিছুতে আমাকে গালি দিতে থাকে । আমিও মুখ বুঝে সহ্য করতাম। কারণ পরিবার তো আর আমাকে বিয়ে দেয়নি। আমি নিজের পছন্দ মতোই বিয়ে করেছি। এমন অবস্থায় আছি, না পারছি ছেড়ে আসতে, না পারছি তার কাছে নিজের ইচ্ছায় থাকতে।  তারিফ থেকে টাকা খাওয়ার জন্য পরবর্তীতে তার মা এবং তার একটা বোনও তার সাথে তাল মিলিয়ে আমাকে নানা অপবাদ দিতে থাকে এবং আমাকে নির্যাতন করতে থাকেন। তারিফই এখন পরিবারের সব। সে অন্যায় কথা বললেও সেটা ন্যায়। ভুল কথা বললেও সেটা সঠিক। বুঝেছি যার আছে টাকা, সেই সোজা পথকে বাঁকা বললেও বাঁকা। আর যার টাকার পকেট ফাঁকা সেই সোজা পথকে সোজা বললেও বাঁকা। কথায় আছে না, যে গরু দুধ দেয়,সেই গরু লাতি দিলেও ভালো। 

পরিবারের সকলই তাকে নানাভাবে প্ররোচিত করতে থাকে এবং টাকা হাতানোর চেষ্টা  করতে থাকে। এই কাজে পরিবারের বাবা মায়ের পাশাপাশি তার দোলা ভাইয়েরা এবং বন্ধুরাও কোনো রকম পিছিয়ে ছিল না। অল্প সময়ে টাকার মালিক হওয়াই অহংকারে মাটিতে পা পড়ছে না। এই অহংকার শুধু তার বউয়ের জন্য এবং শ্বশুরবাড়ির মানুষের জন্য। তার পরিবার, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে সেই টাকা দিতে থাকেন। আবার অনেকজন কে মোবাইল এবং নানা ধরনের সামগ্রীও পাঠিয়েছেন। আমি মাঝে মধ্যে নিজের খরচ, কাপড় চোপড় ও চিকিৎসার জন্য টাকা চাইলে তখন সেই বিভিন্ন অসভ্য ভাষায় গালি গালাজ করত। আমি তবুও তার সাথে ভালো আচরণের চেষ্টা করতাম। কিন্তু তাতে কোনো পরিবর্তন হতো না, আরো বাজে ভাবে গালি গালাজ করত। মানুষ যখন কষ্টে থাকে তখন সে সেটা কাউকে না কাউকে বলে নিজেকে শান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু আমি সেটাও পারছি না। অন্য  কাউকে তো আর দোষ দিতে পারছি না। নিজের পায়ে যে কুড়াল মারে সেই কি আর নিজের বোকামি মানুষ কে প্রকাশ করে? শুকনো জায়গাই যে স্লিপ খেয়ে পড়ে যায়, সে ব্যথা কি আর মানুষকে দেখানো যায়? এমন সময় মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। দিনে একবেলা খেলে খাই অন্যতায় না খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছি কত দিন। এই অবস্থায় আমার শরীর দূর্বল ও রুগ্ন হয়ে পড়ে নানা রকম অসুখ দেখা দিতে শুরু করে। তারিফ আগে দিনে সাত আট বার কল করে কি করছি কেমন আছি জিজ্ঞেস করত। সেই মানুষটাও কল করে খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মাঝে মধ্যে বাড়ির নাম্বারে কল না ধরলে আমার নাম্বারে কল দিয়ে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে কল কেটে দেয়। আমার সাথে কথা বললেও আগের মতো সুন্দর করে কথা বলে না। বাড়িতে বাবা মায়ের কিংবা বোনের কি হয়েছে জিজ্ঞেস করে অথবা নিজে নিজে একটা বানিয়ে কথা বলে গালি গালাজ করে কল কেটে দেয় । আমাকে সেই এখন সহ্য করতে পারে না। আমার কথা তার কাছে তীরের মতো আঘাত করে । 


এই অবস্থায় দুই বছর পর দেশে আসল এবং সেই আগের মতো নতুন করে সবকিছু সুন্দর ভাবে চলছিল। তবে সেই বিভিন্ন মেয়েদের সাথে মোবাইলে কথা বলত এবং বন্ধুদের নিয়ে সারাদিন এইদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে রাত করে বাড়ি ফিরত। মেয়েদের পিছনে টাকা খরচ করতে থাকে। রাতের খাবার শেষ করে সেই আর আমি গল্প করছিলাম কথার মাঝখানে সে বলল তার বেবি লাগবে। আমি বললাম হ্যাঁ অবশ্যই খুব তাড়াতাড়ি আমাদের একটা ছোট্ট বাবু হবে। সেই বলল, আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না। আমি আরেকটা বিয়ে করব। আমি চুপ হয়ে থাকছি দেখে হেসে হেসে বলে আরে পাগলি রাগ করলে নাকি? তুমি কি চাও না আমাদের বেবি হোক? আর ইসলামে তো চার টা বিয়ে করার অনুমতি আছে। আর আমি তো চারটা করতে চাচ্ছি না। তাই না? আমি মনে মনে বললাম, আরে বেডা ইসলাম চারটা বিয়ের অনুমতি দিছে ঠিক আছে কিন্তু চারটা বউয়ের মধ্যে তো সমান বন্টন করতে হবে। সুখে রাখতে হবে। তোর একটা বউকে সুখে রাখার ক্ষমতা নাই। তুই করবি চারটা বিয়ে? হাসি যেন ভিতরে থামতেই চাইল না। সামান্য হাসি বেরিয়ে আসল হা হা হা । আমাকে হঠাৎ হাসতে দেখে সেই আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে চোখ বড় করে দেখে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে আমি হাসি থামিয়ে নিচু স্বরে বললাম কিছু না। ঐ একটু পুরানো কথা মনে পড়ছে। এভাবে কেটে গেল সাড়ে তিনটি বছর তবুও আমাদের কোনো বেবি আসল না। দেশে তিন মাস থাকার পর সেই আবার সৌদি আরব চলে গেছে। আবার বিভিন্ন মেয়েদের সাথে কথা বলা শুরু করে দেয় এবং  আমার সাথে খারাপ আচরণ করা শুরু করে। 


আমি এইসব আচরণ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করার চিন্তা মাথায় আসত কিন্তু আমার ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান থাকাই আত্মহত্যা করার সাহস পাই নি। কারণ আখিরাতের সেই জাহান্নামের যন্ত্রণা থেকে পৃথিবীর যন্ত্রণা যেন একটা পিপীলিকার কামড়ের মতো তাই আর আত্মহত্যা করা হয়ে ওঠে নি । একবার রাগের মাথায় দশটা ঘুমের ওষুধ হাতে নিয়ে চার টা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আল্লাহ্ সেই বার বাঁচাইছে, না হয় দশটা ওষুধ একসাথে খেয়ে নিজের অবচেতন মনে পরকালে জাহান্নামের আগুনে জ্বলে জ্বলে মরে আবার জীবিত হতে হতো। মানসিক যন্ত্রণায় অনেকবার এরকম একটা দুইটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে থাকতাম। পারিবারিক কাজকর্ম, মানসিক চাপ, স্বামীর ভালোবাসা না পেলেও মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু দিনের পর দিন তারিফের অসভ্য ভাষার গালি গালাজ, বিয়ের সময় আমাদের পরিবার থেকে তেমন কিছু দেয়নি সেটার জন্য তার মা বোনের অত্যাচার যেন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে কথায় কথায় কোটা দিতে শুরু করেন। 





তারিফ দেশে যখন ছিল তখন টাকা না থাকলেও আমাদের পরিবারে মা এবং ভাই বোনের লেখা পড়ার জন্য টাকা দিত। কিন্তু সৌদি আরব যাওয়ার পর সেই আগের মতো আর ভালোবাসাও নেই এবং টাকাও পাঠাই না। দেশে যখন টাকা ছিল না তখন যতটুকু পারে আমাদের পরিবারে টাকা দিত। এখন তার টাকার অভাব নেই কিন্তু দেয় না। তবুও যখন ভাই বোনদের পড়ালেখা ও আম্মুর  ওষুধের জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন হয় তখন আমি তার কাছে টাকার কথা বললে ফকিন্নির মেয়ে সহ বিভিন্ন ধরনের গালি গালাজ করে টাকা দিত। কিন্তু গালি গালাজ শুনে টাকা নেওয়ার চেয়ে না নেওয়াই সম্মানের। কেউ না খেয়ে মারা গেলেও এমন টাকা নিতে চাইবে না। দ্বিতীয় বার বিদেশ যাওয়ার এক বছর পর দেশে ফিরে আসেন। দেশে আসলে ভালোই আচরণ করে আবার বিভিন্ন মেয়েদের সাথে কথাও বলে। বিভিন্ন মেয়েদের সাথে কথা বললেও মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিয় যে, দিন শেষে আমার কাছেই তো আসতেছে। তাই বিদেশ থেকে গালি গালাজ করলে যে কষ্ট পাই দেশে গালি গালাজ করলে সে রকম কষ্ট পাই না। এই গালিকেই জেমসের কোনো বিখ্যাত গান শুনছি মনে করে শুনতে থাকি।  ভালোও লাগে না, খারাপও লাগে না এই গানের স্বাদ অনেক দিন না খেয়ে, হঠাৎ করে খেতে পাওয়ার মতো। আগে খেয়ে নি, কেমন স্বাদ হয়েছে পরে বলব। তার এই মার ধর গালি গালাজ খাওয়ার আগেই বাড়িতে চলে যেতাম যদি না আমি নিজে তার সাথে বের হয়ে না আসতাম। এরপরেও চলে যেতাম যদি সংসারের মধ্যে অভাব জিনিসটা না থাকত। বাড়ির চলে যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ছোড়ে ফেলে নিজের পছন্দের স্বামীর সাথে সংসার চলছে। ছেড়ে যাওয়া আর হচ্ছে না। বাবু না থাকাই বাবুর কথা বলে আরেকটা বিয়ের কথা বলে। কিন্তু বিয়ে করে না। না জানিয়ে বিয়ে করে আনলেও এতটা কষ্ট পেতাম না যতটা সেই বিয়ে করবে করবে বলে দিচ্ছে। সেই এটা চিন্তা করে না যে, বাচ্চাটা মেয়েরা একা একা জন্ম দেন না। স্বামী স্ত্রীর চেষ্টা আর আল্লাহর রহমত হলেই কেবল এটা সম্ভব। 


আমি তার কথায় সব সময় চুপ চাপ থাকার চেষ্টা করি। কারণ কোনো কিছু বললেই গালি দেয়। ভালোবাসা পাওয়ার আশায় কিছু বলে গালি শুনার চাইতে চুপ চাপ থাকাই শ্রেয়। চিন্তা করি জীবনে কি হওয়ার কথা ছিল আর কি হলো এবং হচ্ছে। কাকে নিয়ে কি কল্পনা করেছিলাম। আহ জীবন আহ। বাড়িতে প্রথম দিকে এই কথাগুলো বলতাম কিন্তু তারা আমার চাইতেও বেশি কষ্ট পাই। এখন কষ্ট পেলে আমি একা পাই। কিন্তু বাড়িতে বললে পরিবারের সবাই কষ্ট পাই। তাই এখন আর বলি না। বৃহত্তর স্বার্থেই যেন নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন। দ্বিতীয় বার দেশে আশার পর আমাদের পেঠে বাচ্চা আসে। এর মধ্যে সেই আবার বিদেশ চলে গেছে। অশান্তি লাগলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা চাইলে দেয় না। এতদিন বাচ্চার জন্য পাগল ছিল আর এখন বাচ্চা সুস্থ ভাবে হওয়ার জন্য ডাক্তার দেখানোর জন্য টাকা দেয় না। টাকা খোঁজে বিরক্ত হয়ে পরে আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ডাক্তার দেখাই। বাবু হওয়ার আগে আমার যখন অশান্তি লাগছিল তখন স্থানীয় ধাত্রীর পরামর্শে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সিজারের মাধ্যমে আমাদের ছেলে সন্তানের জন্ম  হয়। আমার ছেলে আমার জীবনে রহমত নিয়ে এসেছে তাই তার নাম রাখলাম রহমত।বাচ্চা হওয়ার পর থেকেই সে অসুস্থ ছিল ।তার অনেক টাকা কিন্তু আমার জন্য না এই টাকা। তার কাছে যখন আমি টাকা চাই তখন তার প্রাণ চাই মনে করে। চিকিৎসার জন্য টাকা দিতে বললে দেয় না। গালি গালাজ করে। এখন সন্তানের প্রতি ভালোবাসা কোথায়? ভালোবাসা থাকলে অসুস্থতার কথা শুনার সাথে সাথে চিকিৎসার জন্য টাকা দিবে তো দূরের কথা উল্টো গালি গালাজ করে। 


একদিন বাবু রহমতকে বড় করে হাফেজ বানানোর ইচ্ছের কথা বলার পর সেই বলে, দেখ হাফেজ হয়, নাকি গুন্ডা হয়। একজন বাবার কাছে এমন কথা শুনে আমার প্রাণ বেরিয়ে যেতে চাইল। যদিও বাবু হওয়ার পর প্রতিদিন কল দিয়ে বাচ্চার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। আমার সাথেও আগের থেকেও একটু ভালো আচরণ করা শুরু করেছে। তার হৃদয়ের জাহান্নাম থেকে আমাকে ছেড়ে দিলে এক প্রকার মুক্তি পেতাম কিন্তু সেই ছেড়ে দিবে না। তার হৃদয় রাজ্যে আমাকে বন্ধি রেখে তার হৃদয়কে শান্ত করবে।


এখন আফসোস করে আনমনে আপনা আপনি বলি, আমার অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত ও তাড়াহুড়োর ফল ভোগ করে যেতে হচ্ছে সারাজীবন।

 যে জীবন মৃত্যু যন্ত্রণার সমান।

সেই আমাকে ফেলবে না মেরে,

 যাবে না ছেড়ে,

শুধু সুখগুলোই নিবে কেড়ে।



                           সমাপ্ত



শিক্ষার্থী,
ইয়াছিন আরাফাত 
কবি ও গল্পকার। 
অর্থনীতি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
উপ-দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। 
ইমেইল :- eashina404@gmail.com



বুধবার, জানুয়ারী ২৪, ২০২৪

জানা অজানা কারণ

জানা অজানা কারণ

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক... 



পালিয়ে যাচ্ছো

ইয়াছিন আরাফাত
এই তো তুমি সেই দিনের ছোট্ট একটা মেয়ে,
যখন মাটিতে হাঁটতে, গড়াগড়ি দিতে,
কুটিয়ে কুটিয়ে কথা বলতে তখন তোমার মা-বাবা মুগ্ধতা নিয়ে থাকতো চেয়ে।
জানা অজানা কারণে, তুমি এক প্রান্ত থেকে অন‍্য প্রান্তে চলতে ধেয়ে ।
আজ সেই তুমি,আজ সেই তুমি, পালিয়ে যাচ্ছো দুই দিনের পরিচয়ের কাউকে পেয়ে।
এই ই কী শিখলে? বাবা মায়ের বুকে আদর যত্নে বড় হয়ে, খেয়ে দেয়ে।
পথের কুকুরও ভালো ছিল তোমার চেয়ে।
সেইও মনিবকে ছেড়ে যায় না কখনো অন‍্য কাউকে পেয়ে।
আজ সেই তুমি,আজ সেই তুমি, পালিয়ে যাচ্ছো দুই দিনের পরিচয়ের কাউকে পেয়ে?
ইয়াছিন আরাফাত
কবি,গল্পকার ও প্রাবন্ধিক
উপ-দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
মোবাইল :- 01876729147
ইমেইল :- eashina404@gmail.com

দৈনিক অনুসন্ধান
দৈনিক অনুসন্ধান

 নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন-

➤ editorial.tdse@gmail.com

 লেখার সাথে আপনার নাম ঠিকানা, যোগাযোগ নাম্বার যুক্ত করে দিয়েন - সম্ভব হলে নিজের ছবি + লেখার সাথে মানানসই ছবি। ইংরেজি লেখা পাঠাতে ও এই ই-মেইল টি ব্যাবহার করতে পারেন। 
The Daily Search
The Daily Search

✉️ই-মেইল: editorial.tdse@gmail.com 

- ধন্যবাদ

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক... দৈনিক অনুসন্ধান দৈনিক অনুসন্ধান নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন- ➤ editorial.tdse@gmail.com লেখার সাথে আপনার নাম ঠিকানা, যোগাযোগ নাম্বার যুক্ত করে দিয়েন - সম্ভব হলে নিজের ছবি + লেখার সাথে মানানসই ছবি। ইংরেজি লেখা পাঠাতে ও এই ই-মেইল টি ব্যাবহার করতে পারেন। The Daily Search The Daily Search ✉️ই-মেইল: editorial.tdse@gmail.com - ধন্যবাদ দৈনিক অনুসন্ধান
ডিভোর্স

ডিভোর্স

                         ডিভোর্স 

                   

 

ইয়াছিন আরাফাত 

আমার নাম লিলি। আমাদের বাড়ি ছোট্ট রূপালি গ্রামে।  এখানেই আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। আমার কাছে আমাদের গ্রামের চেয়ে পৃথিবীতে আর কোন সুন্দর গ্রাম নেই। এখানেই রয়েছে বড় খাল এবং খালের দুপাশে চাষাবাদ করার ফসলি জমি একটু পরেই পাহাড়। এখানে সহজে মাছ, মাংস, শাকসবজি নানা ধরনের ফলমূল সহজেই পাওয়া যায়। এইখানে রয়েছে নান্দনিক শৈলীতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী মনরূপা মসজিদ। মসজিদের সামনে বড় পুকুর যেখানে গ্রামের সহজ সরল মানুষ ওযু করে, গোসল করে। পুকুরের চারপাশে রয়েছে নারকেল ও সুপারি গাছ। এখানে আরও রয়েছে রূপালি প্রাথমিক বিদ‍্যালয় ও রূপালি উচ্চ বিদ‍্যালয় এবং বিদ‍্যালয়ের সামনে বড় খেলার মাঠ। এ যেন স্বপ্নের মতো একটা গ্রাম। এখানেই আমার পড়ালেখা স্বাভাবিক ভাবে চলছিল কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই বিয়ে দিয়ে দিল। আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী তেমন কাউকে ই দাওয়াত দেওয়া হয়নি। বিয়ের রাতে শুধু নানার বাড়ি থেকে নানা ভাই আসছিল। বিয়ের দিন আসরের পর সাজানোর জন‍্য পার্লারে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার সাথে গিয়েছিল আমার ছোট বোন কারিমা। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির পরিবার আমাকে আর বাবার বাড়িতে আসতে দেয়নি। পার্লার থেকে সোজা শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিয়ের নেই কোনো উত্তেজনা কিংবা নেই কোনো আয়োজন।  আমাকে নিয়ে গিয়ে বসানো হলো একটা রুমে যেখানে একটা থাকার খাট ছাড়া আর কিছুই ছিল না। যাতে আমার আত্মীয়স্বজন আসলে দেখলে বলতে পারেন। বাড়ি থেকে শুধু মেয়েই দিলেন। মেয়ের সাথে কিছু দিলেন না?  শ্বশুরবাড়িতেও তেমন কোনো মেহমান ছিল না। যারা ছিল তারা হলেন আমার স্বামী শফিউলের তিন বোন সুমি,রুমি, সানজিদা,তাদের বাচ্চারা এবং শফিউলের আম্মু। 


মেহমানদের উত্তেজনা না থাকলে কি হবে। শফিউলের মায়ের উত্তেজনা ঠিকই ছিল। কিন্তু তা মেহমানদের খুশি করতে নয়। আমাকে কথা শুনানোর জন‍্য, উত্তেজিত হয়ে বলতেছে চায়ের দোকানদারের মেয়ে আমার বাড়িতে বউ হয়ে আসে কেমনে? 

শফিউলের বোনেরা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল তোমার শাশুড়ি অসুস্থ মানুষ ওনার কথায় কান দিও না। এশার পর আমার বড় ভাই, আমার জেঠাতো ভাইয়েরা আমাকে দেখতে আসেন। শফিউলের বোনেরা ওদের কে রুম দেখাই দেখাই বলতেছে এইরুমে এটা লাগবে ঐ রুমে ঐটা লাগবে একেকজন একেকটা বলতে লাগল । কিন্তু ওনারা শুনতেই আছেন, কিছু বললেন না। 

আমার ভাইয়েরা রাতে চলে যাওয়ার পরে আশে পাশের বাড়ি ঘর থেকে অনেকে দেখতে আসল এবং কয়েকটা  ভাবি কিছু  সস্তা উপদেশও দিয়ে গেল। আমি চুপ করে বসে রইলাম ।  রাত দশটার পর মানুষের আসা বন্ধ হয়ে গেলে স্বামী রুমে এসে আমার কিছু লাগবে কি'না অসুবিধা হচ্ছে কি'না তা জিজ্ঞেস করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল এবং পাঁচ মিনিট পর ওযু করে ফিরে আসল বলল নামাজ পড়বে। নফল নামাজ। জায়নামাজ বিছিয়ে আমাকে বলল আমার শাড়ির আঁচল যেন জায়নামাজের ওপর দিয়। স্বামীর কথা মতো জায়নামাজের পাশে বসে শাড়ির আঁচলটাকে জায়নামাজের ওপরে বিছিয়ে দিলাম। স্বামী শফিউল নামাজ শেষ করে ওঠলে আমিও নামাজ আদায় করে নিলাম। তারপর অনেকক্ষণ গল্প করে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে গোসল করে আসলে শফিউলের মেজ বোন শাড়ি পড়িয়ে দিল। সকাল নয়টার দিকে শফিউল রেডি হয়ে কোথায় যেন গেল কিছু বলে যায়নি। আমিও আঁক বাড়িয়ে  কিছু জিজ্ঞেস করি নাই। দুপুরের পরে আমার ছোট বোনের জন‍্য জামা নিয়ে হাজির হলেন। বললেন ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিল । ছোট বোনের স্কুল খোলা তাই আসরের পরে তাকে জামা এবং পাঁচশত টাকা দিয়ে গাড়িতে তুলে দিল। আমার সামনে সব ঠিকঠাক ভাবে চলছিল। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমার নামে তাদের মা ও ভাই বোনদের মধ্যে আলোচনা সমালোচনা চলতেছিল। (2)


কিন্তু আমার স্বামী আমাকে কিছু বলত না। আমাকে নিয়ে যে তাদের অনেক সমস্যা তা আমাকে বুঝতে দিত না। কিন্তু আমি একটু একটু বুঝতে পারছিলাম। আমাদের গ্রামের বিয়ের রীতি অনুযায়ী চার দিন পর আমি আমাদের বাড়িতে চলে আসি এবং আব্বু-আম্মু, ভাই-বোনদের জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করি। ভাইদের  সাথে তাদের বাড়িতে কৌশলে যৌতুকের যে দাবী করেছে তাতে তারা খুবই অসন্তোষ এবং হতাশা গ্রস্থ। তারা এইসব আচরণ বাড়িতে এসে আমার মা-বাবাকে বলেছে এবং আমি যে চারদিন শ্বশুরবাড়িতে ছিলাম ঐচারদিন তারা ভালো করে কেউ খেতে পারে নি। যখন আমি বাড়িতে আসলাম এবং তাদের সাথে করা আচরণ এবং আমার সাথে এই চারদিনে যে আচরণ করেছে এইসব শুনে তারা আমাকে আর শ্বশুরবাড়িতে না পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু আমি তারপরও শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার জন‍্য রাজি ছিলাম। কারণ স্বামী শফিউলের মা এবং তার বোনেরা খারাপ আচরণ করলেও তিনি একটুর জন‍্য হলেও খারাপ আচরণ করে নি। কিন্তু তিনি মা এবং বোনদের প্রচন্ড ভালোবাসতেন এবং তাদের কথা অনুসারে সবকিছু করতেন এবং চলতেন। 


কয়েকদিন পর স্বামী এবং তাদের বাড়ির আত্মীয়স্বজন আমাকে নিতে আসেন। তাদের বাড়ি থেকে আমাকে নিতে আসবে শুনে তাদের জন‍্য বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করেন এবং আমার ফুফি ও খালাম্মাদের দাওয়াত করেন। শ্বশুরবাড়ির লোকদের আগে আমার  আত্মীয় আগে চলে আসে এবং আমাদের পরিবার থেকে আমাকে আর শ্বশুর বাড়িতে না পাঠানোর পরিকল্পনা শুনে বিরোধীতা করে এবং নিতে আসলে তাদের সাথে দিয়ে দেওয়ার জন‍্য পরামর্শ দেন। কিন্তু আমার পরিবার আত্মীয়স্বজনের কথা না শুনে আমাকে লুকিয়ে রাখে এবং শ্বশুরবাড়ির লোকদের সামনে না যেতে নিষেধ করে। পরিবারের কথা মত আমাকে চাচার বাড়িতে লুকিয়ে রাখে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন আসলে তাদের ভালো ভাবে আপ‍্যায়ন করেন এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশন করেন। খাবার-দাবার শেষ করে আমি রেডি হয়েছি কি'না জিজ্ঞেস করলে আমার পরিবার আমাকে আর তাদের কাছে মেয়ে পাঠাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এই কথা শুনে শ্বশুরবাড়ির লোকজন কিছুক্ষণের জন‍্য স্তব্ধ হয়ে যান। পরে আবার সাড়া বাড়ি হৈচৈ শুরু করে দেন। আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য এইদিক সেদিক আমাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেন। কোথাও না পেয়ে আমার আম্মু এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে জগড়া শুরু করে দেন। আম্মু বলতেছে যারা কথা দিয়ে কথা রাখে না, যারা কিছু চাইবে না বলে আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে যৌতুকের জন‍্য অত‍্যাচার করে, যারা আমার বাড়ির মানুষকে অপমানিত করে, তাদের বাড়িতে আমি আমার মেয়ে দিতে পারি না। যেখানে বিয়ের চারদিনের ভিতরে আমার মেয়ে অস্বস্তি অনুভব করে, যেখানে আমার মেয়ের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে সেখানে আমার মেয়ে দিতে পারি না। 


সত্যি বলতে বিয়ের আগে শ্বশুরবাড়ির লোকজন যখন আমাকে দেখে তখন তারা কোনো কিছু ছাড়া আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য রাজি হয়ে যায়। তারপরও আমাদের পরিবার থেকে আমাকে তাদের পরিবারে বিয়ে দিতে চাইছিল না। কারণ ইতিমধ্যে আমার জন‍্য অনেক ভালো ভালো বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল শুধু যৌতুক চাওয়ায় বিয়েগুলো ভেঙ্গে যায়। কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ির পরিবার আমার পরিবার থেকে বিয়ে দিবে না শুনে তারা অনেক জোরাজুরি করে আব্বু-আম্মুকে রাজি করাই শুধু তাদের মেয়েকে সাজিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে। আমার বিয়ে তাদের পরিবারে না দেওয়ার জন‍্য আমার চাচার পরিবার থেকে অনেক নিষেধ করেছিল। এমনকি আমার মা-বাবাকে পাগল হয়ে গেছেন নাকি বলে গালি দিয়েছিল। কিন্তু আমার মা-বাবা কারো কথা না শুনেই আমাকে শফিউলের সাথে বিয়ে দেয়ার জন‍্য রাজি হয় যায়। শফিউলের পরিবারও চালাকি করে আমাকে দেখার পরের দিন তাড়াহুড়ো করে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য জোরালোভাবে চেষ্টা করে এবং সফলও হয়। আমাকে বিয়ের পার্লার থেকেই তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এই অল্প সময়ের ভিতরে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আমার পরিবার থেকে তাদের পরিবারে তেমন কিছু দেওয়া সম্ভব হয়নি। তারা চাইনিও। তারা না চাইলেও আমাদের পরিবার থেকে ফার্ণিচার, সমাজের মানুষকে খাওয়ানো সব করত কিন্তু সময় সুযোগের কারণে করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে করার ইচ্ছে থাকার পরেও শ্বশুরবাড়ির অমানুষিক আত‍্যাচার, অযৌক্তিক আবদার আমার পরিবার মেনে নিতে পারে নি।  তাদের অপমান সহ‍্য করতে পারে নি। তাই তাদের পরিবারে আমাকে পাঠাতে আর রাজি হয় নি। এর কিছুদিন পর আমার পরিবার থেকে তাদের বাড়িতে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেওয়া হয় । এরপর আমার মন পুরোপুরি ভেঙ্গে যায়।


 দুঃখে, কষ্টে আগের মতো কোথাও কোন শান্তি পাচ্ছিলাম না। ইচ্ছে করত এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে কিন্তু আল্লাহ্ যে নিজেকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। দুঃখে, কষ্টে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন এবং সুসংবাদ দিয়েছেন। আত্মহত্যাকারী যদি জাহান্নামি না হতো তাহলে আমাকে পৃথিবীর কোনো মায়া ধরে রাখতে পারত না। এমন সময় আসল নিজের মতো বাইরে যেতে পারসি না, মানুষদের থেকে কিভাবে নিজেকে লুকিয়ে রাখা যায় সেই চেষ্টা ই করতাম আর নিজের মতো সময় কাটানোর জন‍্য ভালো লাগার কাজ গুলো করার চেষ্টা করতাম। ভালো লাগার কাজগুলোর ভিতরে কবিতা লিখা ছিল একটি। তাই নিজেই নিজেকে নিয়ে কবিতা লিখলাম---


এই যে লিলি,

তোমার পরিবারের জন‍্য নিজের জীবনকে করে দিলা জলাঞ্জলি।

হয়েছো তুমি ভাগ‍্যের করুণ বলি

তোমার নিজের মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীর সব কিছুকে এড়িয়ে চলি।

তোমার এমন পরিস্থিতিতে তোমাকে নিয়ে কতজন করতেছে কত দলাদলি।

তোমার নম্র, ভদ্র, অমায়িক স্বভাব দেখে তোমার এমন অবস্থার জন‍্য দুঃখ নিয়ে করতেছে বলাবলি।

অন‍্য দশজনের ন‍্যায় হাসি খুশি ছিল তোমার জীবন,

তোমার আচার-আচরণ, যাবতীয় গুণাবলি দ্বারা রাঙিয়ে ছিলে এই সুন্দর ভুবন।

যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে মুক্ত হয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছিলে যৌবন।

এই যে লিলি,

তোমার এমন পরিস্থিতির জন‍্য দায়ী কিছু ভুল,ধয‍্য না ধরা, দম্ভ, অহংকারী ভাব, মানুষকে মানুষ বলে মনে না করা,যে কোনো কিছু  বাইরের অবস্থা দেখে বিচার করা, কিছু টা টাকার প্রতি লোভ।

সবচেয়ে বড় কারণ অনেকটা নিয়তিই দায়ী খুব।

জীবনের স্বাভাবিক গতিপথকে করে ফেলেছে চুপ।

কত শত, হাজার, লক্ষ, কোটি ছেলে বিমোহিত, মুগ্ধ হয়েছে দেখে তোমার ঐ রূপ,

যেই দেখে দেখতেই থাকে, ফেরাতে চাই না চোখ।

হোক না সেই, শিশু, যৌবক, পূর্ণ বয়স্ক কিংবা বৃদ্ধ লোক।

খারাপ নজরে আরো দেখে তোমার ঐ বুক।

তোমাকে পেয়ে পেতে চাই পৃথিবীর খুবই দুর্লভ জিনিস সুখ,

চাইবে না কেউ তুমি কারো হোক।

যতদিন থাকবে তোমার ঐ সৌন্দর্য, সৌন্দর্যের মহিমায় পেতে চাইবে সকল লোক।

তোমার ই সিদ্ধান্ত,সঠিক মানুষ, সঠিক জীবন সঙ্গী বেচে নিতে হবে যতই বাধা বিপত্তি আসুক।

এই যে লিলি,

যদিওবা সেই দুর্দিন চলে গেছে, করতেছ স্বাভাবিক জীবন যাপন।

 করতেছ সঠিক মানুষের অপেক্ষা, কে হবে সেই সত্যিকারের আপন?

যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়,যার সাথে নির্দ্বিধায় হওয়া যায় দাফন।

সঠিক মানুষ পেলে বরণ করতেও ভালো লাগবে তোমার মোড়ানো সেই কাফন।



~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

                                  সমাপ্ত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~



আমি ইয়াছিন আরাফাত 

কবি,গল্পকার ও প্রাবন্ধিক

উপ-দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। 

মোবাইল :- 01876729147

ইমেইল :- eashina404@gmail.com

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩

একটা সকাল ছিল

একটা সকাল ছিল

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক... 



একটা সকাল ছিলো
তীর্থঙ্কর সুমিত
একটা সকাল ছিলো ___
সবুজ কচি ঘাস হেসে উঠতো বইয়ের পাতায়
প্লাটফর্ম ছেড়ে ট্রেন ছুঁটে যেত হাওয়ার গতিবেগে
দারুন ইচ্ছের গতিপথ আমার বিন্দু পেয়ালায়
চা এর স্বাদ অনুভব করতো
আর আমি হারিয়ে যেতাম দিগন্তের বুকে
নীল, সবুজ, লাল
সাদা হতে পারিনি এখনও
তীর্থঙ্কর সুমিত মানকুণ্ডু, হুগলী


দৈনিক অনুসন্ধান
দৈনিক অনুসন্ধান

 নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন-

➤ editorial.tdse@gmail.com

 লেখার সাথে আপনার নাম ঠিকানা, যোগাযোগ নাম্বার যুক্ত করে দিয়েন - সম্ভব হলে নিজের ছবি + লেখার সাথে মানানসই ছবি। ইংরেজি লেখা পাঠাতে ও এই ই-মেইল টি ব্যাবহার করতে পারেন। 
The Daily Search
The Daily Search

✉️ই-মেইল: editorial.tdse@gmail.com 

- ধন্যবাদ

সত্যের সন্ধানে বলিষ্ঠ, সত্য প্রকাশে নির্ভীক... দৈনিক অনুসন্ধান দৈনিক অনুসন্ধান নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন- ➤ editorial.tdse@gmail.com লেখার সাথে আপনার নাম ঠিকানা, যোগাযোগ নাম্বার যুক্ত করে দিয়েন - সম্ভব হলে নিজের ছবি + লেখার সাথে মানানসই ছবি। ইংরেজি লেখা পাঠাতে ও এই ই-মেইল টি ব্যাবহার করতে পারেন। The Daily Search The Daily Search ✉️ই-মেইল: editorial.tdse@gmail.com - ধন্যবাদ দৈনিক অনুসন্ধান